অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র - মন্তব্য পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত আকবর আহমেদের


বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে দেখা করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফ । ওবামা –শরীফ বৈঠক নিয়ে বেশ জল্পনা কল্পনা ও চলছিল সংবাদ মাধ্যমে , বিশ্লেষকদের মধ্যেও ছিল বিভিন্ন মতামত । যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক পেরিয়েছে নানান চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে । কখনও পারস্পরিক আস্থা এ দুটি দেশের সম্পর্ককে করেছে সুনিবীড় , কখন ও বা দেখা গেছে অনাস্থা ও সংশয়। তবু দ্বিপাক্ষিক , আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক কারণে দু দেশের বন্ধন থেকেছে অটুট।

ওবামা – শরীফ সাম্প্রতিকতম বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে টেলিফোনে কথা হচ্ছিল ওয়াশিংটনের আমেরিকান ইউনাভার্সিটির স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিসের অধ্যাপক , যুক্তরাজ্যে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত , রাজনৈতিক বিশ্লেষক আকবর আহমেদের সঙ্গে। সম্পর্কের চড়াই উৎরাই সত্বেও দুই নেতাই উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে তাঁদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন , ওবামা পাকিস্তানকে সন্ত্রাস বিরোধী শরীক হিসেবে উল্লেখ করেছেন তাঁর বক্তব্যে। তবে এই সহযোগিতা কতটুকু সফল হয়েছে । অধ্যাপক আকবর আহমেদের জবাব ছিল এই সহযোগিতা যে অটুট রয়েছে , সেটাই হচ্ছে এই মৈত্রি বন্ধনে আবদ্ধ শরীকদের জন্য সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য মর্যাদার বিষয় । নিঃসন্দেহেই নানান উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এই সম্পর্ক অতিবাহিত হয়েছে তবে মনে হচ্ছে এই দোদুল্যমান সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসছে দু দেশই। এবারতো প্রধানমন্ত্রী শরীফ বাহ্যত বেশ উষ্ণ সম্বর্ধনা পেয়েছেন । হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে । তা ছাড়া পকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর অতিথী হিসেবে পেন্টগানেও গিয়েছিলেন , পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে ও তাঁর বৈঠক হয়েছে, দেখা করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গেও । কাজেই সাধারণ ভাবে বলা যায় পরিবেশ ছিল অত্যন্ত উষ্ণ। মনে রাখা উচিৎ যে এই সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। তবে একটা সমস্যা হচ্ছে প্রতিবার এ ধরণের বৈঠকে পাকিস্তান, কাশ্মির এবং ভারতের সঙ্গে তার সম্পর্কে বিষয়টি উত্থাপন করে । আর তখন যুক্তরাষ্ট্র বেশ বিব্রত বোধ করে কারণ যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ককে গুরুত্ব দিয়ে থাকে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে তার সম্পর্ক থেকে সেটা আলাদা করে রাখতে চায়। বস্তুত যুক্তরাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়।

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা নিয়ে আঁচ অনুমান , সত্বেও প্রকাশ্যে যতটাই জোর দেয়া হয়েছে বানিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের ওপর , ঠিক ততটা দেওয়া হয়নি নিরাপত্তা বিষয়ে । এর কারণ সম্পর্কে অধ্যাপক আকবর আহমেদ বলছেন যে আগামি মাসেই পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানের যুক্তরাষ্ট্রে সফরে আসার কথা । সুতরাং তিনিই নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন এটাই হয়ত আশা করা হচ্ছে। আবার এটা ও বলা যায় যে প্রেসিডেন্ট ওবামা ও প্রধানমন্ত্রী শরীফের এই বর্তমান বৈঠকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের একত্রে কাজ করার গুরুত্বও তুলে ধরা হয়েছে , ঐ অঞ্চলে শান্তি ও সহযোগিতা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে , একদিকে যেমন আফগানিস্তানের সঙ্গে , অন্যদিকে ঠিক তেমনি ভারতের সঙ্গেও। সে দিক থেকে এই বৈঠকের মেজাজটা ছিল একটু ভিন্ন ধরণের। এটার আরেকটা কারণ এ ও হতে পারে যে পাকিস্তান এখন তুলনামূলক ভাবে কিছুটা স্থিতিশীল হয়ে উঠছে , পুরোপরি না হলেও সন্ত্রাসবাদকে কিছুটা হলে ও নিয়ন্ত্রণ করছে। কারণ সেখানে শক্তিশালী সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে। তা ছাড়া আরও একটা ব্যাপার হচ্ছে চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডর নির্মাণ যা কীনা পাকিস্তানকে বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক থোক সহায়তা প্রদান করবে যা আশা করা হচ্ছে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থায় পরিবর্তন আনবে। আর আমেরিকা বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন , একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র রাষ্ট্রকে তারাও হারাতে চায় না।

কিন্তু এই পরস্পর নির্ভরশীলতা সত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা পাকিস্তানের অত্যন্ত শক্তিশালী নিরাপত্তা বিভাগের মনোভঙ্গিতে কোন রকম পরিবর্তন দেখছেন যে না সে সমস্যাকে স্বীকার করে অধ্যাপক আহমেদ বলেন পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী অনেকগুলো জঙ্গি গোষ্ঠির সঙ্গে এই মুহুর্তে বলা যায় জীবন মৃত্যু লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছে, বিশেষত যারা আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্ত বরাবর পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করছে। আর এখন তো তারা উভয় দেশের সীমান্ত অতিক্রম করে আরও অভ্যন্তরে এসে আফগান ও পাকিস্তানের সমাজে সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে। আর এই সন্ত্রাসের উৎস সন্ধান করে প্রায়ই পাকিস্তান ও আফগানস্তান পরস্পরকে দোষারোপ করে থাকে। তা ছাড়া ভারতের সঙ্গে পুর্ব সীমান্তে , অস্ত্র বিরতি লংঘনের নিয়মিত ঘটনা তো রয়েছেই । কাজেই নিরাপত্তা বাহিনীর রাজনীতি নিয়ে ভাববার সময় নেই এবং সেটা প্রধানমন্ত্রীকে বরঞ্চ খানিকটা স্বস্তিই দিয়েছে। নির্বাচিত সরকার প্রধান হিসেবে তিনি আস্থা খুঁজে পেয়েছেন। দু বছর আগে ইমরান খানের আন্দোলনে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল , নেওয়াজ শরীফ এখন সেটা কাটিয়ে তুলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে এ রকম খবর যে পাকিস্তান তার পরমাণু অস্ত্র ভান্ডার বিপুল আকারে বাড়িয়ে তুলছে। আমেরিকার এই উদ্বেগের মুখে পাকিস্তানের প্রতিক্রয়া কি হবে ?

অধ্যাপক আহমেদ বলছেন যে এই পরমাণূ অস্ত্রের বিষয়টিকে পাকিস্তানীরা তাদের জীবন মৃত্যুর বিষয় বলে মনে করে। তারা এটা মনে করে , কারণ সীমান্তের ওপারে ভারতের কার্যক্রমকে তারা হুমকি হিসেবেই দেখে। তারা ভারতের পরমাণু কর্মসূচি ,

ভারতের সেনাবাহিনীকে হুমিক হিসেবেই দেখে কারণ সেটা পাকিস্তানের তুলনায় অনেক অনেক গুণ বেশী। আর কখনও কখনও সীমান্তের ওপর থেকে আসা দায়িত্ব জ্ঞানহীন মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তোলে। এই তো সম্প্রতি পদস্থ ভারতীয় কর্মকর্তা প্রিয়েমটিভ স্ট্রাইকের কথা বললেন। এর ফলে অধ্যাপক আকবর আহমেদের মতে পরামানূ অস্ত্র বৃদ্ধির ব্যাপারে পাকিস্তানে আকাঙ্খা যেন আরও চাঙ্গা হয়ে ওঠে। অধ্যাপক আহমেদ আরও মনে করেন যে পরমাণূ অস্ত্র হ্রাসের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রে যুক্তি পাকিস্তান মানবে না। কারণ ভারতের পরমাণূ ক্ষমতা বাড়াবার ব্যাপারে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে । নেওয়াজ শরীফের যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগেই পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে এবং এ সম্পর্কে পাকিস্তানে সকলের মধ্যেই ঐকমত্য রয়েছে।

XS
SM
MD
LG