অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

আন্তর্জাতিক বাঘ দিবসঃ বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা হ্রাসে বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ


ফাইল-ঢাকার মিরপুর চিড়িয়াখানায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ১ জুন, ২০০৩।
ফাইল-ঢাকার মিরপুর চিড়িয়াখানায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ১ জুন, ২০০৩।

বাঘের প্রাকৃতিক আবাসস্থল রক্ষা এবং তাদের সংরক্ষণ ও সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য সর্বস্তরে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস।

বিপন্ন প্রায় এই প্রাণীটির অস্তিত্ব এখনও বিশ্বের যে সকল দেশে টিকে রয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের জাতীয় পশু হচ্ছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার যার আবাসস্থল দেশটির দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে। প্রায় দশ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার অংশ বাংলাদেশে পড়েছে বাকিটা রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে। বাঘ বিশেষজ্ঞদের মতে একক জায়গা হিসেবে সুন্দরবনেই এক সময় পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বাঘ ছিল। ২০০৪ সালে বন বিভাগের জরিপে পায়ের ছাপ গণনা করে বলা হয়েছিল সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৪৪০টি।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির বাঘ প্রকল্পের আওতায় ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে ২০১৫ সালে করা শুমারিতে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা নেমে আসে ১০৬টিতে যা ২০১৮ সালের শুমারিতে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৪টি।

তবে বাঘ রয়েছে এমন ১৩টি দেশের নেতারা ২০১০ সালে মিলিত হয়েছিলেন রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে যখন তাঁরা ১২ বছরের মধ্যে নিজ নিজ দেশে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। সেই সময় প্রায় শেষ হতে চললেও বাংলাদেশ তার লক্ষ্য অর্জনে শুধু পিছিয়েই নাই বরং ২০০৪ সালে সুন্দরবনে যে পরিমাণ বাঘ ছিল মাত্র ১৪ বছরে তা থেকে ৩২৬টি বাঘ কমে যাওয়াকে উদ্বেগের বিষয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সুন্দরবনে বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন অবশ্য সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন বাঘসহ বন্য প্রাণীর সুরক্ষায় সুন্দরবনে টহল জোরদার করা হয়েছে। তিনি বলেন বন বিভাগ বাঘ সুরক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজ চালানোর পাশাপাশি বাঘ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর বংশ বিস্তারের লক্ষ্যে সুন্দরবনে অভয়ারণ্য এলাকা দ্বিগুণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে বাঘের বংশ বিস্তারের গতি এত ধীরে হওয়ার কারণ সম্পর্কের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ ফিরোজ জামানের কাছে ভয়েস অফ আমেরিকার পক্ষে জানতে চাইলে তিনি বলেন সুন্দরবনে বাঘের খাবারের যে সংস্থান রয়েছে তাতে বাঘের সংখ্যা এর চেয়ে বেশি হওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন বাঘের যে মুল খাবার হরিণ এবং বন্য শুকর সেগুলোকে চোরা শিকারিরা হত্যা করতে থাকায় বাড়তি বাঘের খাবারের সমস্যার কারণে বাঘের সংখ্যাও বাড়ছে না। খাবারের সংস্থানের উন্নতি হলে বাঘের সংখ্যাও স্বাভাবিক ভাবে বাড়বে বলে উল্লেখ করে অধ্যাপক ফিরোজ জামান বলেন এই জন্য প্রয়োজন পাহারার ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করা। তিনি বলেন এটা করতে হলে লোকবল বাড়াতে হবে এবং এ খাতে বাজেট বরাদ্দও বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন পাহারা জোরদার করলে একদিকে বাঘের খাদ্য সংস্থান বাড়বে অন্যদিকে বাঘের বংশ বিস্তারের পাশাপাশি তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থাও শক্তিশালী হবে।

XS
SM
MD
LG