অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

এনডিআই ও আইআরআই প্রতিবেদন: বিএনপি, সুশীল সমাজ, ইসি ও আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদের প্রতিক্রিয়া


ঢাকায় বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের সময় একটি ভোট কেন্দ্রে ভোট শেষ হওয়ার পর নির্বাচন কর্মকর্তারা একটি সিল করা ব্যালট বাক্স বহন করছেন। ৭ জানুয়ারী, ২০২৪।
ঢাকায় বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের সময় একটি ভোট কেন্দ্রে ভোট শেষ হওয়ার পর নির্বাচন কর্মকর্তারা একটি সিল করা ব্যালট বাক্স বহন করছেন। ৭ জানুয়ারী, ২০২৪।

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মান ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা বাস্তবসম্মত বলে মনে করছেন নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

আর সংস্থাটির প্রতিবেদনের কিছু অংশের সঙ্গে একমত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতা ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও নির্বাচন কমিশন। তবে, প্রতিবেদনে নির্বাচনের মান ক্ষুন্ন হওয়ার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন তারা।

কার্যকর প্রতিযোগিতা ছিল না

গত ১৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের দুই নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইন্সটিটিউট (এনডিআই) ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) যৌথ কারিগরি পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়- আগের নির্বাচনী পর্বগুলোর তুলনায় এবার শারীরিক ও অনলাইন সহিংসতা কম ছিল।

তার মূল কারণ হচ্ছে, দেশজুড়ে দলীয় প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতি এবং নির্বাচনী নিরাপত্তার প্রতি রাষ্ট্রের কড়া নজর।

তা সত্ত্বেও সহিংসতাসহ কয়েকটি কারণে নির্বাচনের মান ক্ষুণ্ন হয়েছে।

এই নির্বাচনে কার্যকর প্রতিযোগিতা ছিল না।

এই প্রতিবেদনে, বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনী সহিংসতার বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে নির্বাচনে সহিংসতার ঝুঁকি প্রশমন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আইআরআই ও এনডিআই’র তুলনামূলক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, সরকারের নির্বাহী ও আইন বিভাগ, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং অন্যান্য অংশীজনদের কাছে সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এনডিআইয়ের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মনপ্রীত সিং আনন্দ বলেন, “এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের ভবিষ্যতে আরো শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য একটি মূল্যবান রোডম্যাপ হিসেবে অবদান রাখবে। অহিংস রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল, সরকার এবং নাগরিক সমাজ-সহ সামাজিক-রাজনৈতিক পরিমন্ডল জুড়ে নেতাদের নির্বাচনী রাজনীতির নিয়ম, অনুশীলন এবং নিয়মগুলোর সংস্কার করার প্রয়োজন রয়েছে।”

আইআরআই’র এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক জোহানা কাও বলেন, “নির্বাচনে সহিংসতা নাগরিকদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে একটি প্রধান প্রতিবন্ধক। বাংলাদেশের নির্বাচনকে পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক করতে হলে, সব পক্ষকে অহিংস রাজনীতিকে প্রাধান্য দিতে হবে।”

আইআরআই এবং এনডিআই হলো নির্দলীয়, বেসরকারী সংস্থা যা বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং অনুশীলনকে সমর্থন ও শক্তিশালী করে। ইনস্টিটিউটগুলো গত ৩০ বছরে ৫০ টির বেশি দেশে সম্মিলিতভাবে ২০০টির বেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে।

এনডিআই ও আইআরআই প্রতিবেদন বাস্তবভিত্তিক - মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এনডিআই ও আইআরআই প্রতিবেদন অত্যন্ত বাস্তবভিত্তিক বলে মনে করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, "এনডিআই-আইআরআই তাদের তো আরও আগে থেকে জানা উচিত ছিলো যে, বাংলাদেশে বর্তমানে নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। এটা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। বর্তমান শাসকগোষ্টী নিজেরা ক্ষমতায় থাকার জন্য এইকাজগুলো করেছে। গত তিনটি নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি) একইভাবে করা হয়েছে। সেই কারণে আমরা (বিএনপি) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলেছিলাম।"

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপি'র মহাসচিব বলেন, "কারণ এখানে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় না- এটা অতীতে প্রমাণিত হয়েছে এবং আমাদের অভিজ্ঞাতা আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৩ টি নির্বাচন খুব ভালো হয়েছে। এটা তো বাস্তবতা।"

বিএনপি ছাড়া নির্বাচন যে অংশগ্রহণমূলক হয় না সেটাই প্রমাণ হয়েছে এই রিপোর্টে - রুমিন ফারহানা

দলটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, "এনডিআই ও আইআরআই তাদের পর্যবেক্ষন রিপোর্টে বলেছে-৭ জানুয়ারি নির্বাচনের গুণমান ক্ষুন্ন হয়েছে এবং কার্যকর প্রতিযোগিতা ছিলো না। ফলে, সরকার যতই ২৫-২৭ দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে দেখাতে চায় না কেন, জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে বিএনপি ছাড়া নির্বাচন যে অংশগ্রহণমূলক হয় না সেটাই প্রমাণ হয়েছে এই রিপোর্টে।"

"৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিলো তাতে আওয়ামী লীগ জয়ী হওয়া তো দূরের কথা ১০ টি আসন যে পাবে না এটা বোঝতে পেরেছিলো"- এমন দাবি করেন রুমিন ফারহানা।

বলেন, "তারা বুঝতে পেরেছিলো, বিএনপি যে বিপুল ভোটে ও সিটে জয়লাভ করবে। তাই ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে ক্র্যাকডাউন মাধ্যমে বিএনপিকে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে যেতে বাধ্য করেছে সরকার।"

নির্বাচনের মান ক্ষুন্ন হয়েছে-এটা নির্বাচনী সংস্থার বক্তব্য নয়ঃ তথ্য প্রতিমন্ত্রী

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মান ক্ষুন্ন হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী সংস্থা যে মতামত দিয়েছে সেটি তাদের নয়, বাংলাদেশের সুশীল সমাজের বক্তব্যের প্রতিফলন বলে মনে করছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

তিনি বলেন, "কারণ তার আগেও তারা যে রিপোর্ট করেছিল, সেখানে দেখেছি এই ধরনের কথা গুলো তারা নিজেরা বলে না। সিভিল সোসাইটির সঙ্গে তাদের যে কথা হয়, তার একটা পরিভাষা ব্যবহার করে। তাদের বক্তব্যের প্রতিফলন হিসেবে এটা নিয়ে আসে। নিজেদের ফাইন্ডিং হিসেবে তারা এই ধরনের বক্তব্য আনে না।"

তিনি আরও বলেন, "এর আগে প্রি ইলেকশন এসেসমেন্ট রিপোর্টে তারা বলেছে, সিভিল সোসাইটি এবং অপজিশনের অনেক লোকজন বলছে, আরপিও‘র সংশোধনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। ফলে ইসি পুরো নির্বাচন বন্ধ করতে পারবে না। তখন এই টিমের সঙ্গে জুম মিটিংয়ে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম এটা তোমাদের বক্তব্য কিনা, তারা বলেছে এটা আপনাদের অপজিশন এবং সিভিল সোসাইটি বলেছে। এজন্য আমরা এটা নিয়ে এসেছি। তখন আমি তাদেরকে বলেছি এই বিষয় গুলো নিয়ে আপনাদের আরও কিছু তদন্ত করা উচিত, কারণ এই বক্তব্য সঠিক নয়।"

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত

সরকারের অতিরিক্ত নজরদারির কারণে নির্বাচন পুরোপুরি অংশগ্রহণমুলক হয়নি-প্রতিবেদনের এই অংশ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ আরাফাত বলেন, "প্রতিযোগিতা কম হওয়ার বিষয়ে বলতে পারি, যেহেতু আমাদের প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে আসে নাই। একইসঙ্গে তারা জনগনকে নির্বাচনে আসার জন্য নিরুৎসাহিত করেছে। নির্বাচনের দিন হরতাল-অগ্নি সন্ত্রাস করেছে এবং জনগনকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। এজন্য প্রতিযোগীতায় যেটা আদর্শ মানদণ্ড হতে পারতো, সেই তুলনায় কম হয়েছে। এটা নিয়ে আমি (প্রতিবেদনের) দ্বিমত পোষণ করি না।"

যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থাগুলোর যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- বিএনপি নির্বাচন শুধু বয়কটই করেনি, প্রতিরোধ করার অপচেষ্টা করেছে বলে দাবি করেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী।

বলেন, "এতে সম্পুর্ণভাবে স্বীকারোক্তি রয়েছে যে, বিএনপির আসল চরিত্রটা কি রকম। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের সবচেয়ে বেশি টার্গেট ছিলো শেখ হাসিনা। বিএনপি এগুলো করেছে। এখানে বেশ কিছু ভালো পর্যবেক্ষণ বের হয়ে এসেছে, যেগুলো আমরা বলছি।

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যে সহিংসতা হয়েছে এটা অন্য সময়ের তুলনায় অনেক কম হয়েছে বলে প্রতিবেদেন উল্লেখ আছে তুলে মোহাম্মদ আরাফাত বলেন, "তারা আরেকটা সহিংসতার কথা বলছে, সেটা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন বয়কট করার কারণ থেকে উদ্ভুত। খেয়াল করবেন, অনেকেই এটাকে এড়িয়ে গেছে। তারপর বলছে, কেন বিরোধীরা সহিংসতার ডাক দিয়েছে। তারা ক্রমাগত সহিংসতার কথা উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ সত্য কথা গুলো এখানে তুলে ধরা হয়েছে।"

তিনি আরও বলেন, "বিএনপি নির্বাচনকে আটকে দিতে চেয়েছিল। অথচ নির্বাচন ছিল একটা সাংবিধানিক প্রক্রিয়া, এটা অনুষ্ঠিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিলো। বিএনপি নির্বাচনে আসার পরে যদি কোনও ধরণের বাধা থাকলে সেটা নিয়ে অভিযোগ করতে পারতো। কিন্তু সেই কাজ বিএনপি করে নাই।"

মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, "সাধারণভাবে পৃথিবীর যে কোন দেশে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুযায়ী বিরোধী দল যখন নির্বাচন প্রতিহত করবে এবং সহিংসতা করবে, তখন অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। জেল পর্যন্ত হতে পারে। তাদের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে অন্যান্যদের আইনের আওতায় আনা হয়। এটাই আমার অভিমত।"

নির্বাচনের মান ক্ষুন্ন হয়নি, ভোটারা ভোট দিতে পেরেছেঃ ইসি বেগম রাশেদা সুলতানা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মান ক্ষুন্ন হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের দুই নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থা যে মত দিয়েছে, তার সঙ্গে দ্বিমত পোষন করেছে নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা।

তার মতে, নির্বাচনের মান 'কখনোই' ক্ষুন্ন হয়নি।

তিনি বলেন, "আমরা চেষ্টা করেছি শতভাগ ভোটারের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে নির্বাচনটা করতে। সেই জায়গায় গুরুত্ব দিয়েছি। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিকভাবে যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিলো সেখানে ইসির সাংবিধানিক কিংবা আইনগতভাবে কিছু করনীয় ছিলো না।"

ইসি নির্বাচনের আয়োজন করেছে সাধারণ ভোটারের জন্য বলে উল্লেখ করে এই কমিশনার বলেন, "ভোটারা নির্বাচনে ভোট দিতে পেরেছে। এটা সব পত্র পত্রিকায় দেখেছি। কোথাও দেখি নাই, কোনও ভোটার ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেনি। ইসি সহ যারা নির্বাচনের আয়োজনের সঙ্গে জড়িত ছিলো সবাই খুবই আন্তরিকভাবে এবং সততার নিয়ে কাজ করেছে। ফলে, নির্বাচনের মান ক্ষুন্ন হয়েছে বলে আমরা মনে করছি না।"

অতীতের তুলনায় এবারের নির্বাচনে সহিংসতা কম হয়েছে বলে পর্যবেক্ষক সংস্থা যে মত দিয়েছে তার কৃতিত্ব ইসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়েছেন বেগম রাশেদা।

৫ জানুয়ারী, ২০২৪-এ ঢাকায় আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের আগে শুক্রবারের নামাজের সময় একটি মসজিদের বাইরে পুলিশ পাহারা দিচ্ছে।
৫ জানুয়ারী, ২০২৪-এ ঢাকায় আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের আগে শুক্রবারের নামাজের সময় একটি মসজিদের বাইরে পুলিশ পাহারা দিচ্ছে।

তিনি বলেন, "আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই চেয়েছি একটা ভালো নির্বাচন করতে। যা জনগণের মাঝে নির্বাচন সম্পর্কে আস্থা বাড়াবে। সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেছি। পাশাপাশি বিভিন্ন এজেন্সী এবং নির্বাচনী জোনের সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে বারবার বৈঠক করে সমন্বয় করে কাজ করেছি। তাদের যে সব ঘাটতি ছিলো সেগুলো পুরণ করেছি। একটা অসম্ভব রকম টিম স্পিরিট নিয়ে কাজ করেছি। আর এই টিম স্পিরিটের কারণেই নির্বাচন সহিংসতা মুক্ত হয়েছে।"

"আইন মোতাবেক নির্বাচনী পোলিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যারা জড়িত সবাইকে মোটিভেট করেছি যে একটা অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। আমরা দায়িত্ব নিয়ে সেটা করেছি বলেই নির্বাচন সুশৃঙ্খল এবং সহিংসতামুক্ত হয়েছে," বলেও মত দিয়েছেন রাশেদা সুলতানা।

রিপোর্টের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের সুযোগ নেই - বদিউল আলম মজুমদার

বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দুই নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থার রিপোর্টের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের সুযোগ নেই বলে মনে করেন সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন- রিপোর্টে আরও অনেক কিছু উঠে আসে নাই। যেটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিবেদনে এসেছিলো।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, "তারা বলেছে যে, নির্বাচনটা প্রতিযোগিতামূলক হয় নাই। নির্বাচনের মান ক্ষুন্ন হয়েছে, এইগুলো তো অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এটাই বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থার বাস্তবতা।"

এনডিআই ও আইআরআই বাংলাদেশের ভবিষ্যত রাজনীতি যে সুপারিশগুলো দিয়েছে তা নিশ্চিত করতে হলে আগে ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে বলেও মনে করেন এই নির্বাচন পর্যবেক্ষক।

তার মতে, "ভোটাধিকার না থাকলে সবকিছুই ব্যর্থ। সুতরাং আগে ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ভোটাদের কাছে যদি প্রার্থীদের ভোট চাইতে না আসতে হয়, তাহলে তো কোনও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে না।"

ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনে যে ধরণের বৈশিষ্ট্য থাকে সেগুলো রিপোর্টে ফুটে উঠেছে- নাজমুল আহসান কলিমউ ল্লাহ

এনডিআই ও আইআরআই সঙ্গে নিজের দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, "তাদের প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেছি। নির্বাচনপূর্ব তাদের ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছিলো। তাদের সঙ্গে আমার কথাও হয়েছে। তারপর ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিলো। তাদের মূল নজর ছিলো নির্বাচনী সহিংসতার দিকে।"

তিনি বলেন, "৭ জানুয়ারির নির্বাচনের যারা ক্ষমতাসীন দলের প্রতিপক্ষ, তারা তো অংশ নেয়নি এবং প্রতিহত করার চেষ্টাও করে নাই। যার ফলে সহিংসতা হওয়ার তো কোনও সুযোগ নেই। কারণ এক হাতে তো তালি বাজে না। তাই একপক্ষ (আওয়মী লীগ) প্রতিদ্বন্দ্বি খুঁজে না পেয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। পার্টির গঠনতান্ত্রিক নিয়ম পরিহার করে নিজ দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দিয়েছে। তাদেরকে বিরোধী প্রার্থী হিসিবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নেতাকর্মীদেরও বলা হয়েছে- তারা যে কোনও পক্ষ নিয়ে কাজ করতে পারবে। এইজন্য দল তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেবে না।"

ফলে নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত হওয়া ৬২ জনের মধ্যে ১-২ একজন ছাড়া বাকি সবাই শাসক দল আওয়ামী লীগের নেতা বলে উল্লেখ করে এই নির্বাচন পর্যবেক্ষক বলেন, "এতে অনেক জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে, অনেক প্রাণহানী হয়েছে। কিন্তু একটা সম্পূর্ণভাবে অংশগ্রহণ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন বলার সুযোগ নেই। কারণ বাংলাদেশের প্রধান ৪ টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২ টি দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তারমধ্যে একটি দল বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না সেটা প্রথম থেকে বলে আসছিলো। আর জামায়াতে ইসলাম নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। ফলে, ৪ টি দলের ২ টি দল যখন অংশ না নেয় তখন এই নির্বাচন অংশত ক্রটিপূর্ণ। আর এই ধরণের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনে যে ধরনের বৈশিষ্ট্য থাকে সেগুলো তাদের রিপোর্টে ফুটে উঠেছে।"

ঢাকায় নির্বাচনের প্রতিবাদে বিরোধী দল, বিএনপি'র মিছিল, ৭ জানুয়ারি ২০২৪।
ঢাকায় নির্বাচনের প্রতিবাদে বিরোধী দল, বিএনপি'র মিছিল, ৭ জানুয়ারি ২০২৪।

মিডিয়াগুলো সেলফ সেন্সর করেছিলো রিপোর্টের এ পর্যবেক্ষণ ঠিক - মাসুদ কামাল

সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, "তারা যেটা দেখেছেন এবং মনে করেছে সেটাই অবজারবেশন দিয়েছে। আমি তাদের মূল্যায়নের সঙ্গে একমত। আমাদের ভোটারদের কাছে একজনকে নির্বাচিত করার জন্য এবার পর্যাপ্ত বিকল্প ছিলো না। তারা যাদেরকে ভোট দিতে চায়, অথবা যারা সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারতো সেটা তো ছিলে না। সোজা কথা প্রধান বিকল্প হতে পারতো বিএনপি, তাদের প্রার্থী না থাকায় ভোটাদের জন্য এবার অতটা ভালো কোনও নির্বাচন ছিলো না। ফলে, তাদের যে মূল্যায়ন নির্বাচনের গুণগতমান ক্ষুন্ন হয়েছে, সেটা ঠিকই আছে।"

তিনি আরও বলেন, "তাদের আরেকটা মূল্যায়ন ছিলো এখানে বিরোধী দলের ওপর বাড়তি চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিলো। তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরণের অ্যাকশন নেওয়া হয়েছে। যে অ্যাকশনগুলো লজিক্যাল ছিলো না। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে। তাদের এই কথার সঙ্গেও আমি একমত। কারণ তখন বিরোধী দলের হাজার-হাজার লোকজন রাস্তায় বের হতে পারে নাই। আটক করে করে কারাগারে পাঠানো ছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা। অর্থাৎ সরকার যা চাইছে সেটাই হয়েছে।"

তৃতীয়ত, "তাদের পর্যবেক্ষনে আরেকটি মতামত ছিলো যে, "আমাদের মিডিয়াগুলো সেলফ সেন্সর করেছিলো। এটাও সঠিক মনে হয়েছে আমার কাছে," বলে উল্লেখ করেন মাসুদ কামাল।

বলেন, "কারণ আমাদের মিডিয়াগুলো নির্বাচনে তেমন কোনও ভূমিকা রাখে না। তারা জানে সঠিক ভূমিকা রাখতে গেলে সরকার নানা রকমের চাপ দিতে পারে।"

খুব সামন্য কথায় গাছাড়া রিপোর্ট করেছে তারা - জাহেদ উর রহমান

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এনডিআই ও আইআরআই রিপোর্টে মাঠের 'পুরো চিত্র' উঠে আসে নাই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান।

তিনি বলেন, "তাদের রিপোর্ট থেকে তুলনামূলক ভালো ছিলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের। ইউরোপীয় ইউনিয়নের রিপোর্ট ছিল বাংলাদেশের বাস্তবতার কাছাকাছি। আর এই দুই সংস্থার রিপোর্ট আমার কাছে মনে হয়েছে, নির্বাচনের দিন কি হয়েছে, বিরোধী দল না থাকার নির্বাচন যে প্রতিযোগিতামূলক হয় নাই, সহিংসতা কম হয়েছে- সেইগুলো তুলে ধরা হয়েছে।"

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে জাহেদ উর রহমান বলেন, "নির্বাচনের দীর্ঘদিন আগে থেকে অত্যন্ত কঠোরভাবে বিরোধী দলকে দমন করা হয়েছে- সেই বিষয়টি তাদের রিপোর্টে ছিলো না। বিরোধী দলের ওপর কি পরিমাণ অত্যাচার-নিপীড়ন হয়েছে, জুডিশিয়ারি ও বিচারিক নির্যাতন হয়েছে সেটা তাদের রিপোর্টে উঠে আসে নাই।"

"আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট যখন ভিসানীতি নিয়ে কথা বলে, তখন সেখানে তারা বলেছিলো- নির্বাচনের ভোটের একটা দিন থাকে। কিন্তু নির্বাচন শুরু হয়ে অনেক আগে থেকেই। তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে বেশ আগেই তো বিএনপিসহ বিরোধী দলের ওপর পচন্ড অত্যাচার-নিপীড়ন হয়েছে। সেইগুলো তাদের অবজারবেশনে নেই। না থাকার ফলে আমার মনে হয়েছে, খুব সামান্য কথায় গাছাড়া রিপোর্ট করেছে তারা," বলে মন্তব্য করেন জাহেদ।

এই রিপোর্টের কিছু অংশ ইউএনবি থেকে নেয়া হয়েছে।

XS
SM
MD
LG