অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী তালিবান ও হাক্কানী নেটওয়ার্ককে সম্পদ বলেই মনে করে: লিজা কার্টিস


আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই তালিবানদের আবারও আক্রমণ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন , বলেছেন যে এ রকম সহিংসতা আফগানিস্তানে বিদেশি সৈন্যদের অবস্থানকে কেবল প্রলম্বিত করবে। এই প্রসঙ্গে ওয়াশিংটনের চিন্তক গোষ্ঠি , দ্য হেরিটেজ ফাউন্ডেশানের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র রিসার্চ ফেলো লিজা কার্টিসের কাছে জানতে চেয়েছিলাম যে তিনি সত্যি সত্যিই এটা মনে করেন কী না যে এ বছর থেকে পর্যায়ক্রমে আফগানিস্তান থেকে নেটো ও যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহার সম্ভব ?

লিজা কার্টিস বলছিলেন যে তিনি বরঞ্চ বিপরীত মনোভাব পোষণ করেন। তিনি বলেন এই যে আক্রমণ গুলো এখন ও হচ্ছে এবং তালিবান এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে তারা রাজধানী কাবুল সহ গোটা দেশে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সক্ষম সে সব কিছুই সৈন্য প্রত্যাহারের গতি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে যুক্তি প্রদান করছে। আর আফগানিস্তানে যুক্তরাস্ট্রের রাষ্ট্রদূত ক্রকার তো গতকালই একথা টা বলেছেন যে এই আক্রমণে আবারও যুক্তরাস্ট্রের এবং জোট বাহিনীর সে দেশে থাকার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাকেই তুলে ধরছে, অন্তত যে পর্যন্ত না আফগান নিরাপত্তা বাহিনী নিজেরাই তাদের নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে পারে। তা ছাড়া প্রেসিডেন্ট ওবামাও এই সৈন্য প্রত্যাহার তরন্বিত করতে পারেন না কারণ আফগানিস্তানে পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। বিশেষত নির্বাচনের বছরে এ জন্যে তাকেঁ সমালোচনার সম্মুখীন হতে পারে।

কিন্তু এই যে অতিসম্প্রতি সেখানে উপর্যুপরি অনেকগুলো সমন্বিত এবং পরিকল্পিত হামলা চালানো হলো এর কারণ কি বলে মনে করছেন লিজা কার্টিস । তিনি বলছেন দেখুন একদিকে আমি বিষয়টিকে খুব একটা অবাক হবার মতো ঘটনা বলে মনে করি না। শীতের পর এই মৌসুমে লড়াই যে আবার শুরু হতে পারে সেটাও কোন অবিশ্বাস্য বিষয় নয় । তা ছাড়া তালিবান যে যুক্তরাস্ট্রের সঙ্গে আলোচনা স্থগিত করেছে সেখানেও এ ধরণের ঘটনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ওবামা ও কারজাই প্রশাসনের সহযোগিতা ও সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধি পেয়েছে , কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি সম্পন্ন করার ব্যাপারে, যার ফলে যুক্তরাস্ট্র আফগানিস্তানে দীর্ঘ সময়ের জন্যে অবস্থান করতে পারবে। এই বিষয়গুলির বিরোধীতা করছে তালিবান । সেটাও এই আক্রমণের মাধ্যমে তার অবস্থান জানান দেবার একটা কারণ।

আফগানিস্তানের পাশপাশি পাকিস্তানেও সহিংসতা হয়েছে। সেখানে কারাগার থেকে সন্ত্রাসীরা পালিয়েছে এবং সেটা ও হয়েছে তালিবানের মদদে। পাকিস্তান প্রকৃতপক্ষে আফগানিস্তানে মুক্ত গণতন্ত্র লালন করতে মূখ্য ভুমিকা পালন করবে কি , নাকি উগ্রপন্থিরা আফগানিস্তানে একটি উগ্র মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরণত করবে ? আমাদের এই প্রশ্নের জবাবে লিজা কার্টিস বলেন পাকিস্তান চাইলে নিশ্চয়ই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু তালিবানতো পাকিস্তানেই অভয় আশ্রয় লাভ করে। তালিবানের নের্তৃত্ব তো কোয়েটায় থাকে। হাক্কানী নেটওয়ার্ক ও তো পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। পাকিস্তানিরা তো হাক্কানী নেটওয়ার্ককে উপজাতীয় এলাকায় নির্ভয়ে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। সুতরাং নিশ্চয়ই তারা ইতিবাচক ভুমিকা পালন করতে পারে তবে সমস্যা হচ্ছে তাদের এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতেই দেখা যায়নি । দূর্ভাগ্যবশত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী তালিবান ও হাক্কানী নেটওয়ার্ককে সম্পদ বলেই মনে করে আর সেজন্যেই তারা এদের উপর চাপ প্রয়োগে অনীহা প্রকাশ করে। আর যুক্তরাষ্ট্র যখ্ন পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতামুলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় , তখন এ সব ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে অত্যন্ত হতাশা মূলক হয়ে দাঁড়ায় কারণ যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছ থেকে কাঙ্খিত সহযোগিতা পাচ্ছে না। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে এই সহযোগিতার

অভাব এবং যুক্তরাষ্ট্র ও নেটার সৈন্য প্রত্যাহার কার্যকর হলে আফগানিস্তান আবারও তালিবানের সেই কালো যুগে ফিরে যেতে পারে। আর সে জন্যেই দরকার আফগানিস্তানের সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশীপ চুক্তি যাতে যোদ্ধৃ বাহিনী প্রত্যাহারের পর ও আফগানিস্তানে এ ধরণের বিপর্যয় রোধে দেশটিকে সহযোগিতা প্রদান করা যায়।

XS
SM
MD
LG