বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ২০১৯ সালে জারি করা প্রজ্ঞাপন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না; তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে।
বুয়েটের হল থেকে সম্প্রতি বের করে দেয়া শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ রাহিম রাব্বির করা এক রিটের শুনানি শেষে, সোমবার (১ এপ্রিল) বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন।
রিটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বুয়েটের ভিসি ও রেজিস্ট্রারকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী শাহ মঞ্জরুল হক। আর, রাষ্ট্র পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ।
প্রেক্ষাপট
বুয়েটের ছাত্রাবাসে ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনার পর ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে অংশ না নিতে প্রজ্ঞাপন জারি করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ।
এরপর, গত বছরের ১৯ জুলাই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধের বিষয়টি আবার মনে করিয়ে দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বুয়েটের কয়েকজন শিক্ষার্থীর পদপ্রাপ্তির ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ ও সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত হওয়ার পর, এ ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো।
সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং, কোনো শিক্ষার্থী অনুমোদিত ক্লাব বা সোসাইটি ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দলের বা এর অঙ্গ সংগঠনসহ অন্য কোনো সংগঠনের সদস্য হতে বা তার কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না।
এছাড়া, বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থীকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্য কোনো মাধ্যমে তাহাদের সাংগঠনিক রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার না করার জন্য কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দেয়।
গত বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। এর প্রতিবাদে শুক্রবার (২৯ মার্চ) থেকে আন্দোলন শুরু হয়।
পরে, শুক্রবার (২৯ মার্চ) বিকালে বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন।
সেদিন রাতে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ফোরকান উদ্দিনের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে ইমতিয়াজ রাহিম রাব্বির হলের সিট বাতিল করা হয়। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করে ৮ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
ইমতিয়াজকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করাসহ ছয় দফা দাবিতে রবিবার (৩১ মার্চ) সকাল থেকে আবার বিক্ষোভের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তবে রবিবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে তাদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
ছাত্রলীগের সমাবেশ
রবিবার (৩১ মার্চ) বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ফেরানোর দাবিতে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থক সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
সমাবেশের পর, নেতা-কর্মীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান।
এক পর্যায়ে বুয়েট শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা তারা। সে সময় বুয়েটের মূল ফটক এবং বিভিন্ন হলের প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেয়া হয়।
ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রবিবার (৩১ মার্চ) বলেছিলেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্ত চলছে।
রাজধানী ঢাকায় আওয়ামী লীগের তেজগাঁও কার্যালয়ে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
ছাত্র রাজনীতি সরাসরি নিষিদ্ধ করা হলে, বুয়েট নেতিবাচক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও জঙ্গিবাদের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “সেদিন বুয়েট ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিলো না। আর আমি যদি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকি, তাহলে বুয়েট ক্যাম্পাসে থাকতে পারবো না; এটা কী ধরনের আইন।”
ছাত্র রাজনীতি ফিরে আসতে পারে
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতিতে কোনো বাধা নেই; হাইকোর্টের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেছেন, বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি ফিরে আসতে পারে।
সোমবার (১ এপ্রিল) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বুয়েট উপাচার্য এ কথা বলেন। তিনি বলেন, “হাইকোর্ট যা বলবে তা আমাদের মেনে নিতে হবে। আদালতের আদেশ অবশ্যই মানতে হবে। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।”
ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হলে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও প্রশাসনকে পারস্পরিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে এবং এজন্য আলোচনা জরুরি; উপাচার্য আরো বলেন।
“শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের আলোচনার ভিত্তিতে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো;” বলেন উপাচার্য ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার।