অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে চলতি অর্থ বছরের প্রথম থেকেই প্রবাসীদের রেমিট্যান্স কমছে


মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করতে যাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদেরকে বিমানবন্দরে অপেক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে। (ফাইল ফটো- রয়টার্স)
মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করতে যাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদেরকে বিমানবন্দরে অপেক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে। (ফাইল ফটো- রয়টার্স)

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ করে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিঁ'র প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের প্রবাহ গত কয়েক মাস যাবত ক্রমাগত ভাবে কমছে।

করোনা মহামারি শুরুর পর দেশের অর্থনীতি যখন সংকটের মুখে পড়েছিল তখন প্রবাসীদের পাঠানো রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স অর্থনীতিকে শক্তি যুগিয়েছিল। তবে গত জুলাই মাস থেকে শুরু হওয়া চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে হঠাৎ করেই ধীরগতি দেখা দিয়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহে যা সদ্য বিদায়ী অক্টোবর মাসেও অব্যাহত রয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক হাল নাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এতে দেখা যায় অক্টোবর মাসে দেশে ১৬৫ কোটি ডলারেরও কম রেমিট্যান্স এসেছে যা গত ১৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। বাংলাদেশ ব্যাকের হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর এই চার মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৭০৫ কোটি ডলার যা ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৮৮১ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন আগের সঙ্গে তুলনা করলে বর্তমানে রেমিট্যান্স কিছুটা কম আসছে। তবে করোনার সময়ে বিভিন্ন কারণে রেমিট্যান্স বেড়েছিল বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন লম্বা সময় করোনার কারণে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রবাসীরা তাদের জমানো অর্থ পরিবার-পরিজনের নিকট পাঠিয়েছিলেন। সে সময় স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের মাধ্যমে টাকাগুলো দেশে এসেছে যার ফলে রেমিট্যান্স বেড়েছে।

তিনি বলেন বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় বিভিন্নভাবে দেশে টাকা আসছে। প্রবাসীরা এখন নিয়মিত দেশে আসা যাওয়া করছেন এবং তাঁরা টাকাগুলো ব্যাংক চ্যানেলে না পাঠিয়ে নিজেরা সঙ্গে করে নিয়ে আসছেন অথবা পণ্য ক্রয় করে নিয়ে আসছেন যার ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন বিশ্বব্যাপী করোনা যখন তুঙ্গে তখন প্রবাসীদের কর্মস্থল বন্ধ থকায় একটা অনিশ্চিত পরিস্থিতির কারনে তারা তাঁদের জমানো অর্থ পাঠাতে হুন্ডির মত অবৈধ চ্যানেলগুলোর ওপর আস্থা রাখতে না পেরে বৈধ পথে ব্যাংকের মাধ্যমে তা দেশে পাঠানোর কারনে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছিল। তাঁদের মতে বর্তমানে পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় বৈধ পথে ছাড়াও কেউ কেউ হুন্ডির মাধ্যমে ও অনান্য উপায়ে টাকা পাঠানোর ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এ প্রসঙ্গে ভয়েস অফ অ্যামেরিকাকে বলেন করোনাকালে দেশে-বিদেশে নানা বিধি নিষেধ আরোপের ফলে প্রবাসীরা বৈধ পথে ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানোর কারণেই রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে গিয়েছিল । এটা ছিল একটি সাময়িক ঊর্ধ্বগতি উল্লেখ করে তিনি বলেন অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রবাসীদের হুন্ডির আশ্রয় নেয়ার প্রবণতা অনেক আগে থেকেই ছিল এবং এখন পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সেই পুরানো রাস্তায় হয়ত কেউ কেউ ফিরেছেন। তিনি বলেন করোনাকালে অনেকে চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরেছেন যার ফলে প্রবাসী আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ মনে করেন যারা প্রবাসে এখনও আছেন তাদের কর্মস্থলের আয় স্বাভাবিক হলে এবং প্রবাসে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সরকার করতে পারলে রেমিট্যান্স প্রবাহও বাড়বে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিক উজ জামান বলেন দেশের প্রবাসী আয় বাড়াতে হলে বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠাতে হবে। বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশে যায় তাঁদের অধিকাংশই অদক্ষ শ্রমিক বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন প্রতিবেশী দেশগুলো দক্ষ কর্মী রপ্তানি করে বেশী টাকা আয় করছে। তিনি বলেন রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হলে বাংলাদেশকেও দক্ষ কর্মী তৈরি করতে হবে এবং করোনাকালে বিদেশে তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সরকারকে আরও সচেষ্ট হতে হবে।

XS
SM
MD
LG