আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গ্যাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার তিনদিনব্যাপী শুনানী নেদারল্যান্ডসের দ্য হেইগে শুরু হয়েছে। এই সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রে ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন ফর রোহিঙ্গার নির্বাহী পরিচালক সাইমন বিলয়েনেসের কাছে এই মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মামলা কোনো অবস্থাতেই কেউ মিথ্যা প্রমাণ করতে পারবেনা। প্রতিটি প্রমাণ রয়েছে যে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী কি অন্যায়ভাবে এই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটিয়েছে। এবং আমার ধারণা যার ভেতর এতটুকু সততা রয়েছে সে এই গণহত্যার বিপক্ষে কথা বলবে না।
আমি মনে করছি মিয়ানমারের ওপর কিছু অস্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে সেখানে সামরিক বাহিনীর নির্যাতন হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার জন্য। আন্তর্জাতিক আদালতে এই মামলা দায়েরের কারণে এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশ মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে অনুপ্রাণিত হবে। এবং সেইসব কোম্পানি যাদের মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কেননা পুরো বিশ্ব জানবে যে কোম্পানিগুলো পরোক্ষভাবে মিয়ানমার সরকারকে সমর্থন করছে এই গণহত্যা নির্যাতন চালানোর জন্য। এবং এই শুনানির পর দেখা যাবে অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছেদ করছে।
সাইমনের কাছে প্রশ্ন রাখি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য লড়াই করেছিলেন অং সান সুচি এবং নোবেল জয় করেছেন, সেই সুচি আজ আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের পক্ষে লড়ছেন, বলছেন সেখানে গণহত্যা হয়নি। তারা সন্ত্রাস দমন করছেন, এ সম্পর্কে সাইমন বলেন, অং সান সুচি অত্যন্ত হাস্যকর মন্তব্য করছেন।এটি খুবই পরিস্কার যে মিয়ানমারে নির্বিচারে গণহত্যা চালানো হয়েছে। প্রমাণ রয়েছে সেই নির্যাতন নিপীড়নের যা আদালতে পেশ করা হচ্ছে। অপ্রতিপাদ্যকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন সুচি। এবং মানবাধিকারের রক্ষক হিসেবে তার সম্মান নষ্ট হচ্ছে। তিনি মিয়ানমারের জনগণের স্বার্থ রক্ষা করছেন না তিনি তাদের ওপর চালানো গণহত্যা নির্যাতনের অপরাধকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।
সাইমনের কাছে জানতে চেয়েছি তার কি মনে হয় গ্যাম্বিয়া ছোট দেশ হয়েও তারাই প্রথম আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করলো। সাইমন বলেন, গ্যাম্বিয়ার জন্য প্রার্থনা করি যে তারা এগিয়ে এসেছে এবং আমার ধারণা এর কারণ তারা নিজেরা রুয়ান্ডার গণহত্যার স্বীকার হয়েছিলেন। গ্যাম্বিয়ার কর্মকর্তারা ক্যাম্পে গিয়ে স্বচক্ষে দেখে এসেছেন শুনে এসেছেন বর্বরতার সীমাহীন সত্যগুলো।গ্যাম্বিয়ার প্রতি বিশ্বের অন্যান্য দেশের সমর্থন রয়েছে এই গণহত্যা নির্যাতন বন্ধ করার জন্য।
সাইমনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আন্তর্জাতিক আদালত যদি অস্থায়ী ব্যবস্থাগুলো নেয় এবং অন্যান্য দেশগুলো যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাহলে বাংলাদেশের ক্যাম্পের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ফেরত যেতে পারেন কিনা, তার উত্তরে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তখনই ফেরত যাবে যখন সেই পরিস্থিতি হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে, তাদের নিজ গ্রামে নিজ গৃহে ফিরতে পারার নিশ্চয়তা দেয়া হবে, তাদের নাগরিকত্ত ফিরিয়ে দেয়া হবে।
এবং সবশেষে সাইমন বললেন, আন্তর্জাতিক আদালত মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার মতো অত্যন্ত শক্তিশালী আদালত।