অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বান্দরবানের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বড় পরিসরে অভিযানের ঘোষণা দিলেন সেনাপ্রধান


বান্দরবান সেনানিবাসে সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। ৭ এপ্রিল, ২০২৪।
বান্দরবান সেনানিবাসে সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। ৭ এপ্রিল, ২০২৪।

বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতি ও অপহরণসহ একাধিক অপরাধ কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায়, বড় পরিসরে যৌথ অভিযানের ঘোষণা দিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সমন্বয়ে এই অভিযান শুরু হয়েছে। রবিবার (৭ এপ্রিল) বান্দরবান সেনানিবাসে সংবাদ সম্মেলনে জেনারেল আহমেদ এ কথা জানান।

তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা এই অপারেশনে সফল হতে প্রকাশ্য ও গোপন উভয় কৌশল প্রয়োগ করছি।”

“শান্তির সম্ভাবনা সত্ত্বেও কেএনএফ অপরাধমূলক আচরণের দিকে ফিরে গেছে;” বলেন জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, গত জুনে কোণঠাসা হওয়ার পর তারা আলোচনায় বসতে ইচ্ছুক বলে মনে হয়েছিলো।

“অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখায়, এটাই প্রতীয়মান হয় যে, শান্তির প্রতি তাদের অঙ্গীকার দৃঢ় ছিলো না; যোগ করেন জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ। এর আগে, সেনাদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা ও জনকল্যাণে এই মিশনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) রাতে বেশ কয়েকজন সশস্ত্র সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তারের পর অভিযানের অগ্রগতি হয়। জেনারেল আহমেদের মতে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে এমন দলগুলোর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর দৃঢ় সংকল্পের ইঙ্গিত হলো এই মিশন।

তিনি বিশেষভাবে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) কথা উল্লেখ করেন। জানান, এই দল আগে শান্তি আলোচনায় জড়িত ছিলো।

সন্দেহভাজন ৫ কেএনএফ সদস্য গ্রেপ্তার

এদিকে, বান্দরবানের সদর উপজেলার একটি পাহাড়ি এলাকা থেকে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্দেহভাজন ৫ সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সদস্যরা। এ সময় দুটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

তবে, জব্দ আগ্নেয়াস্ত্র গত ২ এপ্রিল রুমা উপজেলায় সোনালী ব্যাংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের কাছ থেকে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র কি না, তা এখনো জানা যায়নি।

এর আগে শনিবার (৬ এপ্রিল) থেকে বান্দরবানে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। অভিযানে শতাধিক র‌্যাব সদস্য অংশ নেয়।

কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)

বান্দরবানে নতুন সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ২০২২ সালের এপ্রিলে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে। কেএনএফের ঘোষণা ও বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্য অনুযায়ী, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলার অন্তত ছয়টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে তারা।

এ সময় তারা ফেসবুকে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম উপজেলাগুলোর সমন্বয়ে পৃথক রাজ্যের দাবি করে।

এদিকে, কেএনএফ পাহাড়ে তাদের আস্তানায় সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছিল বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতিপূর্বে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলো।

সেই আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২০২৩ সালে অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া ও কেএনএফের বেশ কয়েক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র‌্যাব

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র‍্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র‍্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র‍্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।

XS
SM
MD
LG