অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বলিউড তারকা ঋষি কাপুর মারা গেছেন


জনপ্রিয় বলিউড তারকা ঋষি কাপুর আজ সকালে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে মারা গিয়েছেন‌ তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। দীর্ঘ দু'বছর ধরে তিনি অস্থিমজ্জা ক্যান্সার লিউকোমিয়ায় ভুগছিলেন। মাত্র গতকালই ভারতের আর এক প্রিয় অভিনেতা ইরফান খান ক্যান্সারে দীর্ঘদিন ভোগার পর মুম্বাইয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তাঁরা দু'জনেই ছিলেন জীবনের প্রতীক, যদিও দু'জনের ছবির এবং কাজের পরিধি আলাদা ছিল। ঋষি কাপুর বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয় করেছেন এবং তারকা হয়ে থেকেছেন। তিনি ছিলেন সকলের হৃদয়ের রাজা। তাঁকে আদর করে অনেকে বলত লাভার বয়, রোমান্টিক নায়ক। পরের দিকে অবশ্য বয়স হয়ে যাওয়ার পর তিনি বাবার ভূমিকায় অথবা বয়স্ক কোনও লোকের ভূমিকাতেও স্বচ্ছন্দ অভিনয় করেছেন। প্রসঙ্গত একটা আশ্চর্য সমাপতনের উল্লেখ করা যেতে পারে। ইরফান খান জন্মেছিলেন '৬৭ সালে, আর ঋষি কাপুরের মৃত্যু হল ৬৭ বছর বয়সে। পরপর দু'দিনে দু'জন বিদায় নিলেন দু'জনেরই অসুখ একই, ক্যান্সার। দু'জনেই দু'বছর ধরে ভুগেছেন।
যাঁর ধমনীতে কাপুর পরিবারের রক্ত বইছে, তিনি কি অভিনয় জগৎ থেকে দূরে সরে থাকতে পারেন‍? ঠাকুরদা বলিউডের প্রথম সম্রাট পৃথ্বীরাজ কাপুর, আর বাবা বলিউডের একছত্র অধিপতি রাজ কাপুর। এ ছাড়াও ঋষি কাপুরের কাকা শাম্মী কাপুর আর শশী কাপুর বিখ্যাত অভিনেতা। ঋষির স্ত্রী নিতু সিংও অভিনেত্রী ছিলেন। ওঁরা দু'জন ১৫টি ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছেন। ঋষি কাপুরের অভিনয় জগতে পদার্পণ ১৯৭০ সালে কিশোর শিল্পী হিসেবে বাবা রাজ কাপুরের বিখ্যাত বিশাল মাপের ছবি মেরা নাম জোকারে। তখন ডাকনাম চিন্টু দিয়েই তার পরিচয় ছিল, রাজ কাপুরের ছোটবেলার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। তার তিন বছর পরে ১৯৭৩ সালে ঋষি কাপুর প্রথম নায়ক হিসেবে ছবি করলেন, বিপরীতে নায়িকা ডিম্পল কাপাডিয়া‌, ছবির নাম "ববি"। সেই প্রথম ছবিই সুপার ডুপার হিট, অল্প বয়সীদের প্রেমের পথ দেখিয়েছিল যেন। তার সেই বিখ্যাত সিন, কাশ্মীরের গুলমার্গে একটি ছোট কুটিরে দু'জন ঢুকেছেন, ফায়ারপ্লেসে আগুন জ্বলছে, আর তার পরেই সেই বিখ্যাত রোমান্টিক গান, "হাম তুম এক কামরেমে বন্ধ হো, অর চাবি খো যায়ে.." এটা এখনও পর্যন্ত অল্প বয়সের প্রেমের গান হিসেবে চলে আসছে।
৯৩টি ছবিতে অভিনয় করেছেন ঋষি কাপুর। ভালো-মন্দ, সাধারণ, সব মিলিয়ে। কিন্তু কখনওই কিন্তু তিনি নিজের ওই হাসি খুশি চরিত্রটাকে মলিন হতে দেননি। হয়তো রাগী চরিত্রে অভিনয় করেছেন, কিন্তু তারপর বেরিয়েই হাসিমুখ। এই ছিল ঋষি কাপুরের চরিত্র।‌ তাঁর ছেলে রণবীর কাপুর এখন বলিউডে যাকে বলে হার্টথ্রব। তবে তিনিও ঋষি কাপুরের মতো জনপ্রিয়তা পাবেন কিনা বলা মুশকিল। এখনও এ ব্যাপারে বাবাই এগিয়ে আছেন। মারণ রোগ ধরা পড়ার পর নিউ ইয়র্কে এক বছর চিকিৎসার পর গত বছর সেপ্টেম্বরে দেশে ফিরে আসেন। তারপর থেকে কখনো ভালো কখনো মন্দ অবস্থায় কাটছিল। এই অবস্থাতেও কিন্তু তিনি তাঁর মুখের হাসি অম্লান হতে দেননি। তাঁর মৃত্যুর পর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঋষি কাপুর শেষ দিন পর্যন্ত হেসে গিয়েছেন‌। তাই আমরা তাঁকে স্মরণ করবো তাঁর আনন্দময় মূর্তিতে।
আজকের মৃত্যু সংবাদ যখন পাওয়া গেল, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাজনীতি জগতের এবং অভিনয় জগতের প্রত্যেকে হাহাকার করেছেন, পরপর দু'জনকে হারানোর বেদনা আমরা কেমন করে সইবো! ঋষি কাপুরের মৃত্যুতে তাঁর ছবির এক ফ্যান জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের নেতা ওমর আবদুল্লাহ্ ট্যুইটারে কাশ্মীরের গুলমার্গে সেই বিখ্যাত ববি কুটিরের সামনে দাঁড়িয়ে তোলা ঋষির একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, বলিউডের আর এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ঝরে পড়লো। গুলমার্গ তোমাকে কখনো ভুলবে না।
please wait

No media source currently available

0:00 0:04:05 0:00
সরাসরি লিংক


XS
SM
MD
LG