অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমিকরা বৈষম্যের শিকার, নেই নিরাপদ কর্ম পরিবেশ


বাংলাদেশে পেশাগত ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকরা নানা বঞ্চনা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়তই। পাচ্ছে না অধিকার, নেই নিরাপত্তা। তবুও তারা জীবন জীবিকার তাগিদে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। নারী শ্রমিক এবং শ্রমিক নেত্রীদের সাথে কথা বলে নানা সমস্যার কথা বিস্তারিত তুলে ধরছেন আমাদের বগুড়া সংবাদদাতা প্রতীক ওমর।

please wait

No media source currently available

0:00 0:03:37 0:00

শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার্থে বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ সালে শ্রম আইন প্রণয়ন করেন। শ্রম আইনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি আইন হচ্ছে ‘নারী শ্রমিকদের ৬ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য ডে-কেয়ার, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করাতে হবে মালিক পক্ষ থেকে। কিন্তু বেশির ভাগ কলকারখানাগুলোতে এই আইনের প্রয়োগ নেই। নানা সমস্যা মেনে নিয়েই নারী শ্রমিকরা কাজ করে আসছেন।

নারী শ্রমিকরা কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে হোচট খাচ্ছেন উল্লেখ করে নারী শ্রমিক নেত্রী নুর জাহান বেগম বলেন, নারীরা সব জায়গায় হয়রানি হচ্ছে। মালিক পক্ষ থেকে কোন প্রকার সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদেরকে নিয়ে যে সব উন্নয়ন মূলক কাজ করছেন তার পাশাপাশি তিনি যদি নারী শ্রমিকদের দিকে একটু নজর দেন তাহলে কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের যে বৈষম্য, নির্যাতন এসব বন্ধ হবে বলে আমি মনে করি।

নারী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করেন শামীরা আকতার জলি। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম শ্রমজীবী নারীরা তাদের কর্মক্ষেত্রে কেমন আছেন? তিনি বলেন, নারীরা সব সময় অবহেলিত। নারী শ্রমিকরা কলকারখানায় কাজ করছে, অফিস আদালতে কাজ করছে। আমাদের শ্রমবান্ধব সরকার নারীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। সব কাজেই নারী এগিয়ে চলছে। কিন্তু তাদের এই কর্মক্ষেত্রে এসব নারীরা এমন কিছু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে যা তারা বাইরে কাউকে বলতে পারছে না এবং নিজের থেকেও সমাধান করতে পারছে না।

কলকারখানাগুলোতে পুরুষ এবং নারী শ্রমিকদের মজুরির কোন পার্থক্য আপনার দৃষ্টিগোচর হয়েছে কিনা জানতে চাইলে এই শ্রমিক নেত্রী বলেন, কোন কলকারখানায় নারী এবং পুরুষ শ্রমিকদের সমমজুরি দেয়া হয় না। নারীরা আট ঘন্টার জায়গায় বারো ঘন্টা শ্রম দিচ্ছে। তারপরে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে তারা অতিরিক্ত কোন সুযোগ সুবিধা পায় না। এসব বিষয় নিয়ে মালিকদের সাথে কথা বলতে গেলে শ্রমিকরা ভয় পায়। তাদের চাকরি থেকে বাদ দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। আমি এমন কিছু প্রতিষ্ঠানে গিয়েছি নারী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য। অনেক প্রতিষ্ঠানে আমাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি।

নারী শ্রমিকদের বৈষম্য দূর করতে কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে বলে আপনি মনে করেন? এমন প্রশ্নের তিনি বলেন, আমরা যে যে অবস্থায় আছি সবাই সব জায়গা থেকে বাধাগ্রস্থ হচ্ছি। আমরা নেতৃত্ব পর্যায় থেকে বাধাগ্রস্থ হচ্ছি, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র থেকে বাধাগ্রস্থ হচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা এই অধিকার আইন বাস্তবায়ন করতে হলে নারীদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিরোধ করতে হবে। যে যেখানে নির্যাতিত হচ্ছে সেখানেই প্রতিবাদ করতে হবে।

এসব বিষয় নিয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর বগুড়া এর উপমহাপরিদর্শক শাহ মোফাখখারুল ইসলাম ভয়েস অফ আমেরিকা বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষকে সচেতন করতে আমরা নিয়মিত মনিটরিং করি, উদ্বুদ্ধকরণ সভা করি। উদ্বুদ্ধকরণ সভায় মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকপক্ষ দুইপক্ষই থাকে। এরপরও আইন যারা মানে না তাদের জন্য নোটিশ ইস্যু করা হয়।

প্রতিবছর শ্রমিক দিবস আসে। র‌্যালি, আলোচনা সভায় পালিত হয়। কিন্ত শ্রমিকদের কাঙ্খিত অধিকার অধরা থেকে যায়।

XS
SM
MD
LG