সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) কার্যকর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ)।
বিজিবি ও বিএসএফ এর মধ্যে মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলনে, এ বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
ঢাকার বিজিবি সদর দপ্তরে ৫ মার্চ শুরু হয় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলন। জয়েন্ট রেকর্ড অফ ডিসকাশন (জেআরডি) দলিল সইয়ের মধ্য দিয়ে শনিবার (৯ মার্চ) এই সম্মেলন শেষ হয়েছে।
পরে, এক সংবাদ সম্মেলনে যৌথ বিবৃতি পাঠ করা হয়। এতে বলা হয়, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিবেচনায় রেখে, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএসএফ মহাপরিচালক নীতিন আগরওয়ালের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
একটি মৌলিক উদ্বেগের পাশাপাশি, চোরাচালান, মানবপাচার, অসাবধানতাবশত সীমান্ত অতিক্রম ও যেকোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ এবং নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ, সীমান্ত হাট বৃদ্ধি, আটকে থাকা আইসিপি/এলসিপি সংশ্লিষ্ট প্রকল্প সমাপ্তকরণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের সময়াবদ্ধ সম্মতি প্রদানের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিজিবি মহাপরিচালক।
গত ২২ জানুয়ারি বিজিবি সদস্য সিপাহী মো. রইসউদ্দিনের মর্মান্তিক মৃত্যুতে বিএসএফ মহাপরিচালক আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন।
সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বিএসএফ ও বিজিবির সমন্বিত প্রচেষ্টায় সন্তোষ প্রকাশ করে উভয় পক্ষ। তারা সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
উভয় পক্ষ; যৌথ টহল, নজরদারি, জনসচেতনতা কার্যক্রম জোরদার, যথাযথ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ, আন্তর্জাতিক সীমান্তের (আইবি) পবিত্রতা সম্পর্কে সীমান্তের জনগণকে শিক্ষিত করার বিষয়ে এক মত হয়।
অপরাধী বা বাসিন্দাদের আইবি অতিক্রম করা এবং সঠিক সময়ে তথ্য আদান-প্রদান করে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা বা আহত হওয়ার ঘটনা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে সম্মত হয়েছেন দুই মহাপরিচালক।
এছাড়া, আন্তঃসীমান্ত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিষয়ে দুই বাহিনীর বিদ্যমান 'জিরো টলারেন্স' নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে উভয় পক্ষ। আর, তাৎক্ষণিক তথ্যের মাধ্যমে আন্তঃসীমান্ত চলাচল রোধে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণে সম্মত হন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি যশোর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বিজিবি সদস্য সিপাহী মো. রইসউদ্দিনের মৃত্যুতে বিএসএফ মহাপরিচালক গভীর শোক প্রকাশ করেন। তবে, রইসউদ্দিনের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিএসএফ ডিজি নীতিন আগরওয়াল সরাসরি কোনো উত্তর দেননি।
এ বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, “এটি মূলত পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নয়। উভয়পক্ষের অস্পষ্টতা, কুয়াশা ও বিভ্রান্তির মধ্যে এটি ঘটেছে। ভবিষ্যতে উভয় পক্ষ থেকে ইউনিফর্ম পরা বিজিবি ও বিএসএফ সদস্য বা বাংলাদেশ ও ভারতের বেসামরিক নাগরিকের ওপর যেকোনো হত্যা এড়াতে সকল প্রচেষ্টা থাকবে।”
সীমান্ত সম্মেলনে, ৯ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিএসএফ মহাপরিচালক নিতিন আগরওয়াল। আর, ১৬ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিক।