করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব খুব দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে।কয়েকটি দেশ তাদের সীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এখন কঠোর নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে মাহমারী রোধ করা সম্ভব নয়।ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েশনের মেডিক্যাল এডভাইযার ডঃ ডেভিড পাওয়েল ভ্রমণকারীদের ভ্রমনের বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে পরামর্শ দিয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে সবচাইতে সংক্রমিতের সংখ্যা যে দুটি দেশে, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া, এ দুটি দেশ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে যার কারণে প্রতিদিনের যে সংখ্যাটি তা আমরা কমতে দেখছি। তবে এই মুহূর্তে ইতালির পরিস্থিতি বেশ গুরুতর। এই মুহূর্তে আমরা দেখতে পাচ্ছি চীনে অসুস্থদের এক তৃতীয়াংশের ও কম এখন আর বাকি দুই-তৃতীয়াংশ অন্যান্য আক্রান্ত দেশগুলো মিলিয়ে।
সীমান্ত বন্ধ করলে হয়তো প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব কিন্তু তা করা সম্ভব নয়। ভ্রমনের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা সম্ভব নয় বলেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সে নির্দেশনা দেয়নি। এবং এর আগে যখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এমন একটি নির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা করে বিশেষ করে যখন চীনে এই প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, তখন বিভিন্ন দেশ তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিল।তবে এখন দেখা যাচ্ছে, পুরো বিশ্বে এখন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।
যাদের ভ্রমনের পরিকল্পনা আছে, তাদের জন্য বলছি, কোনো প্রকার অসুস্থ বোধ করলে ভ্রমন না করাই ভালো।যারা বয়স্ক তারা অনেক ভাবনা চিন্তা করে যেনও ভ্রমন করেন। কিন্তু যদি করতেই হয় সে ক্ষেত্রে পরিস্কার পরিচ্ছনতা মেনে চলা প্রয়োজন। যে ধরণের নির্দেশনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দিচ্ছে, হাত ধোওয়ার বিষয়টি, কাশি হলে টিস্যু মুখে চেপে ধরে কাশি দেওয়া এবং ঐ টিস্যু বিনে ফেলে দেয়া। অসুস্থ মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকা।
সিঙ্গাপুরে আইএটার একটি সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা মিলিত হন এবং এক দল বলছিলেন, তাপমাত্রা এই ভাইরাসের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে আবার অন্য একটি দল মনে করেন প্রভাব ফেলবে না।তবে যেহেতু এই ভাইরাসটি নতুন তাই এর গতি বা রুপ সম্পর্কে পুরোপুরি জানা সম্ভব হচ্ছে না।
এই ভাইরাস খাবার দ্বারা সংক্রমিত হয়না। এটি ফুস্ফুসজনিত একটি রোগ যা কাশির ফোঁটা থেকে অন্য মানুষ সংক্রমিত হয়। আপনার পাশে কেউ যদি টিস্যু ব্যবহার না করে হাতের ওপর কাশি দেয় তাহলে সে কাশির ফোঁটাগুলো তাঁর হাতে পড়ছে। এবং ভাইরাসটি তাঁর হাতে রয়ে যাচ্ছে। এরপর তিনি যদি আপনার সঙ্গে করমরদন করেন তাহলে ভাইরাসটি আপনার ভেতর সংক্রমিত হয়ে যাবে। এই ভাইরাসের স্থায়িত্ত কতদিন তা এখনো বোঝা সম্ভব হচ্ছে না।
এই ভাইরাসটি কোন ধরণের পাত্রে গিয়ে পড়ছে তাঁর ওপর নির্ভর করছে কত সময় ধরে বেঁচে থাকে। তবে আদ্র এবং তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে। তবে আপনি যদি হাত পরিসজার রাখেন তাহলে ভাইরাসটি আপনার হাতে থাকতে পারবেনা। অবশ্য মুখে হাত না দেওয়ার বিষয়টি আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে।
অত্যাধুনিক উড়োজাহাজগুলোতে বাতাসের সরবরাহ খুব ভালো। কিছুক্ষন পরপর ভেতরের বাতাস সতেজ করা হয়। যেহেতু বারবার বাতাস সতেজ করা হয়ে থাকে সে কারণে ৯৯.৯৯৭ শতাংশ ভাইরাস বাইরে বের করে দেয়া সম্ভব হয়। তবে অবশ্যই নিজের স্বার্থে সতর্কতা অবলম্বন করতেই হবে।
কাশি এবং জোর দিয়ে শুরু এই ভাইরাস খুব দ্রুত সংক্রমিত করে অন্যান্যদের। তবে চিন্তার বিষয় হচ্ছে যখন একজন আক্রান্ত ব্যক্তি হালকা অসুস্থ বোধ করেন ঠিক ঐ সময়টিতেই তিনি অন্যান্যদের সংক্রমিত করছেন। তাই খুব বেশী প্রয়োজন এ দিকে নজর রাখা। যখনি আপনার শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়বে, হালকা কাশি হবে, দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আলাদা করে ফেলুন।
ডঃ ডেভিড পাওয়েলর সঙ্গে কথা বলেছেন সাঞ্জানা ফিরোজ।