শরীফ উল হক,
ঢাকা রিপোর্টিং সেন্টার
সহযোগিতায়- ইউএসএআইডি এবং ভয়েস অফ আমেরিকা
রহিমা বেগম। থাকেন ঢাকার কারওয়ান বাজারের সামনের রাস্তার। তিনি আমাকে বললেন, শীতে জবুথবু হয়ে থাকার কষ্টের কথা। এই বছরের শীতকালে একটি মাত্র গরম কাপড়ই তার সম্বল। ষড়ঋতুর এই দেশে প্রতিবছরই শীত আসে কারো জন্য উপভোগের, আবার কারো জন্য যন্ত্রনার হয়ে।
শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হন নিম্ন-আয়ের এবং রাস্তার পাশে বসবাসকারী মানুষেরা। ‘বাংলাদেশ অগ্রগতি প্রতিবেদন-২০১৩’ অনুযায়ী দারিদ্রের হার ২৬.২। জনগণের এই অংশটিকে প্রতিবছরই ঘটা করে শীতবস্ত্র দিয়ে সাহায্য করা হয়। যার মধ্যে লুকিয়ে থাকে কিছুটা প্রচার আবার আসলেই কিছুটা সাহায্যের ইচ্ছা। কিন্তু এই সাহায্যটা যদি শীতের শুরু থেকে করা যায় তাহলে সাহায্য প্রত্যাশীরা আরো বেশী উপকৃত হতো বলে মনে করেন ‘মাতৃছায়া’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সমন্বয়ক জনাব মিরাজ হোসেন। মানুষ মানুষেরই জন্য। তিনি মনে করেন, প্রচারের উদ্দেশ্যে না দিয়ে প্রকৃত সাহায্যের উদ্দেশ্যে শীতবস্ত্র বিতরন করলে ঠান্ডার কষ্ট থেকে রেহাই পেতে পারে শীতার্ত মানুষগুলো।
শুধু যে ঠান্ডায় কষ্টের মাত্রা বাড়ে তা নয়। শীত নিয়ে আসে নানা রকম রোগ-ব্যাধিও। সর্দি-কাশি, ত্বকের শুস্কতা, কানের প্রদাহ, সাইনাসের সমস্যা ইত্যাদি। শিশুদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া, বুকে কফ, শ্বাসকষ্ট, জ্বরসহ নানা রোগ। ডা. নুসরাত ফারিয়া জানালেন, ধূলোবালি এড়িয়ে চলা, কুসুম গরম পানি পান, গরম কাপড়ে পরিধান সহ সহজ কিছু নিয়ম বাঁচাতে পারে শীতের রোগ থেকে।
কুয়াশায় মোড়ানো শীতের সকালে গরম ভাঁপা পিঠার লোভ সামলাতে না পেরে অনেকেই বসে যান জলন্ত চুলোর ঠিক কাছেই কিছুটা উষ্ণতার আশায়। একই কাজটি দরিদ্ররা করে থাকেন প্রবল ঠান্ডার আঁচ থেকে বাঁচতে। আবার কেউ কেউ অনেক গরম পানি দিয়ে গোসলের কাজটি সারেন। এই কাজগুলো হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়ায় শরীরের জন্য। ত্বকের জন্য যেমন ক্ষতির কারন তেমনি মাথার চুল বেশি গরম পানিতে পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানালেন ডা. নুসরাত।
কে জিতবে শীতের তীব্রতা নাকি ভালবাসার উষ্ণতা? আমাদের একটু সচেতনতা, একটু সাহায্যের হাত যেমন উষ্ণতা ছড়িয়ে দিতে পারে হতদরিদ্র মানুষ গুলোর মাঝে, তেমনি রক্ষা করতে পারে ঠান্ডা হিমেল হাওয়া থেকে সদ্য জন্মলাভ করা শিশুটিকে। একজন প্রবীণ মানুষ আপনার দান করা একটি গরম কাপড়ের মাঝেই হয়ত খুঁজে পাবে ভালবাসার উষ্ণতা।