খারাপ আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে যারা জঙ্গীবাদে লিপ্ত হয় তাদেরকে প্রতিরোধ করার আহবানের মধ্য দিয়ে শেষ হল জঙ্গীবাদ বিরোধী সম্মেলন। যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বললেন জঙ্গীবাদ কোনো ধর্মীয় বিষয় নয়, তাই এর দায় কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের ওপর বর্তায় না। ভয়েস অব আমেরিকার হোয়াইট হাউজ সংবাদদাতা লুইস রামিরেজের তথ্য নিয়ে নিউইয়র্ক প্রবাসী এক ইমামের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্ট করেছেন সেলিম হোসেন।
সিরিয়া ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে শুরু হওয়া ইসলামিক স্টেট জঙ্গী গোষ্ঠি অল্প সময়ের মধ্যে ইসলামের কথা বলে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে তরুণদেরকে তাদের দলে ভেড়াচ্ছে। এছাড়া ধর্মের কথা বলে আল কায়েদা, তালেবান, বোকো হারামসহ নানা জঙ্গী দল নানাস্থানে চালাচ্ছে মানবতা বিরোধী বর্বরতা। এসবের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার উপায় খুঁজতেই ১৮ ও ১৯শে ফেব্রুয়ারী হোয়াইট হাউজের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজন করা হয় কাউন্টারিং ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম নামের জঙ্গীবাদ বিরোধী সম্মেলন।
সম্মেলন শুরু এবং সমাপনী দিনে প্রেসিডেন্ট ওবামা বিশ্বব্যাপী জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেয়ার আহবান জানান। তিনি প্রতিবারই বলেন খারাপ আদর্শের ওই জঙ্গীবাদী গোষ্ঠির বিরুদ্ধে যুদ্ধ আসলে ইসলাোমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়।
“একথা সত্য যে মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে জটিল সম্পর্কের ইতিহাস রয়েছে। তাই বলে পশ্চিমা বিশ্ব যে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত একথা একটি বিশ্রি মিথ্যা”।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন ‘শুধু শক্তি প্রয়োগ করে জঙ্গীবাদ সমুলে নির্মূল সম্ভব নয়, এর বিরুদ্ধে সামাজিক ও ধর্মীয় সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে’। তিনি বলেন জঙ্গীরা ধর্মের নামে মিথ্যা আশা দিয়ে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণদেরকে জঙ্গীবাদে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছে।
প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন ইসলামকে তারা খারাপ ভাবে ব্যাবহার করছে। বুঝতে হবে যে আমাদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়। আমরা তাদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করছি যারা ইসলামকে ভুলভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে।
সম্মেলনে জঙ্গীবাদকে ইসলামি জঙ্গীবাদ না বলায় প্রেসিডেন্ট ওবামার সমালোচনা করেন তার বিরোধীপক্ষ। তারা বলেন আরব বিশ্বকে না চটানোর লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট ওবামা একে ইসলামি জঙ্গীবাদ বলছেন না অথবা যারা যুক্তরাস্ট্রের সন্ত্রাস বিরোধী কর্মসূচীকে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসাবে দেখেন তাদের চোখে ভালো সাজবার জন্যে এটা করছেন।
সম্মেলনে বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশ থেকে ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ, আইন রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধি ও পররাস্ট্রমন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। তারা যার যার দৃষ্টিকোন থেকে জঙ্গীবাদের উত্থানের নানা কারন ও তার সমাধান কি হতে পারে তা তুলে ধরেন। কেউ বলেন এর জন্যে দায়ী দারিদ্র, কেউ বলেন বেকারত্ব, কেউ সামাজিক বৈষম্য, কেউ আবার ধর্মীয় বিষয়কে জঙ্গীবাদের কারন হিসাবে উল্লেখ করেন।
বৃহস্পতিবার সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে যুক্তরাস্ট্রের জাতিয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুজান রাইস বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারসমূহকে নাগরিক সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে কাজ করে সমাজের অবহেলিতদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ দিয়ে জঙ্গীবাদের প্রতি নিরুৎসাহিত করার আহবান জানান।
সম্মেলনে তরুণদেরকে জঙ্গীবাদে আকৃষ্ট না হওয়ার পক্ষে কয়েকটি কারন বের করা হয় এবং সেগুলো বিভিন্ন দেশে প্রয়োগ করার পরামর্শ দেয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন অনেক সময় লাগবে, অনেকবার বৈঠক করতে হবে এবং এ নিয়ে সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বিস্তারিত আলোচনা হবে।