প্যারিসে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পরও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়াবলী সম্পর্কে বৈশ্বিক ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৩০শে নভেম্বর বিশ্বের ৮০টি দেশের সরকার প্রধান ২ সপ্তাহের জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন ফ্রান্সের রাজধানীতে। তাদেঁর সঙ্গে যোগ দেবেন ২৫ হাজার জন আলোচক, বেসরকারী সংস্থা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও। রোজান স্কারবেলের রিপোর্ট শোনাচ্ছেন সেলিম হোসেন ও সাবরিনা চৌধুরী।
জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে মারাত্মক প্রভাব এড়াতে বিশ্বব্যাপী ক্ষতিকর নির্গমণ রোধের লক্ষ্যে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে একটি ঐক্যমত হবে এ আশা করছেন সকলেই। গত অক্টোবরে আলোচকেরা বনে মিলিত হন এবং প্যারিসে উপস্থাপনের জন্যে জলবায়ু বিষয়ক ৫৫ পৃষ্ঠার একটি খসড়া প্রতিবেদন তৈরী করেন। ধনী দরিদ্রের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে কিছু অমীমাংসিত বিষয় রয়ে গেছে। দরিদ্র দেশসমূহ বলছে শিল্পোন্নত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনে সহায়তাকারী ক্ষতিকর নির্গমনের জন্যে সবচেয়ে বেশী দায়ী এবং তারাই তা মোকাবেলায় অর্থ ব্যায় করবে। অপরদিকে ধনী দেশগুলো বলছে সকলেই এতে অংশ নেবে; বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশ চীন, ভারত ও ব্রাজিল।
ছয় বছর আগে কোপেনহেগেনের জলবায়ু আলোচনায়, উন্নত রাষ্ট্রসমূহ দরিদ্র দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সহায়তা করতে; প্রাইইভেট পাবলিক খাতে ১০ হাজার কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। World Resources Institute এর আন্তর্জাতিক জালবায়ু প্রয়াসের প্রধান ডেভিড ওয়াশকোহ বললেন সেই প্রতিশ্রুতি পুরন করাও এ খাতের জন্যে অসাধারন বিষয়।
“আামরা জানি আগামী দশকগুলোতে আবকাঠামোগত বিনিয়োগ হিসাবে লক্ষ কোটি ডলার আসবে। প্রশ্ন হলো, ঐ অবকাঠামোগত বিনিয়োগ কি সঠিক কাজে হচ্ছে? আপনি যখন জ্বালানী খাতে বিনিয়োগ করছেন, আপনি কি নবায়নযোগ্য জ্বালানীর জন্যে তা করছেন? যা শিঘ্রই বহু দেশে জীবাশ্ম জ্বালানীর উৎসের চেয়ে সস্তা হয়ে যাবে”।
জাতিসংঘ জলবায়ু বিষয়ক প্রধান ক্রিশ্চিয়ানা ফিগার্স এ ব্যাপারে একমত। বার্লীনে Hertie School of Governance স্কুলের শিক্ষার্থিদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন উন্নয়নশীল দেশসমুহেদর উচিৎ নিম্ন কার্বন উৎসগুলোকে জ্বালানী বৃদ্ধির উৎসে পরিনত করা।
“আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এমন কিছু করতে বলছি যা আগে কেউ করেনি। আপমরা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন ধরে রাখার কথা বলছী তবে তা গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমণ না করে। কেউ তা করিনি, কেউ না”।
প্যারিস সম্মেলনের আগে, ১৫০টিরও বেশী দেশ, জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে যাতে তারা কিভাবে ক্ষতিকর নির্গমন বন্ধ করবে তার বিবরণ রয়েছে। কিন্তু তাতে, শিল্পোন্নয়নের আগের সময়কার চেয়ে তাপমাত্রা যে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে, তা এড়াতে যা যা দারকার; সে বিষয়ে কোনো দিক নির্দেশনা নেই। আর সেটিই বলছেন বিজ্ঞানীরা যে সমুদ্র উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ঝড় ক্ষরা দাবানলসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার জন্যে তা করা দরকার। ডেভিড ওয়াসকোহ বলেন প্যারিস আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা সংক্রান্ত যেসকল বিষয়ে মাতানৈক্য বা ফারাক রয়েছে তা পলনের একটি প্রক্রিয়া তৈরী হবে। আর যে কোনো ধরনের সমঝোতা তৈরি হলে তা জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াবে।
“জাতিয় জলবায়ু পরিকল্পনায় অনেক দেশই উল্লেখ করেছে কিভাবে তারা নবায়নযোগ্য জ্বালানী করবে; কিভাবে স্বল্প কার্বোন নির্গমনের গাড়ী বাড়াবে, কিভাবে বন সংরক্ষন করবে। এখানে গ্রীনহাউজ গ্যাস বন্ধের কোনো পরিকল্পনা নেই; যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলোর মধ্যে একটি”।
ক্রিষ্টিয়ানা বললেন উন্নয়নশীল দেশসমূহের উচিৎ উন্নত দেশের আর্থিক ও প্রযুক্তি সহায়তায় জ্বালানী জীবাশ্ম ব্যাবহারেরর যুগ থেকে বেরিয়ে আসা।
“আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে যা বলছী তা করা নিশ্চয় কঠিন, কিন্তু এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
প্যরিস চুক্তির বাইরে কিছু আছে কিনা সে প্রশ্নে ক্রিস্টিয়ানা বললেন, কোনো বসবাসের জন্যে কোনো বিকল্প গ্রহন যেমন নেই তেমনি জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার সমঝোতা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।