ছোটবেলা থেকে মেধাবী হওয়ায় নিলফামারীর মেয়ে দিয়ার স্কুলের ফিজিক্যাল ফিটনেস কোচ খায়রুল ইসলামের অনুপ্রেরণায় বাবা মা তাকে ২০১৭ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি করিয়ে দেয়।
ছোট বয়সে বাবা মাকে ছেড়ে আসার একটা কষ্ট ছিল তার মনে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সব মেনে নিতে হয়েছে। মফস্বল শহর থেকে বিকেএসপি‘র মত এমন একটি প্লাটফর্মে খেলার সুযোগ পেয়ে অনেক ভালো লাগতো বলছেন দিয়া।
ক্রীড়াঙ্গনে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মেয়েদের মধ্যে বিশ্ব পর্যায়ে সাফল্য দেখাচ্ছেন কয়েক বছর ধরে। দিয়া নামের মতোই চারিদিকে আলো ছড়াচ্ছেন।টোকিও অলিম্পিক থেকে ভয়েস অফ আমেরিকার সাথে কথা বলার সময়ে বারবার বলছিলেন মার্টিন ফেড্রিক, জিয়াউল হক, মোহাম্মদ হাসান কোচ এবং টিম লিডার কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদ চপলের কথা যাঁদের জন্য “আজ আমার মত দিয়াকে বিশ্ববাসী চিনতে পেরেছে”।
তিনি প্রতিদিন সকাল-বিকাল দু‘বেলা প্র্যাকটিস করে থাকেন।নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে করেন, কারণ মফস্বল শহরে বেড়ে ওঠার পরও তাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ বেশ ইতিবাচক।সবাই তাকে ও তার বাবা মাকে ভালো খেলার জন্য বাহবা দেন। ইতিমধ্যে দিয়া আর্চারি খেলাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন থাইল্যান্ড,স্পেন, প্যারিস, সুইজারল্যান্ড এবং টোকিওতে।তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন দেশে খেলেছেন তার মধ্যে ২০১৯ সালে আইএসএস ইন্টারন্যাশনাল সলিডারিটি খেলা ছিল প্রথম আর সেই প্রথম খেলাতেই তিনি স্বর্ণপদক জয় করেন।তখনও তিনি বাংলাদেশের ন্যাশনাল পর্যায়ের কোন খেলায় পুরস্কৃত হননি।
বিকেএসপি‘র হয়ে ন্যাশনাল পর্যায়ে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে নিয়মিত প্র্যাকটিস করছেন।ভালো খেলার জন্য বিগত তিন বছর ধরে তার বেতন মওকুফও করে দিয়েছে বিকেএসপি।তবে তিনি আক্ষেপ করে ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, বাংলাদেশে শুধু ক্রিকেট ফুটবল নিয়ে সবাই মাতামাতি করে অথচ অন্যান্য খেলাতেও অনেক সম্ভাবনা আছে।সরকার যদি আর্চারি খেলোয়াড়দের প্রতি মাসে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করত এবং সেই সাথে ভাল প্রশিক্ষণ পাওয়া যেত তাহলে আরও ভাল প্রতিভার স্বাক্ষর রাখা যেত। আজ নারীরা পিছিয়ে নেই।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও একজন নারী।তাই দিয়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্চারি খেলার জন্য নিজস্ব ট্রেনিং সেন্টার গঠনের আশা প্রকাশ করেন।যদি ট্রেনিং সেন্টার থাকে তাহলে ভবিষ্যতে আরো ভালো খেলা উপহার দিতে পারবেন।সেই সাথে নতুন খেলোয়াড়ও যুক্ত হবে।
টোকিও অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে কেমন লাগছে জিজ্ঞেস করতেই দিয়া সিদ্দিকী বলে উঠলেন এ এক অন্যরকম অনুভূতি। বাংলাদেশের পতাকা হাতে নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করা সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতোনা।শনিবার আর্চারির মিক্সড খেলা ছিল সেই খেলাতে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৬-০ সেটে হেরে যাওয়ার পরও নবম স্থানে আছে বাংলাদেশ।এ ব্যাপারে টিম লিডার কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদ চপল বলেন বিশ্বের ৩২টি দেশের ৬৪ জন খেলোয়াড় আর্চারিতে অংশগ্রহণ করেছে।মিক্সড টিমে খেলেছে ২৯টি দেশ। তাদের মধ্যে ১৬টি দেশকে বাছাই করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ তাদের মধ্যে নবম অবস্থানে আছে।এই সুখ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।
তিনি আরো বলেন আমাদের অনেক সময় আছে যেকোনো বড় সাফল্যের জন্য সময় প্রয়োজন।অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বাংলাদেশ আর্চারিতে এগিয়ে যাচ্ছে।তিনি দিয়া সিদ্দিকীকে নিয়ে আশা করেন ২০২৪ সালে দিয়া আর্চারিতে স্বর্ণপদক ছিনিয়ে আনবে যদি কঠোর পরিশ্রমকরে।