অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে ট্রাভেল ব্যবসায় নারীরা এগিয়ে আসছেন


ছবিতে নাজমুননেসা রিপাকে দেখা যাচ্ছে। ছবি সৌজন্য: নাজমুননেসা রিপা
ছবিতে নাজমুননেসা রিপাকে দেখা যাচ্ছে। ছবি সৌজন্য: নাজমুননেসা রিপা

রক্ষণশীল সমাজে অনেক পরিবারেই নারী একা বাইরে বেড়াতে যেতে পারে না। যদি বা কেউ একা বাইরে যান, তাকে দ্রুত বাড়িতে ফিরে আসতে হয়।তবে নিরাপত্তার ব্যাপার তো আছেই। বাংলাদেশে ভ্রমণ বা ট্রাভেল ব্যবসায় এখন মেয়েরাও এগিয়ে আসছেন।

নাজমুননেসা রিপার বাসা ঢাকার মিরপুর এলাকায়। সংসারে বাবা মা ও তিন বোন। রিপা জানালেন কিভাবে তিনি ট্রাভেল ব্যবসা শুরু করেছিলেন, সেই অভিজ্ঞতার কথা।

“আমি ২০১১ সালে যখন বিবিএ পড়ি তখন থেকে ভ্রমণ করার বিষয় নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করি। বিবিএ যখন ফাইনাল ইয়ারে তখন ইউনির্ভাসিটি থেকেএকটা ট্যুরে যাই কক্সবাজারে।কক্সবাজার ভ্রমণের পর ২০১৩ সালে আমরা কয়েকজন বান্ধবী মিলে বিভিন্ন জেলায় ভ্রমণ করা শুরু করলাম, ঢাকার কাছাকাছি গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ ও সাভার এই সব জায়গাগুলোতে। সকালে বাসা থেকে বের হয়ে ঘুরে আবার সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরে আসতাম। এভাবেই ভ্রমণের আগ্রহটা আরো বেড়ে যায়। আস্তে আস্তে পরিবার থেকেও মোটামুটি সহযোগিতা পেলাম”।

২০১৮ সাল থেকে রিপারা দু’বোন মিলে ট্রাভেল নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। রিপা বলেন,আমাদের ট্রাভেলসের নাম চরকা ট্যুর এন্ড ট্রাভেল। আমার বোন অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় সেও ভ্রমণ ব্যবসা থেকে সরে যায়। এখন আমি একাই ব্যবসা চালাচ্ছি।

প্রথমে ৭ থেকে ৮ জন নিয়ে ভ্রমণ শুরু করি। এখন ১২ জন অথবা ২৪ জনকে নিয়ে ট্যুর করছি দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে যেমন, রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালী, কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওড়, প্রকৃতি কন্যা হিসাবে পরিচিত সিলেটের জাফলং, সুনামগঞ্জ জেলার টাঙ্গুয়ার হাওর এবং মহেড়া জমিদার বাড়ি এভাবে প্রায় ২৯টি স্থানে গিয়েছি।

রিপা শুরুর দিকটায় এই ব্যবসায় তেমন লাভ করতে পারত না। কারণ তখন ব্যবসার বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝত না। এ নিয়ে রিপা বলেন, প্রথম ৫/৬টা ট্রিপ লাভ হয়নি। এক সময় শুধু মেয়েদের নিয়ে ট্যুর করতাম এখন ছেলে-মেয়ে সবাই যেতে পারছে। ছাত্রছাত্রী এবং নারীদের জন্য আমাদের ডিসকাউন্টের ব্যবস্থাও আছে।

চরকা ট্যুর এন্ড ট্রাভেলের বুকিং নিয়ে রিপা বলেন, “আমাদের সাথে ট্যুর করার নিয়ম হচ্ছে বুকিংয়ের সময় ৪০% বা ৫০% টাকা এডভান্স করতে হয়। যে দিন আমরা যাত্রা শুরু করি তার আগে পুরো টাকা পরিশোধ করতে হয়। যেহেতু আমাদেরও হোটেল বুকিং ও গাড়ী ভাড়া সব কিছুই এডভান্স দিতে হয়। কেউ যদি ট্যুর বাতিল করতে চায় সে ক্ষেত্রে ট্রাভেল করার ২দিন আগে আমাদের নিশ্চিত করতে হয়। তখন আমরা তাদের টাকা ফেরত দেই”।

রিপা বলেন, এই ট্রাভেল ব্যবসা নারীদের জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং একটা ব্যবসা। “আমার সাথে কোন পুরুষ নাই বলে আমি ব্যবসাটা বড় করতে পারছি না। আমরা যখন কোন দল নিয়ে নতুন কোন দর্শনীয় স্থানে যাওয়ার চিন্তা করি সেখানে হোটেল বুকিংয়ের জন্য কথা বলতে গেলে তারা আমাকে অনেক কিছু প্রশ্ন করে। অনেক প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়। তারা আমাদের নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বিশ্বাস করতে চায় না। তারা বলে নারী হয়ে আবার ট্রাভেল গ্রুপ নিয়ে আসবে কিভাবে? যাদের নিয়ে ট্রাভেল করতে যাই তাদের মধ্যেও প্রথমে সংকোচভাব বোঝা যায়”।

অন্যান্য ব্যবসার মত করোনা মহামারীর সময় রিপার ট্যুর ব্যবসাও বন্ধ ছিল।রিপা বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আবার ভ্রমণকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আমরা প্রতি মাসে তিনটা ট্যুর করি। সপ্তাহ শেষে তিন দিনের ট্যুরগুলো নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।সব ট্যুরে আমার যাওয়া সম্ভব হয় না কারণ আমি একটা কোম্পানীতে ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছি পাশাপাশি ট্রাভেল ব্যবসাও চালিয়ে যাচ্ছি।

রিপার এই ব্যবসা করে প্রতি মাসে সমস্ত খরচ শেষে ২০/৩০হাজার টাকা লাভ থাকে।তিনি যেহেতু এখনও অবিবাহিত তাই একা থাকায় ব্যবসা এবং চাকরি করে মোটামুটি চলে যাচ্ছে।

রিপা বলেন, “বাংলাদেশে নারীদের ভ্রমণ করা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও আমাদের কোন সমস্যা হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা চাই তাই নারীদের ভ্রমণে কোন দুশ্চিন্তা নেই। আজকাল বাংলাদেশের নারীরা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী করে তুলছে। ঘরে বাইরে সমান তালে কাজ করছে। তাই আমি বলব আমরা নারী আমরাই পারি”।

( রিপোর্ট: নাসরিন হুদা বিথী )

XS
SM
MD
LG