অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে গুম নিয়ে সরকারি বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ 


গুম হওয়া ব্যক্তিদের ছবি হাতে তাদের আত্মীয়রা।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের ছবি হাতে তাদের আত্মীয়রা।

বাংলাদেশে গুম হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে সরকারি বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটি বলেছে, বরাবরের মতোই তারা এক বাক্যে অস্বীকার করে থাকে। এমন কি সর্বশেষ রিপোর্টও প্রত্যাখ্যান করে সবসময় যে প্রতিক্রিয়া দেয় তাই দিয়েছে। এই প্রতিক্রিয়ায় একটি শব্দ এবারও ব্যবহার করেছে। আর তা হলো অস্বীকার, অস্বীকার এবং অস্বীকার।

বুধবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলী সংস্থাটির নিজস্ব ওয়েব পেজে 'অকাট্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ গুমের ঘটনা অস্বীকার করে' শীর্ষক এক নিবন্ধে এসব মন্তব্য করেছেন।লিখেছেন, গত ১লা আগস্ট গুমের বিষয়ে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।যে রিপোর্টে ৮৬ জনের গুম হওয়ার দালিলিক প্রমাণ হাজির করা হয়েছে, যারা এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। তাই কর্তৃপক্ষের উচিত এসব লোককে ছেড়ে দেয়া।

প্রতিটি মামলার তদন্ত করা, নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশ্ন করা এবং জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসা। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, এসবই বানোয়াট। তার ভাষায়- কিছু মানুষ পরিবারের কাছ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন এবং তার কিছুদিন পর আবার তারা বাড়িতে ফিরে আসেন।এখানেই শেষ নয়।ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে অপহরণকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে গুলিয়ে না ফেলতে আমাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক আইনে গুমের সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করে মীনাক্ষী গাঙ্গুলী লিখেছেন, যখন রাষ্ট্রীয় বাহিনী কাউকে আটক করে তখন কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করে।গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তির অবস্থান গোপন করে তাদেরকে আইনি সুরক্ষা দেয়া থেকে বঞ্চিত করে। নিবন্ধে গাঙ্গুলী লিখেছেন, ২০০৯ থেকে বাংলাদেশে শত শত মানুষকে গুম করা হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলি বিনিময়ে বেশ ক'জন মারা গেছে বলে দেখানো হয়েছে। পরে কয়েকজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অথবা আদালতে হাজির করা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দ্বারা আটক বা অপহরণের সময়কাল মিলিয়ে দেখলে এগুলোকে গুমই বলতে হবে। সর্বশেষ রিপোর্ট প্রকাশের পর কর্তৃপক্ষ বলেছে, আমরা তাদের সাথে পরামর্শ করিনি। অথচ এর আগে আমরা বহুবার যোগাযোগ করেছি, পরামর্শ করেছি।সেগুলো তারা আমলে নেয়নি। অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের টম ল্যান্টোস মানবাধিকার কমিশন কর্তৃক ব্রিফিংয়ের পর দূতাবাস সে প্রত্যাখ্যানের পুনরাবৃত্তি করেছে। মীনাক্ষীর মতে, বাংলাদেশ দূতাবাস কিছু প্রমাণকে অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করেছিল। কারণ সাক্ষীরা নাম প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নেন। জেনে রাখা ভালো, এই প্রতিবেদন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কর্মী এবং বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি মানবাধিকার সংগঠকের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।

উপসংহারে মীনাক্ষী লিখেছেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ শুনতে শুনতে তিনি ক্লান্ত। তার ইচ্ছে হয়, এসব গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার।

ওদিকে বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সম্প্রতি ইউরোপের তিনটি দেশ সফরের সময়ে কোথাও কেউ তাকে খুন,গুম বা বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেনি।বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিদেশিরা যখন প্রশ্ন করে থাকেন, বিষয়টি কিভাবে দেখেন এমন প্রশ্নে মন্ত্রী মোমেন বলেন, এটা করে কিছু ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান,যাদের কাছে গিয়ে কেউ না কেউ ধরণা দেয়। মন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে নাকি বাংলাদেশে নয়’শ নারীশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। অথচ ওই একই বছরে ব্রিটেনে ৭ লাখ ৭০ হাজার ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আমেরিকাতে ৮৫ হাজার ৭৬৭ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যার ১ শতাংশের শাস্তি হয়েছে। তাও লঘুদণ্ড।

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশী মিডিয়ায় রিপোর্ট হলে তা দেশের মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এটা এক ধরণের বদঅভ্যাস।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ মনে করেন গুম বা নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তি কেন নিখোঁজ হলেন সেটাআগে জানা দরকার।কেউ কেউ ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণেও নিখোঁজ হতে পারেন।তিনি বলেন, এ ধরণের ঘটনা ঘটলে পরিবারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেয়া উচিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও গুরুত্ব দিয়ে অভিযোগ তদন্ত করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ সি আর আবরার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ সি আর আবরার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ সি আর আবরার মনে করেন, গুম বা নিখোঁজহয়ে যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগের।সরকারের তরফে বলা হয় নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তি স্বেচ্ছায়, পারিবারিক কারণে আত্মগোপনে যেতে পারেন।কিছু দিন আগেও জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনেক পরিবারের লোকজন এসেছিলেন তাদের স্বজনের সন্ধানের দাবিতে। তারা তো ভোগান্তির মধ্যে আছেন।

গুম বা নিখোঁজ যাই বলা হোক না কেন, যাদের পাওয়া যাচ্ছে না তারা কোথায় আছে, কেন নিখোঁজ হয়েছে তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, নিখোঁজ লোকদের কেউ কেউ দেখা যাচ্ছে একটা সময় ফিরে আসছেন বা তাদের কোথাও পাওয়া যাচ্ছে। এসব মানুষ ফিরে আসলেও তারা কোথায় ছিলেন, কেমন ছিলেন তার কোন তথ্য মিলছে না।এতে মনে হয় তাদের নিখোঁজ হওয়াটা স্বাভাবিক বিষয় না।

XS
SM
MD
LG