অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

শিল্প কারখানা খোলার খবর পেয়ে দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে শ্রমিকরা ছুটছেন কর্মস্থলে


বাংলাদেশ সরকার করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে পূর্বে আরোপিত লকডাউন সকল রপ্তানিমুখী কারখানার জন্য শিথিল করার পর কাজে যোগদানের উদ্দেশ্যে ঢাকার পথে শ্রমিকরা। শ্রীনগরে ফেরি থেকে নামছে মানুষ। ৩১ জুলাই, ২০২১।
বাংলাদেশ সরকার করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে পূর্বে আরোপিত লকডাউন সকল রপ্তানিমুখী কারখানার জন্য শিথিল করার পর কাজে যোগদানের উদ্দেশ্যে ঢাকার পথে শ্রমিকরা। শ্রীনগরে ফেরি থেকে নামছে মানুষ। ৩১ জুলাই, ২০২১।

মোবাইলে খুদে বার্তা। রোববার সকালে গার্মেন্টস খুলবে। সময়মতো হাজির হতে হবে। নাহলে চাকরি যাবে। এই বার্তা পেয়ে যশোরের হুসনা বেগমের যেন আকাশ ভেঙ্গে মাথায় পড়লো। শরীর খারাপ। কীভাবে যাবেন? গাড়িঘোড়া নেই। আগে চাকরি, যে করেই হোক রওনা দিতে হবে। তার কর্মস্থল সাভার ইপিজেড। রিকশা, ভ্যান ও সিএনজি করে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছালেন দুপুরে। বললেন, আমরা কিভাবে আসবো, কে খোঁজ রাখে? তা নাহলে এভাবে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে! ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার সুফিয়া বেগমের কষ্ট আরও বেশি। তার কথায়- করোনা, টরোনা বুঝি না। ইপিজেডে পৌঁছাতে হবে। চাকরি না থাকলে খাবো কি? সাধারণত পাটুরিয়া ফেরিঘাট থেকে সাভার পৌঁছতে খরচ হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকা। সুযোগ বুঝে প্রাইভেট কারের মালিকেরা ভাড়া দশগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। বলছে, এক হাজার টাকার নিচে যাবে না। কি করবো? বিকল্প পথই বা কি? ফরিদপুরের মধুখালির আরেক গার্মেন্ট কর্মী মুনসের আলী। স্যারের ফোন পেয়েছি, সময়মতো কাজে যোগ দিতে হবে। তাই অনেকটা যুদ্ধ করেই যাচ্ছি।

এটা শুধু হুসনা বেগম, সুফিয়া বেগম কিংবা মুনসের আলীর প্রতিক্রিয়া নয়।

ঢাকাগামী গার্মেন্ট শ্রমিকরা এভাবেই মিডিয়ার সামনে কথা বলেছেন। সবারই এক কথা- মাত্র একদিনের নোটিশে কীভাবে শ্রমিকরা কর্মস্থলে যোগ দেবে এটা কেউ ভেবে দেখেনি। শুক্রবার সন্ধ্যায় গার্মেন্টস কারখানাকে লকডাউনের আওতামুক্ত করা হয়। আগে বলা হয়েছিল, ৫ই আগস্টের আগে কোনো অবস্থাতেই গার্মেন্টস খুলবে না। শ্রমিকদের প্রস্তুতি সেরকমই ছিল। আচমকা টিভিতে ঘোষণা এবং খুদে বার্তা পেয়ে শ্রমিকরা অনেকটা দিশেহারা। পরিবহনের কোনো ব্যবস্থা ছাড়াই কর্মস্থলে যোগ দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শত শত পোশাক শ্রমিক পরিবহন না পেয়ে রংপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। রংপুর বিভাগের এই শ্রমিকরা প্রশাসনের সহযোগিতায় অবরোধ তুলে নেন। এরপর তাদের কষ্টযাত্রা শুরু হয়।

কেউ কেউ ছোট পিক-আপভ্যানে, সিএনজিতে এবং রিকশা-ভ্যানে করে কর্মস্থলের দিকে রওনা দেন। আগে ভাড়া ছিল ৫০০ টাকা। সেটা দিতে হয়েছে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। দক্ষিণের জনপদেও একই অবস্থা। শিমুলিয়া ফেরিঘাটে জড়ো হন হাজার হাজার শ্রমিক। ঈদের সময় ফেরিঘাটের যে চিত্র দেখা যায়, সেটাই ফিরে এসেছিল শনিবার। বরিশাল অঞ্চলের শ্রমিকদের দুর্ভোগের সীমা নেই। লঞ্চ -স্টিমার বন্ধ থাকায় বিকল্প পথই বা কি? অনেকে ট্রলারে গাদাগাদি করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়েছেন। ময়মনসিংহ অঞ্চলের শ্রমিকদের অনেকেই পায়ে হেঁটে, ভ্যানে এবং ট্রাকে করে গাজীপুর পৌঁছেছেন।

ওদিকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত যে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে তা শিথিল করার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। তার কথায়,মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।

XS
SM
MD
LG