অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন নিয়ে বাংলাদেশের আইনমন্ত্রীর বক্তব্য


বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক
বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এই প্রতিনিধিকে বলেন, মিসইউজ এবং অ্যাবিউজ বন্ধ করার জন্য যেসব বেস্ট প্র্যাকটিস রয়েছে আমরা সেগুলো খতিয়ে দেখছি। ইতিমধ্যেই আমরা জেনেভায় মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমাদের অনুরোধে তারা একটি টিম গঠন করেছে। বাংলাদেশও একটি টিম গঠন করেছে।

ভিন্নমত দমনের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা অ্যাক্ট হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বলেছেন, আমরা যখন দেখলাম কিছুটা মিসইউজ হচ্ছে, তখনই আমরা এটা বন্ধ করার ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন আর কোনো সাংবাদিককে মামলা দিলেই গ্রেপ্তার করা হয় না।

গতরাতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল 'নো স্পেস ফর ডিসেন্ট' শীর্ষক এক প্রতিবেদনে অভিযোগ করে, এই আইনে নিশানা করা হয়েছে সাংবাদিক, কার্টুনিস্ট, গায়ক, অ্যাক্টিভিস্ট, উদ্যোক্তা বা শিক্ষার্থীদের। এমনকি একজন কৃষককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এই প্রতিনিধিকে বলেন, মিসইউজ এবং অ্যাবিউজ বন্ধ করার জন্য যেসব বেস্ট প্র্যাকটিস রয়েছে আমরা সেগুলো খতিয়ে দেখছি। ইতিমধ্যেই আমরা জেনেভায় মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমাদের অনুরোধে তারা একটি টিম গঠন করেছে। বাংলাদেশও একটি টিম গঠন করেছে। এতে আইন, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সদস্যরা রয়েছেন। দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কোভিডের কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে, আমি নিজে তাদের সঙ্গে দু'দফা বৈঠক করেছি।

আইনমন্ত্রী বলেন, এখন মামলা দিলেই তা গ্রহণ করা হয় না। আগে আইসিটি সেলে পাঠাতে হয়। সাথে সাথে গ্রেপ্তার যাতে না করা হয়, সেজন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অ্যামনেস্টি বলেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা অ্যাক্টের মাধ্যমে দেশে একধরনের ভয়ের সংস্কৃতি চালু করা হয়েছে। এতে করে সঙ্কুচিত হয়েছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা।

এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, এটা তাদের অভিমত। আমি মনে করি, এ অভিমত পক্ষপাতদুষ্ট। অ্যামনেস্টি তাদের রিপোর্টে বলেছে, কর্তৃপক্ষ যে ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে তা থেকে স্পষ্ট বর্তমানে বাংলাদেশে কোনোকিছুর প্রতিবাদ করা বা ভিন্নমত পোষণ করাটা বিপদজনক।

এদিকে, সোমবার বিকেলে (বাংলাদেশ সময়) অ্যামনেস্টির তরফে 'বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা-ভিন্নমতের স্থান নেই' শীর্ষক এক ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। এতে অ্যামনেস্টির মহাসচিব অ্যাগনেস কাল্লামার্ড বলেন, এই আইনের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে এবং দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গণতান্ত্রিক পরিবেশ। এই আইনটির কারণে মানবাধিকার সংরক্ষণের কোনো জায়গা থাকছে না।

জাতিসংঘের মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি আইরিন খান বলেন, ডিএসএ একটি কলোনিয়াল আইন। শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর অনেক অনুন্নত দেশে এ ধরনের আইন রয়েছে। এই আইনের কারণে মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে যে আন্তর্জাতিক আইনগুলো রয়েছে তা এই আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

তিনি বলেন, আমরা বলতে পারি, পরামর্শ দিতে পারি, কিন্তু দিনের শেষে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সকলের কথা শুনতে হয়। সরকারের সমালোচনা করা যায়, সরকারকে জবাবদিহি করতে হয়। অ্যামনেস্টির মহাসচিব থাকাকালে তার বিরুদ্ধে লিবিয়ার প্রয়াত নেতা গাদ্দাফির একটি মামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আদালত শুধু আমলেই নেয়নি এই বলে যে, রাষ্ট্রপ্রধান মানহানির জন্য কোনো সাধারণ নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে না।

অ্যামনেস্টির এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক ইয়ামেনি মিশ্রা বক্তব্য রাখেন। এই ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাউথ এশিয়া ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি।

XS
SM
MD
LG