অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

মির্জা ফখরুল: ‘এবারের ঈদ দেশের সাধারণ মানুষের জন্য আনন্দের হয়নি’


বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সব পণ্যের চড়া দামের কারণে এবারের ঈদুল ফিতর দেশের সাধারণ মানুষের জন্য আনন্দের হয়নি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “ঈদে সাধারণত মানুষ পরিবারের সদস্যদের জন্য নতুন জামাকাপড় কেনার চেষ্টা এবং ভালো খাবারের ব্যবস্থা করে। কিন্তু এ বছর নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের (বস্ত্র ও খাবার) দাম তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় এক শ্রেণির মানুষ তাদের ঈদের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে।”

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, এবারের ঈদ বাংলাদেশের মানুষের জন্য দুঃখ বয়ে এনেছে। এ অবস্থার জন্য সরকারই দায়ী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার তাদের গভীর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস করছে।

গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।

তিনি বলেন, দেশ কঠিন সময় পার করছে। শুধু বিএনপির নেতা-কর্মীরাই নয়, অন্য রাজনৈতিক দলের সমর্থক-কর্মীরাও কারাগারে বন্দি রয়েছেন।

তিনি বলেন, “ক্ষমতাসীন মহল বিএনপির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে, গুম করেছে। এ ছাড়া, বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় লাখ মামলা দিয়ে ৫০ লাখ নেতা-কর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “অমানবিক নির্যাতনের মধ্যেও দেশের মানুষ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এই জালিম সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।”

এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের আশাবাদ ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, দেশের জনগণের সহযোগিতায় এই ভয়াবহ পরিবেশ বদলে যাবে।”

তিনি বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনবে।

হাছান মাহমুদ: ‘যাদের জন্মই অগণতান্ত্রিকভাবে, তারাই গণতন্ত্রের কথা বলে’

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যাদের জন্মই অগণতান্ত্রিকভাবে আর প্রতিনিয়ত গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য অপচেষ্টা চালায়, সেই বিএনপি এখন গণতন্ত্রের কথা বলে, এটিই হচ্ছে দুঃখজনক। এটি যেন চোরের মায়ের বড় গলা।

বুধবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানজি পুকুর লেনের ওয়াইএনটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি।

সাংবাদিকেরা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও অপর নেতা ড. আবদুল মঈন খানের সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ

হাছান মাহমুদ বলেন, ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করেছিল, ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়েছিল। ড. মঈন খান আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তাদের শীর্ষস্থানীয় নেতারা সেই ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট গ্রহণ করার জন্য সন্নিবেশিত হয়ে বিএনপি গঠন করেছিলেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, “শুধু বিএনপির জন্মই অগণতান্ত্রিক নয়, তারা দেশে সবসময় গণতন্ত্র হরণ করার জন্য অপচেষ্টা চালিয়েছে এবং এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে তাদের হাত ছিল। নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত এবং গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যেই সেটি ঘটানো হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং জঘন্য মানুষ পোড়ানোর মহোৎসব করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা তারা চালিয়েছিল।”

হাছান মাহমুদ আরও বলেন, “বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৫০০ নির্বাচনি কেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছিল এবং নির্বাচনি কর্মকর্তা ও বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়েছিল। সেটির উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনকে ভণ্ডুল করা, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও একই প্রচেষ্টা ছিল। সর্বশেষ ২০২৪ সালের বিগত নির্বাচন বর্জন করার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা চালানো হয়।”

সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছে আটক জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, জলদস্যুদের হাত থেকে নাবিক এবং জাহাজ দুটোই উদ্ধার করার ক্ষেত্রে অল্প সময়ের মধ্যে অনেক অগ্রগতি হয়েছে, আশা করছি শিগগিরই তাদের মুক্ত করতে পারব। তবে উদ্ধারের দিনক্ষণ বলাটা কঠিন।

হাছান মাহমুদ আরও বলেন, “আমরা নাবিকদের পরিবারদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, সরকার সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছে। নাবিকেরা ভালো আছে, নিয়মিতভাবে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, এমনকি ভিডিও কলেও কথা বলছে। আমরা আশা করছি তাদের শিগগির মুক্ত করতে পারব।”

চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা এবং তাদের হামলায় এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মন্ত্রিসভায় অনানুষ্ঠানিকভাবে কিশোর গ্যাং নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয় সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, “দেশে এটি নতুন সমস্যা, এটিকে দূরীভূত করতে সরকার কাজ করছে এবং কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে ও নেপথ্যে যেই থাকুক, সে যেই দলেরই হোক তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে ও হচ্ছে।”

XS
SM
MD
LG