অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ডনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অভিবাসন নীতিতে কী পরিবর্তন আসতে পারে?


বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসী-প্রত্যাশী লোকজন পায়ে হেঁটে মেক্সিকো চিয়াপাস রাজ্যে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসার চেষ্টা করছেন। ফটোঃ ৫ নভেম্বর, ২০২৪।
বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসী-প্রত্যাশী লোকজন পায়ে হেঁটে মেক্সিকো চিয়াপাস রাজ্যে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসার চেষ্টা করছেন। ফটোঃ ৫ নভেম্বর, ২০২৪।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় অভিবাসনকে তাঁর অ্যাজেন্ডার শীর্ষে রেখেছিলেন। তিনি দেশের দক্ষিণ সীমান্তে, তাঁর ভাষায় “নজিরবিহীন শৃঙ্খলা” আরোপ করার অঙ্গীকার করেন।

ট্রাম্প আরও অঙ্গীকার করেন যে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর প্রথম দিনেই তিনি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অবৈধ অভিবাসী বহিষ্কার অভিযান শুরু করবেন।

নির্বাচনী প্রচারণার পুরো সময় জুড়ে ট্রাম্প অভিবাসনকে একটি সংকট হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি অবৈধ অভিবাসন এবং নতুন অভিবাসী আটকানোর লক্ষ্যে এক রাশ বিতর্কিত নীতি দ্রুত বাস্তবায়ন করার অঙ্গীকার করেছেন।

“আমরা আমাদের সীমান্ত ঠিক করবো ... আমরা চাই লোকজনকে আবার ঢুকতে দিতে। তাদেরকে আইনসম্মত পথে আসতে হবে,” ট্রাম্প মঙ্গলবার ফ্লোরিডায় তাঁর বিজয় ভাষণে বলেন।

তবে, লক্ষ লক্ষ মানুষের পুনরায় প্রবেশের প্রক্রিয়া পরিচালনা করা জটিল আইনগত এবং ব্যবস্থাপনামূলক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

“অনেকে মনে করেন, এখানে একটা লাইন আছে এবং সবাইকে ঐ লাইনে দাঁড়াতে হবে। বেশির ভাগ সময়, সেরকম কোন লাইন থাকে না,” হিব্রু ইমিগ্র্যান্ট এইড সোসাইটির (এইচআইএস) প্রধান নির্বাহী মার্ক হেটফিল্ড ভিওএ-কে বলেন।

FILE PHOTO: 2024 U.S. Presidential Election Night, at Palm Beach County Convention Center, in West Palm Beach, Florida
প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে চান। ফটোঃ ৬ নভেম্বর, ২০২৪।

মাইগ্রেশন পলিসি ইন্সটিটিউটের একটি প্রতিবেদনে একই কথা বলা হয়েছে। তারা বলছে, ভিসার জন্য একাধিক পথ আছে, প্রত্যেকটির নিজস্ব অপেক্ষার সময় আছে, যা নির্ধারণ করে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য আবেদনকারীকে কতদিন অপেক্ষা করতে হবে।

বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা এবং নির্দিষ্ট দেশের জন্য কোটার এই প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে। অনেক আবেদনকারীকে দশকের পর দশক অপেক্ষা করতে হয়।

পুনরায় প্রবেশে কড়াকড়ির কারণে অনেক কাগজ-পত্র বিহীন অভিবাসী কোন ভাবেই এসব লাইনে যোগ দিতে পারেন না।

যেসব অভিবাসীর যুক্তরাষ্ট্রে “বেআইনিভাবে থাকার” ইতিহাস আছে, তাদের পুনরায় প্রবেশের রাস্তা ১৯৯৬-এর দ্য ইমিগ্রেশন রিফর্ম অ্যান্ড ইমিগ্র্যান্ট রেসপন্সিবিলিটি অ্যাক্ট বন্ধ করে দিয়েছে।

যারা চলে গিয়ে আবার ঢুকতে চান, তাদের মধ্যে যারা ১৮০ দিনের বেশি কিন্তু এক বছরের কম সময় বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ছিলেন, তারা তিন বছরের জন্য পুনরায় প্রবেশ করতে পারবেন না। যারা এক বছরের বেশি সময় বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন, তাদের উপর ১০ বছরের নিষেধাজ্ঞা থাকবে।

বেআইনি উপস্থিতির মধ্যে ভিসার মেয়াদ শেষে রয়ে যাওয়া বা যাচাই ছাড়া প্রবেশ অন্তর্ভুক্ত।

ট্রাম্প অঙ্গীকার করেছেন তিনি তাঁর প্রথম মেয়াদে যত লোককে বহিষ্কার করেছিলেন, এবার তার চেয়ে বেশি করবেন।

Venezuelan migrants sell candies to continue their journey to the US in Comayaguela, Honduras, on November 6, 2024.
ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসী-প্রত্যাশীরা যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার পথে হন্ডুরাসে ক্যান্ডি বিক্রি করছেন। ফটোঃ ৬ নভেম্বর, ২০২৪।

ট্রাম্প আধা-সামরিক ন্যাশনাল গার্ড দিয়ে কাগজপত্র-বিহীন অভিবাসীদের আটক করার পরিকল্পনা করছেন। তিনি ১৮’শ শতাব্দীর আইন এলিয়েন্স এনেমিস অ্যাক্ট-এর কথাও বলেছেন, যার মাধ্যমে যেসব দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বৈরী বলে গণ্য করা হয়, সেসব দেশ থেকে আসা লোকজনকে বহিষ্কার করা যাবে।

ট্রাম্পের লক্ষ্য হচ্ছে যেসব অভিবাসীর বৈধ কাগজপত্র নেই, তাদের সংখ্যা ব্যাপক হারে কমিয়ে আনা। তাঁর সমর্থকরা এই পরিকল্পনাকে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। কিন্তু বিরোধীরা যুক্তি দিচ্ছেন যে, এর ফলে অনেক আইনগত লড়াই শুরু হবে এবং ব্যবস্থাপনার দিক থেকে ঝামেলা সৃষ্টি করবে।

আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক জেরেমি রবিন্স ভিওএ-কে লেখা এক ইমেইলে বলেন, কোন প্রেসিডেন্ট যদি গণ বহিষ্কার নীতি অনুসরণ করতে যান, তাহলে সেটা করতে সরকারের বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ হবে এবং একই সময় অর্থনীতির উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে।

“এটা খুবি গুরুত্বপূর্ণ যে, নীতি নির্ধারকরা এবং আমেরিকান জনগণ বুঝুক এর মধ্যে কী জড়িত আছেঃ করদাতাদের লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ হবে, ইতোমধ্যে চাপে থাকা শিল্পখাত বিধ্বস্ত হবে, লক্ষ লক্ষ মানুষ ডিটেনশন সেন্টারে আটক, এবং হাজার হাজার পরিবার ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাবে যার ফলে দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলা আর মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হবে,” রবিন্স ইমেইলে লেখেন।

এক দল অভিবাসী, যারা নিজেদের ভারতীয় বলে পরিচয় দেয়, মেক্সিকো সীমান্ত পার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজনায় হেঁটে যাচ্ছেন। ফাইল ফটোঃ ২৯ অগাস্ট, ২০২৩।
এক দল অভিবাসী, যারা নিজেদের ভারতীয় বলে পরিচয় দেয়, মেক্সিকো সীমান্ত পার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজনায় হেঁটে যাচ্ছেন। ফাইল ফটোঃ ২৯ অগাস্ট, ২০২৩।

প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের সময় শুরু করা ‘রিমেইন ইন মেক্সিকো’ প্রোগ্রাম আবার চালু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই নীতি অনুযায়ী আশ্রয়প্রার্থী অভিবাসীদের আবেদন প্রক্রিয়া চলার সময় তাদের মেক্সিকোতে থাকতে বাধ্য হয়।

আরও একটা নীতিমালা পুনরায় চালু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে অভিবাসীদের দ্রুত বহিষ্কার করা যায় এবং যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে অভিবাসন কমিয়ে আনা যায়।

ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার সময় আরেকটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যা হল, বাইডেন প্রশাসন অভিবাসীদের কিছু নির্দিষ্ট গ্রুপকে আইনসম্মতভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়ে যে পদক্ষেপ নিয়েছিল, তা বাতিল করা।

বাইডেনের নীতির অধীনে, কিউবা, হেইতি, নিকারাগুয়া এবং ভেনেজুয়েলা, এই চারটি দেশ থেকে আসা প্রতি মাসে ৩০,০০০ অভিবাসীকে শর্ত সাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে আইনসম্মতভাবে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়। ট্রাম্প এই রাস্তা বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছেন।

যারা যুক্তরাষ্ট্রে আসবে তাদের যাচাই করার প্রক্রিয়া আরও জোরদার করার জন্য ট্রাম্প ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকা পুনরায় চালু করে আরও দেশ অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি একটি “মতাদর্শ যাচাই” প্রক্রিয়া শুরু করতে চান যার মাধ্যমে যেসব ব্যক্তিকে ট্রাম্প “বিপজ্জনক, পাগল, ঘৃণাপূর্ণ, বিদ্বেষী এবং বেপরোয়া” বলে বর্ণনা করেন, তাদের নিষিদ্ধ করা হবে।

ট্রাম্পের প্রচারণা দল বলছে এই পদক্ষেপ জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করবে, যদিও এগুলো বৈষম্য এবং অধিকার নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

ট্রাম্প আরও বলেছেন, যেসব শিশু যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিয়েছে যখন তাদের বাবা-মা বেআইনিভাবে দেশে ছিলেন, তাদের জন্মসূত্রে নাগরিক হওয়ার অধিকার তিনি বাতিল করবেন। এই পদক্ষেপকে সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর আলোকে দেখতে হবে এবং ধারণা করা হচ্ছে তা কঠোর আইনগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির প্রতি তাঁর মূল সমর্থকের সমর্থন রয়েছে, কিন্তু সেটা বিরোধিতার মুখে পড়ছে আইন বিশেষজ্ঞ এবং অধিকার সংগঠনগুলোর কাছে। তারা যুক্তি দেখাচ্ছে, গণ বহিষ্কার এবং যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে পারে এবং আদালতে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

এইচআইএস-এর মার্ক হেটফিল্ড ভিওএ-কে বলেন নতুন ট্রাম্প প্রশাসন আইনসম্মত অভিবাসন নিয়ে কী করবে, তা নিয়ে অধিকার কর্মীরা উদ্বিগ্ন।

“তিনি যদি শরণার্থী কর্মসূচি বন্ধ করতে চান তখন আমরা সম্ভবত মামলা করবো ... কিন্তু শেষ কথা হচ্ছে, শরণার্থী কর্মসূচির ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের অনেক ক্ষমতা আছে। আর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্নে, তিনি সীমান্তে এসে আবেদন করা অসম্ভব করে তুলবেন, যেমন তিনি করেছিলেন তাঁর রিমেইন ইন মেক্সিকো কর্মসূচি দিয়ে,” হেটফিল্ড বলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় তরুণ-নেতৃত্বাধীন অভিবাসী সংগঠন ইউনাইটেড উই ড্রিম-এর রাজনৈতিক পরিচালক মিশেল মিং বলেন, তারা অভিবাসীদের “রক্ষা” করতে প্রস্তুত থাকবেন।

মিং ধারণা করছেন হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের পুরো সময় জুড়ে তাদের অনেক “আপনার অধিকার জানুন” সংক্রান্ত সভার আয়োজন করতে হবে।

“ট্রাম্প যখন দায়িত্ব নেবেন, আমরা তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেবো যে আমাদের জনগোষ্ঠীর ক্ষতি করে এমন যেকোনো নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমরা আছি,” মিং বলেন।

XS
SM
MD
LG