ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আলি আব্দুল্লাহ সালেহ চিকিত্সার জন্যে এখন সৌদি আরবে রয়েছেন। গত শুক্রবার এক রকেট আক্রমনে প্রেসিডেন্ট সালেহ আহত হবার পর দেশটিতে অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের সংবাদদাতা এলিযাবেথ এ্যারট কায়রোর মধ্যপ্রাচ্য ব্যূরো থেকে জানাচ্ছেন, ইয়েমেনের অধিবাসীদের অনেকেই প্রেসিডেন্ট সালেহর পদত্যাগের দাবী জানিয়ে আসছিলেন।
রিপোর্টটি পড়ে শোনাচ্ছেন জামাল হাসান।
মি সালেহর দেশত্যাগের পর হাজার হাজার সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারী আনন্দ উত্সবে পথে নামে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মিষ্টার সালেহর চত্বরে শুক্রবারের আক্রমনের পর সহিংস ঘটনাবলীর নিন্দা করলেও তাঁর বিদায় দেশের জন্য শুভ ফল বয়ে আনবে বলে মন্তব্য করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি দক্ষিণের তাইয শহরে সম্প্রতি বিক্ষোভকারীদের হত্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, মিষ্টার সালেহ একজন হত্যাকারী এবং তিনি যথার্থ সাজা পেয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট সালেহ দেশের বাইরে কতদিন অবস্থান করবেন, সে ব্যপারটা স্পষ্ট নয়। তবে তার শারীরিক আঘাতটা যে, আগে কর্মকর্তাদের উল্লেখিত সামান্য আচড়ের চেয়ে অনেক বেশী মারাত্ত্বক, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই বলে অনেকের ধারনা। ইয়েমেনী প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ত্যাগের লক্ষ্যে আঞ্চলিক মধ্যস্থতায় নেতৃত্বদানকারী দেশ সৌদে আরব তাঁর দেশে ফেরার বিষয়ে তেমন উত্সাহী নয়।
খবরে প্রকাশ, ইয়েমেনী সংবিধান অনুযায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দ আলহাব মানসুর আল-হাদী ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছেন। তবে সে দেশে রাজনৈতিক, সামরিক এবং গোষ্ঠীগত বিবাদ বিরাজমান থাকায় সর্বসম্মতভাবে মিষ্টার সালেহর উত্তরসুরী পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ইয়েমেনের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে আরেকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি হচ্ছেন ক্ষমতাবান ব্যবসায়ী এবং প্রভাবশালী হাশীদ গোষ্ঠির প্রধান সাদেক আল আহমারের ভাই হামিদ আল আহমার। তাঁর ঐ গোষ্টীর সমর্থকেরা গত দু সপ্তাহ ধরে সানা’তে সরকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছে। কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্টের মসজিদে আক্রমনের জন্য তাঁর লোকেদের দায়ী করছেন। তবে গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়।
মিষ্টার সালেহর বিদায়ের পর বিক্ষোভকারীরা এক বিবৃতিতে সহিংসতায় অংশ নেয়নি এমন কাউকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন অসামরিক সরকার গঠনের আহবান জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে সহিংসতা বিষয়ে আহমার গোষ্ঠীর যোদ্ধা এবং তাইযে বিক্ষোভকারীদের অপর বর্বরোচিত আক্রমনের জন্যে দায়ী সরকারী সেনাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। অসামরিক লোক ছাড়াও গত কয়েক সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট সালেহর সম্পর্কচ্ছেদকারী কয়েক জন সেনা অফিসারও কোন সংঘাতে অংশ নেননি। তাঁরা সালেহ বিরোধী আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন দিয়েছেন; বেশ কিছু সৈন্যও তাঁদের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।
আজ রবিবার প্রকাশিত খবরে জানা যায়, তাইয এবং দক্ষিনের বন্দর শহর এডেনে কিছু কিছু সৈন্য দলত্যাগ করেছে। সামগ্রীকভাবে ইয়েমেনে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, রাজধানীর বাইরের অধিকাংশ এলাকা বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনীর অধীনে। দক্ষিনের বিচ্ছিন্নতাবাদিরা ছাড়াও উত্তরে বিদ্রোহিদের অবস্থান। তাছাড়া ইসলামী চরমপন্থী এক আন্দোলন এবং স্থানীয় সন্ত্রাসী দল আল কায়েদা ইন দ্যা আরাবিয়ান পেনিনসুলার হুমকিতো রয়েছেই।
এডেন উপসাগর দিয়ে আসা হাজার হাজার সোমালী শরনার্থী ইয়েমেনের সমস্যাকে আরো জটিল করে তুলেছে। কোন কোন বিশ্লেষকের মতে ইয়েমেনে ভবিষ্যতে হয়তো সোমালিয়ার মতোই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।