বাল্য বিবাহ নথিভুক্তকরণ (সংশোধনী) বিল বাধ্যতামূলকভাবে চালু হচ্ছে ভারতের রাজস্থানে , এই খবর সামনে আসার পরে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল নানা মহলে। রাজস্থান সরকার কিভাবে বাল্য বিবাহকে সমর্থন করছে সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সোমবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট জানিয়েছেন, বাল্য বিবাহ নথিভুক্ত আইন চালু হচ্ছে না রাজস্থানে। বরং বিলটি রাজ্যপালের কাছে ফেরত পাঠানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে।
গত মাসে রাজস্থান বিধানসভায় বাল্য বিবাহ নথিভুক্তকরণ (সংশোধনী) বিল পাশ হয়। সেই বিলে বলা হয়, ১৮ বছরের কম কোনও নাবালিকার বিয়ে হলে তার ৩০ দিনের মধ্যে বিবাহ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য অভিভাবককে বাধ্যতামূলকভাবে সরকারের কাছে জমা করতে হবে। বিলের প্রতিবাদে বিধানসভা ওয়াকআউট করে বিজেপি। রাজস্থান সরকারের আইনি সংশোধনীকে কালা দিন বলেও উল্লেখ করেন বিরোধীরা।
রাজস্থান বিধানসভায় আইনি সংশোধনে বলা হয়, বিয়ের সময় পাত্রীর বয়স যদি ১৮ বছরের নীচে হয় এবং পাত্রের বয়স ২১ বছরের নীচে হয়. তাহলে বিয়ের ৩০ দিনের মধ্যে বাবা-মা বা অভিভাবককে রেজিস্ট্রেশন অফিসে জানাতে হবে। ২০০৯ সালের বিবাহ রেজিস্ট্রেশন আইনের ৮ নম্বর ধারায় সংশোধনী আনা হয়। নাবালিকা বিয়ের যাবতীয় তথ্য বাধ্যতামূলকভাবে নথিভুক্ত করার কথাও বলা হয় ওই সংশোধনীতে।
এই বিল পাশ হওয়ার পরেই অভিযোগ ওঠে রাজস্থানের কংগ্রেস সরকার জাতপাতের রাজনীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। তাই নাবালিকা বিয়েকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। বিরোধীদের অভিযোগ খারিজ করে সেই সময় কংগ্রেস সরকার দাবি করেছিল, বাল্য বিবাহকে বৈধতা দেওয়ার জন্য এই বিল নয়। বিয়ের সার্টিফিকেট একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি। বিয়ের আইনি নথিভুক্তকরণ না হলে, স্বামীর মৃত্যু পরে বিধবা স্ত্রী সমস্ত সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।
তারপরে সোমবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গেহলট বলেছেন, সরকার কোনওভাবেই বাল্য বিবাহকে প্রশ্রয় দেবে না। সুপ্রিম কোর্ট সব ধরনের বিয়েকে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল। তাই এই বিল আনা হয়। কিন্তু এখন বিলটি ফেরত পাঠানোর আবেদন জানানো হয়েছে।
রাজস্থানে আগে থেকেই নাবালিকা বিয়ের চল রয়েছে। বাল্য বিবাহ বন্ধ করার জন্য নানাভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে নাবালিকা মেয়েদের অভিভাবকদের বোঝানোর চেষ্টা করছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এর মধ্যেই এই সংশোধনী বিল পাশ করার ফলে বাল্য বিবাহ একপ্রকার বৈধতা পাবে বলেই আশঙ্কা করা হয়েছিল। রাজস্থানের বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহোটি বলেছেন, বাল্য বিবাহ নথিভুক্তকরণ বিল চালু হলে, নাবালিকা বিয়ে আর আইনের চোখে অপরাধ হিসেবে গণ্য হত না। বিধানসভার ইতিহাসে এই বিল এক কালো অধ্যায় হয়ে থেকে যেত।