অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়ার প্রস্তুতি চলছে: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী


বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়ার প্রস্তুতি
বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়ার প্রস্তুতি

করোনা মহামারী শুরুর পর ১৮ মাসের ওপর বন্ধ থাকা বাংলাদেশের স্কুল গুলো খুলে দেয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।

মঙ্গলবার ঢাকায় সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন সরকারের নির্দেশ পেলেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়া হবে । তিনি বলেন দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮৫ ভাগ শিক্ষককে ইতিমধ্যেই করোনা ভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়েছে এবং বাকি ১৫ ভাগ শিক্ষককেও দ্রুত টিকা দেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন স্কুল খোলার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা লাগবে। এখন যে পরিস্থিতি, হুট করে স্কুল খোলা যায় না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

জাকির হোসেন বলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলার প্রস্তুতি হিসেবে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকা স্কুলের ক্লাস রুমগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে এবং এ সকল স্কুলের শিক্ষকরাও নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছেন। স্কুল বন্ধ থাকায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাল্যবিবাহ বেড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সম্প্রতি ইউনিসেফ এবং ইউনেস্কো এক যৌথ বিবৃতিতে যে সকল দেশে এখনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয় নাই সেগুলো খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে স্কুলে যেতে না পারার কারণে শিশু এবং তরুণরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা হয়তো কখনোই পুষিয়ে নেয়া যাবে না। শেখার ক্ষতি, মানসিক সংকট, সহিংসতা ও নির্যাতনের সম্মুখীন হওয়া থেকে শুরু করে সামাজিক দক্ষতার বিকাশ কমে যাওয়া বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি তাদের শিক্ষাগত অর্জন এবং সামাজিক সম্পৃক্ততার ওপর দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়েছে বাংলাদেশে মহামারির পুরোটা সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চতর শিক্ষার স্তর পর্যন্ত ৪ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এদিকে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষ হওয়ার প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার ইউনিসেফ এর প্রকাশিত নতুন এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি শিশুর ক্ষেত্রে স্কুলের প্রথম দিন যা বিশ্বব্যাপী সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষার্থী ও তাদের বাবা-মায়েদের জন্য একটি বিশেষ মুহূর্ত তা করোনা ভাইরাসের কারণে বিলম্বিত হচ্ছে। এতে বলা হয়েছে এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৮০ লাখ এমন কিছু দেশে বসবাস করে যেখানে মহামারির পুরো সময়ে স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে এবং এ কারনে সশরীরে শিক্ষা গ্রহণের প্রথম দিনটির জন্য তারা এক বছরের বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় ৪০ লাখ প্রথম-বারের শিক্ষার্থীও রয়েছে বলে ইউনিসেফ এর বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইউনিসেফ এর নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন স্কুলের প্রথম দিন শিশুদের জীবনে উল্লেখযোগ্য এক মুহূর্ত যা তাদেরকে ব্যক্তিগত শিক্ষা অর্জন এবং বিকাশের ক্ষেত্রে একটি জীবন পরিবর্তনকারী পথে পরিচালিত করে। তিনি বলেন শিশুদের বেশিরভাগই স্কুলের প্রথম দিনের অসংখ্য ছোটখাটো স্মৃতি মনে রাখে যেমন কি পোশাক পরেছিল, শিক্ষকের নাম এবং কার পাশে বসেছিল। তবে লাখ লাখ শিশুর জন্য সেই গুরুত্বপূর্ণ দিনটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে হেনরিয়েটা ফোর বলেন যখন বিশ্বের অনেক জায়গায় ক্লাস পুনরায় শুরু হয়েছে তখন কয়েকটি দেশে প্রথম শ্রেণির লাখ লাখ শিক্ষার্থী এক বছরেরও বেশি সময় পর সশরীরে ক্লাসরুমে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে। তিনি বলেন আরও লাখ লাখ শিশুর হয়তো চলতি মেয়াদেও স্কুলে একেবারেই যাওয়া হবে না। যারা সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে রয়েছে তাদের জীবনে আর কখনোই স্কুলে ফিরতে না পারার ঝুঁকি প্রবল বেগে বাড়ছে বলে ইউনিসেফে এর নির্বাহী পরিচালক উল্লেখ করেন।

XS
SM
MD
LG