অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সরকারি চাকরিতে কোটা: শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অব্যাহত


বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে। ১০ জুন, ২০২৪।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে। ১০ জুন, ২০২৪।

বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের প্রতিবাদে শিক্খার্থীদের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। সোমবার (১০ জুন) বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা।

সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে তারা এই কর্মসূচি পালন করে।

সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনের মুক্তমঞ্চের সামনে হাইকোর্টের রায়কে বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে মানববন্ধন করে তারা। এসময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেয়।

ভেটেরিনারি সায়েন্স অনুষদের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান তানজিল বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ শব্দটাকে ব্যবচ্ছেদ করলে আমরা শুধু মুক্তি শব্দটা পাই, কোথাও বৈষম্য দেখতে পাই না। স্বাধীনতার এত বছর পরে, নতুন করে কোটা বৈষম্য তৈরি করা হলে, তা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।”

“আমরা জানি কোটা মূলত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের একটা মাধ্যম। কিন্তু বর্তমানে যারা কোটা সুবিধার আওতাধীন, তাদের মধ্যে কেবল প্রতিবন্ধী ও আদিবাসী ছাড়া কেউই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আওতায় পড়ে না। বিশেষ বিবেচনায় অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা যেতে পারে। তবে সেটা কখনোই ৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিৎ নয়;” তিনি যোগ করেন।

শিক্ষার্থী মোরশেদুল ইসলাম মিশু বলেন, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী কোটা পদ্ধতি বাতিল করে দিলে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা আলোর মুখ দেখতে শুরু করে। “কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে আমরা, সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবার ৫৬ ভাগ কোটা পদ্ধতির মধ্যে পড়ে যাই” তিনি আরো বলেন।

আরেক শিক্ষার্থী নূর-ই-হাফিজা বলেন, দেশের প্রথম শ্রেণীর চাকরিগুলোতে মেধার ভিত্তিতে একজন যোগ্য প্রার্থীকে সুযোগ দেয়া উচিত। মেধার যথাযথ সম্মান না করলে দেশ অচিরেই মেধাশূণ্য হয়ে যাবে।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রবিবার বিক্ষোভ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২ হাজার শিক্ষার্থী।

বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহিম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তনের সিদ্ধান্ত মেধা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।” দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহবান জানান ফাহিম

ইনস্টিটিউট অফ মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজেস এর ফরাসি ভাষার শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়া অনুসরণের আহবান জানান। “আমি নারী হলেও নারী কোটা চাই না। কারণ কোটা পদ্ধতি মেধা পদ্ধতিকে সমর্থন করে না;” যোগ করেন তামান্না।

সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে হাইকোর্টের রায় প্রত্যাহার এবং ২০১৮ সালের নীতিমালা পুনঃপ্রবর্তনের আহবান জানিয়ে একটি স্মারকলিপি পেশ করে।

কোটা পুনর্বহালে উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতিবাদ ও চাকরিতে ‘বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা।

এ অবরোধের কারণে সড়কের দুই পাশে শতশত যানবাহন আটকে পড়ে। রবিবার (৯ জুন) বেলা সোয়া ১১টা থেকে সোয়া ১২টা পর্যন্ত ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী এ অবরোধ করে। অবরোধ শেষে মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা। এরপর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে তারা।

শিক্ষার্থীরা জানান, কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে বৈষম্য মেনে নেব না। “আমরা আদিবাসী ও প্রতিবন্ধী কোটা বাদে সব বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি;” বলেন তারা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।

আপিল বিভাগের রায়

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায় আপাতত বহাল রেখেছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। এছাড়া, এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।

রবিবার (৯ জুন) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।

এর আগে, সকালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

উল্লেখ্য, গত বুধবার সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার থেকে সে রায়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে।

XS
SM
MD
LG