অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশ ও কাতার দশটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। ২৩ এপ্রিল, ২০২৪।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। ২৩ এপ্রিল, ২০২৪।

বাংলাদেশ ও কাতার বহুমুখী ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদার ও সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে, মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) ১০টি সহযোগিতা দলিল স্বাক্ষরকরেছে। এর মধ্যে রয়েছে যার ৫টি চুক্তি এবং ৫টি সমঝোতা স্মারক।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন।

যে ৫ বিষয়ে চুক্তি সই হয়েছে সেগুলো হলো; আইনি ক্ষেত্রে সহযোগিতা চুক্তি; পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা সম্পর্কিত চুক্তি; দ্বৈত কর পরিহার ও কর ফাঁকি রোধে চুক্তি; সাগর পথে পরিবহন চুক্তি এবং ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) ও কাতার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (কিউসিসিআই) মধ্যে যৌথ ব্যবসা পরিষদ (জেবিসি) গঠন চুক্তি।

আর ৫টি সমঝোতা স্মারক হলো; ক্রীড়া ও যুব ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক; দুই দেশের শ্রম মন্ত্রণালয়ের মধ্যে জনশক্তি কর্মসংস্থান (শ্রম) ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক; কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণ সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক; শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য সমঝোতা স্মারক এবং কাতারের বন্দর ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ‘মাওয়ানি কাতার’ ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।

আমিরের এই সফরে দু'দেশের মধ্যে ৫টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। ২৩ এপ্রিল, ২০২৪।
আমিরের এই সফরে দু'দেশের মধ্যে ৫টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। ২৩ এপ্রিল, ২০২৪।

অনুষ্ঠানে রাজধানী ঢাকার একটি সড়ক ও পার্কের নামকরণ করা হয় কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি’র নামে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন মিরপুরের কালশী এলাকায় নির্মিত পার্ক এবং মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে কালশী ফ্লাইওভার পর্যন্ত সড়কটি কাতারের আমিরের নামে নামকরণ করা হয়। এখন থেকে সড়ক ও পার্কটি যথাক্রমে শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এভিনিউ ও শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি পার্ক নামে পরিচিত হবে।

এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সকালে তার কার্যালয়ে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানিকে উষ্ণ অভ্যর্থনায় স্বাগত জানান।

বিনিয়োগের আহবান

বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এসইজেড) আরো বিনিয়োগের জন্য কাতারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বঙ্গভবনে সফররত কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি’র সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ আহবান জানান তিনি।

সাক্ষাৎ শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের এ বিষয়ে অবহিত করেন। প্রেস সচিব জানান যে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেছেন, “উৎপাদন থেকে গ্রাহক পর্যন্ত কৃষি উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, খাদ্য প্যাকেজিং, স্মার্ট কৃষি, সার উৎপাদন এবং রাষ্ট্রীয় পরিচালনার খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খল-সহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগকে স্বাগত জানাবে বাংলাদেশ।”

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে কাতারের আমির। ২৩ এপ্রিল, ২০২৪।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে কাতারের আমির। ২৩ এপ্রিল, ২০২৪।

প্রেস সচিব আরো জানান যে উপসাগরীয় অঞ্চলে কাতারকে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেছেনন, আমিরের এই সফর এবং দু'দেশের মধ্যে ৫টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা স্মারক সইয়ের ফলে আগামী দিনগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরো সম্প্রসারিত ও জোরদার হবে।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ সরকার বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করেছে। পেট্রোকেমিক্যাল, জ্বালানি, মেশিনারি, তথ্যপ্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক্স, সিরামিক, কৃষি ব্যবসা, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মতো খাতে কাতারের বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক প্রণোদনা ও সহায়তা পেতে পারেন।

প্রায় পৌনে ৪ লাখ বাংলাদেশির কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়ায় কাতার সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, এই জনশক্তি কাতার ও বাংলাদেশ উভয়ের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রতিনিয়ত অবদান রাখছে।

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশ থেকে আরো তরুণ, দক্ষ ও আধা দক্ষ জনশক্তি, আইটি বিশেষজ্ঞ এবং পেশাদার প্রযুক্তিবিদ নিয়োগের জন্য কাতারের আমিরের প্রতি আহবান জানান। বাংলাদেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের জন্য কাতার সরকারকে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান আলোচনায় সহায়তা করার জন্য (মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে) কাতারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন।

কাতারের আমির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন।আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

কাতারের আমির বলেন, বাংলাদেশ ও কাতারের সই করা চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

XS
SM
MD
LG