ইউক্রেনের কাছে রাশিয়ার সৈন্য সমাবেশকে নিয়ে ক্রমবর্ধমান সতর্কতার মধ্যেই বৃহষ্পতিবার বিকেলে প্রায় এক ঘন্টা ধরে দুই প্রেসিডেন্ট, জো বাইডেন এবং ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। ইউক্রেনকে নিয়ে এই সংকট সম্প্রতি আরও গভীর হয়েছে কারণ ক্রেমিলন নিরাপত্তার বর্ধিত নিশ্চয়তা চাইছে এবং তার দাবির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
পুতিনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকফ বলেছেন পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে কিংবা ইউক্রেনের উপর আক্রমণ চালালে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকিকে বাইডেন আবারও নিশ্চিত করেছেন । এ ব্যাপারে বাইডেন নিজের তরফ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন , যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরণের পদক্ষেপ দু দেশের সম্পর্কে সম্পুর্ণ ভাঙ্গন ধরাবে।
ইউরি উশাকফ বলেন , “এটি হবে বড় ধরণের ভুল যার পরিণতি হবে মারাত্মক”।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতেই এই ফোনালাপটি ১০ জানুয়ারী জেনেভায় অনুষ্ঠিতব্য উচ্চ-পর্যায়ের আলোচনার আগেই অনুষ্ঠিত হলো। হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা বলেছেন বৃহষ্পতিবারের এই ফোনালাপ শুরু হয় ওয়াশিংটন সময় বিকেল ৩:৩৫ মিনিটে এবং শেষ হয় ৫০ মিনিট পরে মস্কোর সময়ে মধ্যরাতের পর। এই দুই নেতার মধ্যে এই মাসে এটি ছিল দ্বিতীয় ফোনালাপ।
রাশিয়া পরিষ্কার করেই বলেছে যে তারা এ ব্যাপারে লিখিত প্রতিশ্রুতি চায় যে ইউক্রেনকে কখনই নেটোতে যোগ দিতে অনুমতি দেওয়া হবে এবং ঐ জোটের সামরিক সাজসরঞ্জাম ঐ সাবেক সোভিয়েট প্রদেশে মোতায়েন করা হবে না। বাইডেন প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে এই দাবিগুলি কার্যকর হতে পারে না।
এই ফোনালাপের আগেই হোয়াইট হাউজ জানায় যে রাশিয়া যদিও প্রায় ১,০০০০০ সৈন্য ইউক্রেনের দিকে নিয়ে এসেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও নেটোর কাছ থেকে দাবি আদায়ের জন্য এটি আরও বাড়াতে পারে তবুও বাইডেন পুতিনকে বলবেন যে কুটনৈতিক পথ খোলা রয়েছে। ঐ দাবিগুলো জেনেভা বৈঠকে আলোচনা করা হবে তবে এটা এনও পরিস্কার নয় যে এই সংকট মোচনের জন্য বাইডেন পুতিনকে কি ছাড় দিতে পারেন।
নিরাপত্তা বিষয়ে খসড়া নথিপত্রে মস্কো এই দাবি করেছে যে নেটো যে ইউক্রেনের সদস্যতার আবেদন নাকচ করে দেয় এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ থেকে তার সৈন্য সরিয়ে নেয়।
ইউক্রেনের ব্যাপারে পুতিন যে ধরনের নিশ্চয়তা চাইছেন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা তা নাকচ করে বলেছেন যে নেটোর নীতি হচ্ছে উপযুক্ত রাষ্ট্রগুলোকে সদস্য পদ দিতে তারা প্রস্তুত। তবে রাশিয়ার উদ্বেগ নিয়ে কথা বলতে তারা রাজি হয়েছেন। বাইডেন যিনি এ সপ্তাহটি তার নিজের রাজ্য ডেলাওয়ারে কাটাচ্ছেন , উইলমিংটনের কাছে তার বাড়ি থেকে পুতিনের সঙ্গে কথা বলেন। হোয়াইট হাউজ প্রেসিডেন্টকে পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার ছবি বিতরণ করে।
এই ফোনালাপের আগে পুতিন নব বর্ষ এবং খ্রীষ্টমাসের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাইডেনকে একটি টেলিগ্রাম পাঠান । অন্যান্য নেতাকে পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তার সঙ্গে এটিও ক্রেমলিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। বাইডেনকে পাঠানো ঐ বার্তায় পুতিন লেখেন, “আমি নিশ্চিত জুন মাসে জেনেভায় শীর্ষ বৈঠকে নেওয়া আমাদের সমঝোতা এবং পরবর্তী যোগাযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি এবং পারস্পরিক সম্মান এবং জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর ভাবে রুশ-আমেরিকান সংলাপ শুরু করতে পারি”।