অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

দূতাবাসকর্মীদের ফিরিয়ে আনার পর ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠক ডাকলেন মোদি


আফগানিস্তানে ভারতীয় কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তা ও সিভিলিয়ানদের নিয়ে একটি বিমান দিল্লি যাওয়ার পথে ভারতের জামনগরে জ্বালানি নেয়ার জন্যে অবতরণ করে। আগস্ট ১৭, ২০২১- রয়টার্স
আফগানিস্তানে ভারতীয় কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তা ও সিভিলিয়ানদের নিয়ে একটি বিমান দিল্লি যাওয়ার পথে ভারতের জামনগরে জ্বালানি নেয়ার জন্যে অবতরণ করে। আগস্ট ১৭, ২০২১- রয়টার্স

আফগানিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রুদ্রেন্দ্র টন্ডন সহ দূতাবাসকর্মীরা দেশে ফেরার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।

আফগানিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রুদ্রেন্দ্র টন্ডন সহ দূতাবাসকর্মীরা দেশে ফেরার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ঐ বৈঠকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন সিংলা ও কাবুল থেকে সদ্য দেশে ফেরা আফিগানিস্তানে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রুদ্রেন্দ্র টন্ডন। তালিবান দখলে থাকা আফগানিস্তানের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক অবস্থা তাঁরা ওই বৈঠকে ব্যাখ্যা করেন।

পরে রাতে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আফগানিস্তান থেকে সমস্ত ভারতীয়কে দেশে ফেরাতে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “আফগানিস্তানে আটকে পড়া ভারতীয়দের নিরাপত্তার কথা ভেবে শুধু নয়াদিল্লি বসে থাকবে না। আফগান-হিন্দু এবং আফগান-শিখ তথা সেখানকার সংখ্যালঘুদের কেউ ভারতে আসতে চাইলে তাঁকে সবরকম ভাবে সাহায্য করতে হবে। যে সমস্ত আফগান ভাই বোন ভারতের সাহায্য প্রত্যাশা করছেন তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে”।

বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, ভারতীয় দূতাবাসকর্মীদের ফেরানোর পর নয়াদিল্লির অগ্রাধিকার হল সেখানে আটকে থাকা বাকি ভারতীয়দের উদ্ধার করা। তা ছাড়া যে আফগান নাগরিকরা ভারতকে বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণের কাজে সহযোগিতা করেছে তাঁদেরও পাশে থাকা। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে এও জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ১৬৫০ জন ভারতে ফেরার জন্য আবেদন জানিয়েছেন।

ব্লিঙ্কেন-জয়শঙ্কর বৈঠক, রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তায় কাবুল থেকে দূতাবাস কর্মীদের দেশে ফেরাল ভারত

সোমবার সন্ধ্যাতেও নয়াদিল্লিতে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি জানিয়েছিলেন, কাবুলে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধার থমকে গিয়েছে। কারণ, আফগানিস্তানের আকাশপথ ও কাবুলের বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র যখন এ কথা বলছেন, তখন অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে কাবুলে ভারতীয় দূতাবাস থেকে রাষ্ট্রদূত রুদ্রেন্দ্র টন্ডন সহ দেড়শ জনের বেশি দূতাবাসকর্মীকে দেশে ফেরানো মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল নয়াদিল্লি।

প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল, তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত রেখে প্রথমে বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া। তার পর সেখান থেকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর সি-সেভেন্টিন গ্লোবমাস্টার বিমানে দেশে ফেরানো। প্রসঙ্গত, দুটি সি-সেভেন্টিন বিমান ১৫ এবং ১৬ অগস্টের মাঝের রাতে ভারত থেকে কাবুলে গিয়ে পৌঁছেছিল।

পরিস্থিতি যখন এমনই তখন মঙ্গলবার ভারতীয় সময়ের সকালে নিউইয়র্কে মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেটাই অনুঘটকের কাজ করে।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্র জানাচ্ছে, কাবুলে ভারতীয় দূতাবাস থেকে সোমবার ৪৫ জন ভারতীয় বিমানবন্দরে পৌঁছতে সফল হন। কিন্তু আরও দুটি কনভয়কে তালিবানরা আটকে দেয়। সেই কনভয়ে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রুদ্রেন্দ্র টন্ডন সহ অন্তত ৮০ জন দূতাবাসকর্মী ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন ইন্দো-টিবেট বর্ডার পুলিশের কিছু নিরাপত্তা কর্মী। কিন্তু তাঁদের ফেরত পাঠিয়ে দেয় তালিবানরা। ফলে সোমবার মধ্যরাতে কাবুল থেকে একটি সি-সেভেন্টিন বিমান কেবল ৪৫ জন ভারতীয়কে নিয়ে দেশে ফিরতে পেরেছিল।

মার্কিন-ভারত বিদেশ সচিব-বিদেশ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর নাটকীয় ভাবে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। মঙ্গলবার সকালে তালিবানরাই নিরাপত্তা দিয়ে রাষ্ট্রদূত সহ দূতাবাসকর্মীদের বিমানবন্দরে পৌঁছে দেয়। সাহায্য করে মার্কিন বাহিনীও। তার পর এদিন দুপুরে বাকি দূতাবাসকর্মীদের নিয়ে দেশে ফেরে অপর বিমানটি।

ঘটনা হল, কাবুল বিমানবন্দর এখন নিয়ন্ত্রণ করছে মার্কিন সেনা। বিমানবন্দরের অপারেশন, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলও মার্কিন সেনাই দেখভাল করছে। ফলে ভারতীয় দূতাবাসকর্মীদের দেশে ফেরাতে ওয়াশিংটনের সহযোগিতা ছিল অপরিহার্য।

সন্ধ্যায় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আফগানিস্তান থেকে ভারতে আসার প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল কাবুল বিমানবন্দরের পরিস্থিতি। এ ব্যাপারে ভারত উচ্চ পর্যায়ে ভারত আন্তর্জাতিক স্তরে সহযোগী দেশগুলির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যায়। বিদেশ মন্ত্রী মার্কিন বিদেশ সচিবের সঙ্গেও কথা বলেন”। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আফগানিস্তানে আটকে পড়া ভারতীয়দের নিরাপদে দেশে ফেরাতে নয়াদিল্লি দায়বদ্ধ। কাবুল বিমানবন্দর বাণিজ্যিক ভাবে খুলে গেলে এ জন্য আরও বিমানের ব্যবস্থা করা হবে।”

সন্ধ্যায় বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর টুইট করে বলেন, “ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসকর্মীদের কাবুল থেকে দেশে ফেরানো ছিল কঠিন ও জটিল বিষয়। যারা এজন্য সাহায্য করেছেন তাদের অশেষ ধন্যবাদ।”

XS
SM
MD
LG