সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোর ভেতরে এবং আশপাশে সিরীয় বাহিনীর দ্রুত পরাজয়ে অনেক পর্যবেক্ষক অবাক হয়েছেন এবং দেশটির অনেক অংশেই একই রকম ঘটনা ঘটছে।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরোধী বিদ্রোহী যোদ্ধারা, যাদের মধ্যে সন্ত্রাসবাদী জাবহা আল নুসরা গোষ্ঠটিও অন্তর্ভুক্ত, শনিবার সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের “অর্থনৈতিক রাজধানী” আলেপ্পো থেকে সরকারি বাহিনী নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর, সেই শহরের অভ্যন্তরে গুলি চালায়।
অপেশাদারি ভিডিওতে দেখা গেছে যে বিদ্রোহী যোদ্ধারা আলেপ্পো বিশ্ববিদ্যালয় এবং সেখানকার প্রাদেশিক সরকারের সদরদপ্তরসহ শহরটির কেন্দ্রস্থলে সাদাল্লাহ জাবারি চত্ত্বরের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে।
সৌদি নেতৃত্বাধীন আল আরাবিয়া টিভি জানিয়েছে যে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী আলেপ্পোর সামরিক ও অসামরিক বিমানবন্দরগুলি থেকেও নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়।আবু ধাবী ভিত্তিক স্কাই নিউজ আরাবিয়া বিদ্রোহীরা যে সামরিক বাহিনীর বিমান বন্দরটি নিয়ন্ত্রণ করছে তার অপেশাদারি ভিডিও প্রদর্শন করে।
সিরিয়ান অবজারভেটারি ফর হিউমান রাইটস’এর ব্রিটেন ভিত্তিক বিশ্লেষক রামি আব্দুলরাহমান আরব সংবাদ মাধ্যমকে বলেন যে ইরানি বাহিনী ও তাদের পক্ষে থাকা মিলিশিয়া মিত্ররা আলেপ্পোর অভ্যন্তরের ও আশপাশের অনেকগুলি অবস্থান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
আব্দুলরাহমান বলেন একটি ড্রোন আক্রমণের পর ইরানের রিভ্যুলিউশানারি গার্ড বাহিনী এবং তাদের মিত্র হেজবুল্লাহ ও ইরাকি শিয়া মিলিশিয়া যোদ্ধারা ওই অঞ্চল থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়।
আরব সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে যে আলেপ্পো ও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব প্রদেশের মাঝখানের গোটা অঞ্চলের পতন ঘটেছে এবং প্রধান আলেপ্পো-দামেস্ক মহাসড়ক সংলগ্ন আলেপ্পোর দক্ষিণের বড় বড় শহরগুলির পতন ঘটেছে, যার মধ্যে সারাকিব ও মারাতাল-নুমানও রয়েছে।
এটা এখনও পরিস্কার নয় যে সিরিয়ার বড় শহরগুলিরও পতন ঘটবে কীনা তবে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহমা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য প্রাচ্য বিভাগের প্রধান জোশুয়া ল্যান্ডিস ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন যে সকলের চোখ এখন সিরিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম শহর হামার দিকে।
ল্যান্ডিস বলেন তিনি মনে করেন রাজধানী দামেস্কেরও পতন ঘটতে পারে, কারণ সরকার সমর্থকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন এবং লড়াই করার মনোবল হারিয়ে ফেলেছেন। ল্যান্ডিস বলছেন যে তুরস্ক সরকারের অস্বীকৃতি সত্ত্বেও গোটা অভিযানে “তুরস্কের আঙ্গুলের ছাপ রয়েছে” কারণ “ইদলিবে সব অস্ত্র ও খাদ্য এবং অর্থের প্রবেশ ঘটছে তুরস্ক থেকে”।
ল্যান্ডিস বলেন, “আমি নিশ্চিত তুরস্ক আসাদকে চপেটাঘাত করতে এবং তাঁকে [আপোস আলোচনার] টেবিলে আনতে চেয়েছিল। কিন্তু এখনতো পাশা উল্টে গেছে এবং আমার মনে হয় না কেউ এই পতনের কথা ভাবতে পেরেছিল”।
ল্যান্ডিস বলেন, আসাদের দূর্বলতার অনেকগুলি কারণ রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে ইসরায়েল যে “[তার মিত্র] হেজবুল্লাহকে দূর্বল করে দিচ্ছে এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে “ সিরিয়ার সরকারি অবস্থানের উপর ইসরায়েলের অব্যাহত বোমা বর্ষণ” এবং দেশের ভেতরেও তাদের মিত্রদের পরাস্ত করার প্রচেষ্টা।
সিরীয় বিশ্লেষকরাও আরব সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন “তেহরান থেকে বৈরুতের রাস্তা এখন আর খোলা না থাকায় এবং অস্ত্র শস্ত্র ইরানের পক্ষের মিলিশিয়া মিত্রদের কাছে আর পৌঁছাতে না পারায় দূর্বল হয়ে পড়েছে ইরান-সিরিয়া অক্ষ”। তা ছাড়া সিরিযার মিত্র রাশিয়া, “এখন ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত বলে তারও হাত বাঁধা”।
আলেপ্পোতে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের এই অভিযানের পেছনে তার সরকারের কোন দায় থাকার কথাটি অস্বীকার করেছেন তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাকান ফিদান। তিনি বলেন, “এই অঞ্চলে শান্তি আনার জন্য তুরস্ক ক্রমবর্ধমান ভাবেই তার ভূমিকা পালন করছে”।
বলা হচ্ছে রাতের মধ্যেই রুশ বাহিনী ওই অঞ্চলে অনেকগুলি কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে সরে এসেছে তবে রুশ ও সিরীয় যুদ্ধ-বিমানগুলো আলেপ্পো এবং ওই অঞ্চলের অন্যান্য অংশে বিদ্রোহী বাহিনীর উপর বোমা বর্ষণ করেছে এবং বিদ্রোহীদের অনেকেই এতে হতাহত হয়েছে বলে সিরিয়ার সামরিক বাহিনী জানিয়েছে।