বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ফরাশগঞ্জ-শ্যামবাজার সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীতে সোমবার যাত্রীবাহী একটি লঞ্চ অপর একটি লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে গেলে অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ঢাকা থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ময়ূর-২ নামের একটি লঞ্চের ধাক্কায় পঞ্চাশ থেকে প্রায় একশ জন যাত্রী নিয়ে মুনসিগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা মর্নিং বার্ড নামের লঞ্চটি ডুবে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন স্বল্প কয়েকজন যাত্রী সাঁতার কেটে আশপাশের নৌযান ও তীরে উঠতে সক্ষম হলেও বেশীরভাগ যাত্রীই দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চটির সাথে বুড়িগঙ্গার পানিতে তলিয়ে যান । মর্নিং বার্ড লঞ্চটির বেচে যাওয়া এক যাত্রী সাংবাদিকদের তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন লঞ্চটির দোতালা থেকে কি ভাবে ছিটকে পানিতে পড়লেন তা তিনি মনে করতে পারছেন না।
স্থানীয় লোকজন তাৎক্ষনিক ভাবে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে এবং পরে ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড এবং নৌ পুলিশের ডুবরিরা উদ্ধার কাজে যোগ দেন। এরপর ডুবরিরা বুড়িগঙ্গার গভীর পানির নিচ থেকে একে একে মৃতদেহ উদ্ধার করতে শুরু করেন। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবাহন কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ এর উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। তবে ডুবন্ত লঞ্চটিকে কখন উপরে টেনে তোলা সম্ভব হবে তা সঠিক ভাবে কেউ বলতে পারেননি। পুলিশ জানিয়েছে ময়ূর-২ লঞ্চটিকে জব্দ করা গেলেও এর চালক পলাতক রয়েছে।
এদিকে, বিআইডব্লিউটিএ এর চেয়ারম্যান কমোডোর গোলাম সাদেক ঘটনাস্থল পরিদর্শন কালে সাংবাদিকদের বলেছেন তিনি মনে করেন দুই লঞ্চের চালকের গাফেলতির কারনেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তদন্তের পর এর জন্য কে বা কারা দায়ী তা জানা যাবে জানিয়ে তিনি বলেন।তবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাঁর কাছে মনে হয়েছে ঘটনাটি ইচ্ছাকৃত ভাবে ঘটানো হয়েছে।
লঞ্চ দুর্ঘটনা সম্পর্কে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন ঘটনার তদন্তের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সাত সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বিআইডব্লিউটিএ এর পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজকের লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা।
অন্যদিকে, সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে গত ২০ বছরে প্রায় ৭০০ লঞ্চ ডুবির ঘটনায় মারা গেছেন অন্তত ২০ হাজার মানুষ।