অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি ভারপ্রাপ্ত আফগান প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান


আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে একটি অর্থনৈতিক সম্মেলনে বক্তৃতা করছেন তালিবান প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ। বুধবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২২।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে একটি অর্থনৈতিক সম্মেলনে বক্তৃতা করছেন তালিবান প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ। বুধবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২২।

তালিবানের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী বুধবার বিশ্ব সম্প্রদায়কে আফগানিস্তানের নতুন সরকারকে বৈধতা দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জোর গলায় বলেছেন যে তারা সরকারী স্বীকৃতির জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত শর্ত পূরণ করেছে।

মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ কাবুলে এক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। তার অন্তর্বর্তী প্রশাসন গত আগস্টে তালিবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটির ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকট নিরসনের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য এই সম্মেলনটি আহ্বান করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

আখুন্দ বলেন, “আমি বিশেষ করে ইসলামি দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই, যেন তারা অন্যদের জন্য অপেক্ষা না করে এবং আমাদের ইসলামিক আমিরাতকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয়”।

তিনি যুক্তি দেন যে এটি আফগানিস্তানের ভয়াবহ অর্থনৈতিক ও মানবিক সমস্যাগুলি মোকাবেলার প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে।

কোনো দেশ এখনো নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি, যেই সরকারকে তালিবান আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তানের ইসলামিক আমিরাত হিসেবে উল্লেখ করে। অতি-রক্ষণশীল গোষ্ঠী এবার দেশকে কীভাবে শাসন করবে, তা বিদেশী সরকারগুলো পর্যবেক্ষণ করছে।

আখুন্দ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলির দ্বারা আফগানিস্তানের বৈদেশিক নগদ সঞ্চয় প্রায় ৯৫০ কোটি ডলার জব্দ করাকে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের জন্য দায়ী করেছেন।

কাবুলে জাতিসংঘ মিশনের প্রধান ডেবোরা লিয়নস ওই সম্মেলনে বলেন, বৈশ্বিক সংস্থাটি আফগান অর্থনীতিকে "পুনরুজ্জীবিত" করতে এবং অর্থনৈতিক সমস্যাগুলিকে "মৌলিকভাবে" মোকাবেলা করতে কাজ করছে।

লিয়নস বলেন, “অর্থনৈতিক সংকটই আফগানিস্তানের একমাত্র সমস্যা নয়। তবে এটি সবচেয়ে জরুরি এবং সর্বোপরি একটি এমন বিষয় যে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব এবং আমাদের সকলের দ্রুত তা করা উচিত”।

অর্থনৈতিক অবনতি রোধে তালিবান প্রশাসনের নেওয়া কিছু পদক্ষেপের তিনি প্রশংসা করেন ।

তবে, লিয়নস অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণের গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে বলেন, স্থিতিশীল সমাজ এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য অন্তর্ভুক্তি, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান এবং সকল নাগরিকের মধ্যে সমতা প্রয়োজন।

তালিবান মন্ত্রিসভার অন্যান্য শীর্ষ সদস্যরাও বুধবারের সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি বলেছেন, তালিবান সরকার আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইছে।

তালিবান কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০টি বিদেশী দেশের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন, এছাড়া আরও কয়েক ডজন ভার্চুয়ালী অংশগ্রহণ করেন।

পাঁচ মাস আগে তালিবান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে, সাহায্য-নির্ভর আফগানিস্তানে বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন তহবিল স্থগিত করা, তালিবান নেতাদের উপর আর্থিক বিধিনিষেধ আরোপ এবং দীর্ঘকাল ধরে সন্ত্রাস-সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞার কারণে বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং শিক্ষাসহ অনেক মৌলিক পরিষেবা ভেঙে পড়েছে।

মুদ্রাস্ফীতি প্রবল, এবং সাধারণ জিনিসপত্রের দাম অধিকাংশ আফগানের নাগালের বাইরে।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পূর্ববর্তী তালিবান সরকারের অধীনে, নারীদের জনজীবন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, মেয়েদের শিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, মানবাধিকার লঙ্ঘন ব্যাপক ছিল, এবং আফগান মাটিতে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীরা সক্রিয় থাকার ফলে দেশটিতে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় এবং দেশটি কূটনৈতিক ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

যদিও তালিবান নেতারা দেশটিকে ভিন্নভাবে শাসন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে তারা এখনও অধিকাংশ নারীকে সরকারি চাকরিতে ফিরে যেতে দেননি। সেপ্টেম্বরে স্কুলে ছেলেদের ক্লাস পুনরায় শুরু করার অনুমতি দেওয়া হলেও, আফগানিস্তান জুড়ে মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির বেশিরভাগই বন্ধ রয়েছে।

নারীদের একজন পুরুষ আত্মীয় ছাড়া ৭২ কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণ করার অনুমতি নেই এবং হিজাব বা বোরকা না পরা নারীদের তাদের গাড়ীতে না তুলতে ট্যাক্সি ড্রাইভারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

XS
SM
MD
LG