বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ৮ বার্তা দেয়া হলো আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) আটটি বার্তা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এ নিয়ে একটি বিবৃতি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, রিফাত রশীদ ও আবু বাকের মজুমদার।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের বক্তব্য হিসাবে এই বিবৃতি ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, সারাদেশের অনেক সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারী তাদের সাথে "যোগাযোগ করতে চাইছেন, করনীয় জানতে চাইছেন।"
তাদের জন্য এই আটটি বার্তা দেয়া হয়,
"১. রংপুরের আবু সাঈদসহ সকল শহীদদের স্মরণ করুন। তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করুন। তাঁদের প্রতিবাদী স্পিরিটকে ধারণ করুন। শহীদদের কবর জিয়ারত করুন। তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করুন।
২. হাসপাতালে প্রচুর মানুষ আহত অবস্থায় কাতরাচ্ছে। হাসপাতালে যান, তাঁদেরকে যথাসম্ভব সহোযোগিতা করার চেষ্টা করুন। আমরা ঢাকা থেকে দ্রুতই একটা ইমার্জেন্সি হেলথ ফোর্স গঠনের উদ্যোগ নিবো।
৩. এখনো অনেক লাশের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায় নি। সক্ষমতা থাকলে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করতে সহায়তা করুন৷ মর্যাদার সাথে তাঁদের দাফন করুন। জানাযায় অংশগ্রহণ করুন।
৪. প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে ও এলাকায় কারা শহীদ হয়েছে ও আহত হয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করুন ও পরিবারের সাথে যোগাযোগ করুন৷ আমরা পরবর্তীতে সমন্বয় করবো।
৫. যেসকল সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হত্যা ও হামলায় সরাসরি জড়িত ছিল তাদেক চিহ্নিত করে রাখুন।
৬. যারা যে স্থানে আন্দোলন করেছেন নতুন করে সংগঠিত হন। সকলে নিরাপদে থাকুন, চিকিৎসা নিন এবং গ্রেফতার এড়ান। ফেসবুকে ক্ষোভ না ঝেড়ে মাঠের প্রস্তুতি নিন। ইন্টারনেট নির্ভর না হয়ে বিকল্প কিছু পরিকল্পনা ভাবুন। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে দ্রুত সকলের সাথে যোগাযোগ করবো।
৭. শিক্ষার্থীরা যার যার ক্যাম্পাস ও হল খোলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপ দিন। শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করুন।
৮. যেসকল শিক্ষার্থী ভাই ও বোনেরা প্রবাসে আছেন আন্তর্জাতিকভাবে এই ক্র্যাকডাউন ও হত্যা-নিপীড়ন প্রচার করুন। বাংলাদেশের আন্দোলনরত ছাত্র-নাগরিকদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়ান।"
চলমান পরিস্থিতিকে বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে পুনর্ব্যক্ত করেছে ভারত
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশে চলমান পরিস্থিতিকে ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ উল্লেখ করে ভারত আশা প্রকাশ করেছে যে, শিগগিরই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাংবাদিকদের বলেন, "ভারত মনে করে, বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা আশাবাদী যে, পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক হয়ে আসবে।"
ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অত্যন্ত উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে বলেও এসময় মন্তব্য করেন তিনি।
জয়সওয়াল বলেন, "ভারতীয় শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের সাহায্য করায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টার আমরা গভীর প্রশংসা করি।"
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি নিশ্চিত করেন যে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ করা হয়েছে।
এর আগে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, "বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।"
মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ হাছান মাহমুদ সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর "অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ" সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে বলে বলেছেন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রবিবার (২১ জুলাই) বলেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে কেউ তাঁর রাজ্যে আসলে তিনি আশ্রয় দেবেন। কলকাতায় তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসের এক সভায় তাঁর বক্তব্য উদ্ধৃত করে একাধিক ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম বিষয়টি জানিয়েছে।
এর আগে, গত শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রথমবার এটিকে ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে অভিহিত করে।
ভারত সরকার সূত্র মোতাবেক ৪,০০০-এর বেশি ভারতীয় শিক্ষার্থী বাংলাদেশে গত সপ্তাহে নাগরিক অস্থিরতার কারণে ভারতে ফিরে গেছে বলে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
(এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য ইউএনবি থেকে নেয়া হয়েছে।)
শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী কোটা নিয়ে প্রয়োজনে আইন পাস করা হবে: জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী
কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী প্রয়োজনে সংসদে আইন পাস করা হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য তিনি জানান।
মন্ত্রী বলেন, "প্রয়োজন হলে সংসদে আইন পাস হতে পারে আলোচনার মাধ্যমে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"
কোটা সংস্কারে আদালতের রায় অনুযায়ী নির্বাহী বিভাগ কাজ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, "সর্বোচ্চ আদালতের রায় বা সিদ্ধান্তই আইন হিসেবে গণ্য হবে।"
রবিবার (২০ জুলাই) নিম্ন আদালতের আদেশ খারিজ করে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ নির্দেশ দেয় যে এখন থেকে সরকারি চাকরিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। বাকি সাত শতাংশের মধ্যে পাঁচ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, এক শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা আর এক শতাংশ প্রতিবন্ধী-তৃতীয় লিঙ্গ কোটা হিসাবে থাকবে।
মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগের বিধান রেখে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
কোটা সংস্কার নিয়ে আদালতের রায় 'অস্পষ্ট' মনে করছেন বলে রবিবার (২০ জুলাই) জানিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।
এতে করে জনমনে বিভ্রান্তির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলেও মনে করেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫৯ জন সমন্বয়ক রবিবার (২০ জুলাই) এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, "এখানে সকল প্রকার কোটার বিষয়ে সুস্পষ্ট সমাধান নেই। ভবিষ্যতে কোটার পরিমাণ নিয়ে সরকারের যথেচ্ছ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।" এজন্য এক সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে স্থায়ী ব্যবস্থা হিসাবে এ সংক্রান্ত আইন পাশ করার দাবি জানান তারা।
(এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য ইউএনবি থেকে নেয়া হয়েছে।)
টাকার সংকট, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একদিনে ২৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনায় টানা পাঁচ দিন ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে বাংলাদেশে নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে গেছে।
বুধবার (২৪ জুলাই) নগদ চাহিদা মেটাতে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রায় ২৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। বাকি ঋণ অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
কারফিউর কারণে বন্ধ থাকার পরে বুধবার মাত্র চার ঘন্টার জন্য খোলা হলে ব্যাপক নগদ টাকা উত্তোলনের চাপের মুখোমুখি হয়েছিল ব্যাংকগুলো। এটিএম বুথে টাকার অভাব এবং ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে নগদ টাকার চাহিদা ছিল আকাশচুম্বী।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বুধবার বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তারল্য সুবিধা দেওয়ার জন্য রেপো, অ্যাসিউরড রেপো, অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট (এএলএস) ও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর জন্য ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটির (আইবিএলএফ) নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এই নিলামে ৭ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ১৪টি ব্যাংক ও ২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার ৭ কোটি টাকা, ১৪ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ৯টি ব্যাংককে ২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, ২৮ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ১২টি ব্যাংক ও ২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ৭ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা দেওয়া হয়।
এ ছাড়া, বুধবার ১৮০ দিন মেয়াদি অ্যাসিউরড রেপো আওতায় ৩টি ব্যাংককে ৫ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা এবং ১ দিন মেয়াদি অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট আওতায় ১১টি প্রাইমারি ডিলার ব্যাংককে ৩ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়। পাশাপাশি ১৪ দিন মেয়াদি ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটির আওতায় ১টি ব্যাংককে ৪৯৭ কোটি টাকা ও ২৮ দিন মেয়াদে ৫টি ইসলামি ধারার ব্যাংককে ৯৮৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে বুধবারে ২৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়।
(এই প্রতিবেদনের তথ্য ইউএনবি থেকে নেয়া হয়েছে।)