অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষায় বাংলাদেশ ও জাতিসংঘকে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের 


কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে প্রহরায় নিরাপত্তা কর্মীরা - এএফপি
কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে প্রহরায় নিরাপত্তা কর্মীরা - এএফপি

ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় বাংলাদেশ ও জাতিসংঘকে জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটি বলেছে, এসব ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা হুমকি ও সহিংসতার মুখোমুখি।

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলছে, সশস্ত্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠীর কথিত সদস্যরা তাদের চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপরাধের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে টার্গেট করছে। গত ২৯শে সেপ্টেম্বর কুতুপালং ক্যাম্পে রাত সাড়ে আটটার দিকে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ মুখোশধারী কতিপয় অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন। ৪৬ বছর বয়স্ক মুহিবুল্লাহ ছিলেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস-এর চেয়ারম্যান। ইতিমধ্যেই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পাঁচজনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

কিন্তু মুহিবুল্লাহর সহযোগীরা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন, হত্যার সঙ্গে অভিযুক্তরা এখনো ক্যাম্পে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।তারা আরও জানিয়েছেন, ক্যাম্পে সশস্ত্র গোষ্ঠী বারবার তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তেমন কোনো সাড়া পাননি।

তার সংগঠনের কর্মীরা বলেছেন, এই হুমকিগুলো ছিল আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি এবং অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর। যারা তার নেতৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। মৃত্যুর কয়েক মাস আগে মুহিবুল্লাহ ধারাবাহিকভাবে হুমকি পেয়ে আসছিলেন। আগস্ট মাসে তিনি বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কাছে একটি চিঠি পাঠান। এই চিঠির কপিগুলো কক্সবাজারের ক্যাম্প-ইনচার্জ কর্মকর্তা এবং বিশেষ শাখার কাছে পাঠান। হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি বলেছিলেন এই চিঠিতে। আরসার নামও তিনি উল্লেখ করেছিলেন।

জুলাই মাসে মুহিবুল্লাহ গ্রুপের একজন সদস্যকে বলা হয়, যদি সে গ্রুপের অফিসে ফিরে আসে তখন তাকে হত্যা করা হবে। খুব শিগগিরই আমরা তোমার নেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যা করবো। মুহিবুল্লাহর সহযোগীরা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানান, এই চিঠির কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ পুলিশের এক কর্মকর্তা একটি বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, তারা মুহিবুল্লাহর কাছ থেকে কোনো হুমকি বা সুরক্ষার বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন পাননি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রোহিঙ্গাকর্মী এবং মুহিবুল্লাহর পরিবারের সদস্যসহ ৯ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তারা বলেছেন, কর্তৃপক্ষ মুহিবুল্লাহর উদ্বেগগুলো পর্যাপ্তভাবে তদন্ত করেনি। তাকে এবং তার দুর্বল কর্মীদের সুরক্ষাও দেয়নি। যদিও বাংলাদেশ সরকার শিবিরে অনেক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছে।

একজন কর্মীর বরাত দিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, নিরাপত্তাকর্মীরা শরণার্থীদের রক্ষা করার পরিবর্তে তাদের দমন ও নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত ছিল। মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, সশস্ত্র গোষ্ঠীর নতুন করে হুমকি এবং সহিংসতার অন্যান্য ঝুঁকির কারণে মুহিবুল্লাহ হত্যার পর থেকে অন্তত এক ডজন কর্মী জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা, ইউএনএইচসিআর এবং বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের কাছে সুরক্ষা চেয়েছেন। মানবিক কর্মীরা জানান, ক্যাম্পের ভেতরের পরিবেশ রোহিঙ্গা কর্মীদের জন্য ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, মিয়ানমারের গণহত্যা থেকে মুহিবুল্লাহ তার আশ্রয়স্থলে নিহত হওয়া রোহিঙ্গা নেতাকর্মীরা প্রতিদিন যে ঝুঁকির সম্মুখীন হয় সেটাই প্রমাণ করে। এজন্য রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে আন্তর্জাতিক সহায়তায় জরুরি ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, মুহিবুল্লাহ নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছিলেন এমন তথ্য তার জানা নেই।

ওদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন মঙ্গলবার মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহর হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে কক্সবাজারে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে সরকার সতর্ক রয়েছে জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, সেখানে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটতে দেয়া হবে না। ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।

তিনি বলেন, মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে আইনসম্মতভাবে আন্দোলন করছিলেন। কেউ কেউ হয়তো এটা পছন্দ করেননি। সেজন্য তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। যারা তাকে মেরেছে, আমরা তাদের শাস্তি দেব, যাতে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। রোহিঙ্গাদের সরকার পূর্ণ নিরাপত্তা দিচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ ঘটনার পর ক্যাম্পের নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে।

XS
SM
MD
LG