অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

করোনাভাইরাস ঠিক কি পরিমান গুরুতর?


এভাবেই অক্লান্তভাবে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন ইউরোপের হাসপাতালের অগণিত ডাক্তার, নার্সরা। প্রতিদিন হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার বাইরে রোগীদের ঢল নামতে দেখেছেন। আতংকিত হয়েছেন কিন্তু পরখনেই সেই ভয় ঝেড়ে ফেলে পেশাদারিত্বের বর্ম পড়ে ময়দানে নেমে পড়েছেন।

করোনাভাইরাস ঠিক কি পরিমান গুরুতর, একজন সুস্থ মানুষকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে তা অনেকেই অনুধাবন করতে পারছেন না। তাদের অবগতির জন্য, প্রশাসন, সংবাদ মাধ্যম ও চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন সে সব রোগীদের বর্তমান অবস্থার কথা যারা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন। বারংবার বলা হচ্ছে, আপনার একটু সাবধানতা, সচেতনতা বাঁচাতে পারে অনেক প্রাণ।

জেরোম পিনোট ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ইউরোপীয় হাসপাতাল-জর্জেস পম্পিডু এর পালমনোলজি বিভাগে কাজ করেন। এই হাসপাতালের প্রায় অর্ধেকটি করোনভাইরাস রোগীদের জন্য সংরক্ষিত। পিনোট বলছেন, হাসপাতালের সংরক্ষিত করোনাভাইরাস শয্যাগুলির এক তৃতীয়াংশ বর্তমানে খালি রয়েছে তবে ফ্রান্সে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১৪,৪৬০জন মারা গেছে ৫৬২জন।জেরোম পিনোট বলেন,একজন কভিড -১৯ রোগী সুস্থ হতে সময় নেয়। এর মধ্যে আমরা যারা সেবা দিচ্ছি তারা ঐ ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারি।আমি মাস্ক পরেছি কারন একজন কভিড -19 রোগীর সংস্পর্শে গিয়েছি। আমার স্ত্রী এবং আমার ছয় মাস বয়সী ছেলের কাছ থেকে নিজেকে আলাদা করে রেখেছি। আমার এখনো পর্যন্ত কোনো উপসর্গ দেখা দেয়নি। আরও দশদিন আমাকে আলাদা থাকতে হবে এবং এই সময়টা অত্যন্ত চাপ, উদ্বেগ, ক্লান্তিতে কাটবে।

ডাঃ রোমানো পাওলুচি, ইতালির করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সম্মুখভাগে কাজ করা অনেক চিকিৎসকের একজন। তিনি বলছিলেন পৃথকীকরণের ব্যবস্থার কারণে প্রিয়জনদের বিদায় না জানিয়ে চলে যেতে হচ্ছে অনেক রোগীদের। আর এই দৃশ্য ইতালির ক্রেমোনা শহরের অগ্লিও পো হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের মন দুর্বল করে দিচ্ছে। এই ছোট্ট হাসপাতালে ৭০ জন ডাক্তার দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন। ইতালির লম্বার্ডি অঞ্চলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।ডাঃ রোমানো পাওলুচি বলেন, আমরা আমাদের শক্তির শেষ পর্যায়ে আছি। আর এটি হলো ছোট একটি হাসপাতাল। আমাদের ধারণ ক্ষমতা শেষ। আমাদের পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই। নেই পর্যাপ্ত কর্মী। তার ওপর যে কর্মীরা কাজ করছেন তাদের মধ্যে থেকে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।আমি অনেক মানুষকে মারা যেতে দেখেছি। প্রায় সত্তর শতাংশ মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

করোনাভাইরাস ঠিক কি পরিমান গুরুতর?
please wait

No media source currently available

0:00 0:05:40 0:00

লম্বার্ডির নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের প্রধান আন্তোনিও পেসেন্তি। তিনি সবাইকে প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।বলছেন জনগণের অসাবধানতার কারণে অনেক ডাক্তার নার্স অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এতে করে হাসপাতালে কর্মীদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এই রোগের এখনো কোনো চিকিৎসা নেই।আন্তোনিও পেসেন্তি বলেন, আইসিইউতে গুরুতর রোগীদের মধ্যে ৫০শতাংশ রোগী ৬৫ বছরের উর্ধে। তবে এর অর্থ বাকী ৫০শতাংশ ৬৫ বছরের কম বয়সী। এবং আমাদের বর্তমান রোগীদের মধ্যে ২০-৩০ বছর বয়সী রয়েছেন জাদের অনেকের অবস্থা গুরুতর। এবং যেহেতু কম বয়সীরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারি তাই তাদের বেঁচে থাকার হার বেশী।

একজন চিকিত্সা বিশেষজ্ঞ তার দলের সাথে প্রায় ৫০ দিন ধরে চীনের হুবাই প্রদেশের রাজধানী উহানের একটি হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ COVID-19 রোগীদের চিকিত্সা দিচ্ছেন।গুয়াংজু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম অনুমোদিত হাসপাতালের ভাইস ডিরেক্টর ঝাং নুফু ২ ফেব্রুয়ারি সাতজন সহকর্মী সঙ্গে নিয়ে ওহানের ইউনিয়ন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের দায়িত্ব নেন।নতুন পরিবেশ এবং গুরুতর অসুস্থ রোগীদের মুখোমুখি, ঝাং বলেন তাদের প্রথমে প্রচুর চাপ ছিল।ঝাং চীনের বিখ্যাত শ্বাসযন্ত্র বিশেষজ্ঞ ঝং নানশানের নেত্রিত্তে কাজ করছেন।ঝাং নুফু বলেন,আমাদের যা প্রয়োজন তা সরকার সরবরাহ করে, তাই আমরা আরও যত্ন সহকারে রোগীদের বিজ্ঞান ভিত্তিক চিকিত্সা দিতে পেরেছি। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের বাঁচাতে এবং মৃত্যুহার হ্রাস করতে পেরেছি।

ইউরোপের বর্তমান চিত্র হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের আগামী চিত্র, বলছেন সেখানকার চিকিৎসকরা। তাই সময় থাকতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন তারা।

সানজানা ফিরোজের প্রতিবেদন।

XS
SM
MD
LG