অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ায় পরিবহন ধর্মঘট ঘোষণা


বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি তেলের পাম্প। (ফাইল ফটো- এএফপি)
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি তেলের পাম্প। (ফাইল ফটো- এএফপি)

বাংলাদেশে কেরোসিন ও ডিজেলের মূল্য লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। বুধবার মধ্যরাত থেকে প্রতি লিটার কেরোসিন ও ডিজেল ৬৫ টাকার পরিবর্তে ৮০ টাকায় বিক্রির আকস্মিক ঘোষণা দেয়া হয়। নতুন এই দাম কার্যকর হওয়ায় পরিবহন খাতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বেড়ে যেতে পারে বলে বাজার বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। একইসঙ্গে কৃষি পণ্যের উৎপাদন খরচেও এর প্রভাব পড়তে পারে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে তা সমন্বয় করা হয়েছে।

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণার পরের দিন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর ফলে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম এক হাজার ২৫৯ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩১৩টাকায়। সিলিন্ডার প্রতি দাম বেড়েছে ৫৪ টাকা। বৃহস্পতিবার থেকেই নতুন দাম কার্যকর হবে বলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি জানিয়েছে।

বিরোধী দলগুলো জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোকে অযৌক্তিক দাবি করে সরকারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই বলে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। জ্বালানির দাম বাড়ানোর কারণে সাধারণ মানুষ আরও বেকায়দায় পড়বে।

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, দুই বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে তেল বিক্রি করে সরকার লাভ করেছে। সেই টাকা কোথায় গেল? যখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম কম ছিল তখন দেশে বেশি দামে তেল বিক্রি করা হয়েছে। তার মতে, করোনাকালে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। এমনিতেই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এই অবস্থায় তেলের দাম বাড়ার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এতে সাধারণ মানুষ আরও বেশি চাপে পড়বে।

বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর দিনেই প্রতিবেশী ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রোল এবং ডিজেলের ওপর আরোপিত আবগারি শুল্ক কমিয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশটির কেন্দ্রীয় জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দেয়া বিবৃতি অনুযায়ী, প্রতি লিটার পেট্রোলে শুল্ক কমানো হয়েছে ৫ রুপি। প্রতি লিটার ডিজেলে শুল্ক কমানো হয়েছে ১০রুপি।

ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার পরিবহন মালিকরা নতুন ভাড়া নির্ধারণের দাবিতে ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছেন। মালিক সমিতিগুলো বাস-ট্রাকসহ পরিবহন ভাড়া বাড়াতে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ’র কাছে আবেদন করেছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির তরফে ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়া না হলেও স্থানীয় পর্যায়ের সমিতিগুলো শুক্রবার থেকে বাস-ট্রাক বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

বিআরটিএ'র চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো পরিবহন মালিক সমিতির আবেদনে বলা হয়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরসহ সারা দেশের দূরপাল্লার রুটে গত ৮ বছর কোনো ভাড়া বাড়ানো হয়নি। কিন্তু এ সময়ে গাড়ির চেসিস, টায়ার, টিউব, খুচরা যন্ত্রাংশ এবং সব ধরনের কর ও ফি বেড়েছে। এ কারণে গাড়ির পরিচালন ব্যয় ‘কয়েকগুণ’ বেড়ে গেছে। সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ'র স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, এমন অবস্থার মধ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অস্বাভাবিক হারে ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটারে ১৫টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ অবস্থায় নতুন করে পরিবহন ভাড়া নির্ধারণ না করলে বিদ্যমান ভাড়ায় যানবাহন চালানো সম্ভব হবে না।

আবেদনের বিষয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত জানা যায়নি উল্লেখ করে খন্দকার এনায়েতউল্যাহ জানিয়েছেন, তারা সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন। পরিবহন ধর্মঘট ডাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালিক সমিতি কোনো ধর্মঘট ডাকেনি। তবে বিদ্যমান ভাড়ায় মালিকরা বাস-ট্রাক চালাতে চাইছেন না।

বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে বৃহস্পতিবার মালিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠক থেকে সরকারের কাছে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ করা যায় যে, সর্বশেষ ২০১৫ সালে গণপরিবহনের ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করে দেয় সরকার। সে সময় দূরপাল্লার বাসের প্রতি কিলোমিটার ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১ টাকা ৪২ পয়সা। এছাড়া ঢাকা শহরে প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৭০ পয়সা এবং চট্টগ্রাম মহানগরে প্রতি কিলোমিটার বাসের ভাড়া ১ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর আগেই বাস মালিকদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ভাড়া বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছিল।

XS
SM
MD
LG