অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

আইসিসের সাবেক সদস্য শামিমা বাংলাদেশে ফিরে যেতে রাজি নন  


আইসিস বধূ শামীমা
আইসিস বধূ শামীমা

আইসিসের সাবেক সদস্য শামীমা বাংলাদেশে ফিরতে চান না।তার আশঙ্কা, বাংলাদেশে ফিরলে তাকে হত্যা করা হতে পারে।গুড মর্নিং ব্রিটেন অনুষ্ঠানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শামীমা এমনটাই জানিয়েছেন। তবে তিনি ফিরতে চান ব্রিটেনে। তার ভাষায়, আমি আইসিসে যোগ দিয়ে ভুল করেছি। আমি যে কাজ করেছি তা খুবই নিন্দনীয়। এ কাজের জন্য অন্যরা তাকে যেভাবে ঘৃণা করেন ঠিক ততোটা তিনি নিজেই নিজেকে ঘৃণা করেন। ২০১৯ সালে ব্রিটেন তার নাগরিকত্ব বাতিল করে দিয়েছে। বাংলাদেশও তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ব লন্ডনের একটি ফ্ল্যাট থেকে শামীমা নিখোঁজ হন। সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের আহমেদ আলীর মেয়ে শামীমা বেড়ে ওঠেন পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রীন এলাকায়। হঠাৎ একদিন খবর আসে শামীমা ব্রিটেনে নেই। তিনি দুই বান্ধবী আইসিসের খাদিজা সুলতানা ও আমিরা আবাসিদের সঙ্গে তুরস্ক হয়ে সিরিয়া পৌঁছে যোগ দেন জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস-এর সঙ্গে। তখন তার বয়স ১৯ বছর। এ সময় বিয়ে করেন একজন ডাচ নাগরিককে। যিনি ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ইন্টারনেটে জীবনকে দেখেছিলেন অন্যভাবে। হঠাৎ তার রঙিন স্বপ্ন ভেঙে যায়। চোখের সামনে মারা যায় তার এক সন্তান। দুই বান্ধবীর একজনও মারা যায়। বেথনাল গ্রীন একাডেমিতে তিন বান্ধবী পড়ালেখা করতেন। সেখানেই আইসিস মতাদর্শে দীক্ষা নেন।

সন্তান মারা যাওয়ার পর তার ঠাঁই হয় সিরিয়ার আল হাওল উদ্বাস্তু ক্যাম্পে। সেখান থেকেই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আইএস-এর খেলাফত আন্দোলন থেকে তিনি পালিয়ে গেছেন ভয়ে। যুদ্ধের ময়দানে যে কষ্ট তা তিনি সহ্য করতে পারতেন না। তাই তিনি নিজ দেশ অর্থা্ত্ ব্রিটেনে ফিরতে চান। ফিরতে চাইলেই তো ফেরা যাবে না। তিনি এখন রাষ্ট্রহীন। ২০১৯ সালে ব্রিটেন তার তার নাগরিকত্ব বাতিল করে বলেছে, ভয়ঙ্কর এই মহিলাকে গ্রহণ করার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় অন্য এক শামীমাকে দেখা যায়। হিজাব নেই, আছে পশ্চিমা পোশাক। পরনে টপ, মাথায় হ্যাট। চুলেও লেগেছে রঙ। শামীমা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, প্লিজ আমাকে গ্রহণ করুন। আমি অনেক কিছু জানি। সবকিছু খুলে বলবো। এগুলো আপনাদের কাছে দরকারি হতে পারে। আমি জানি, আপনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। এক্ষেত্রে আমি আপনাকে অনেক বেশি সাহায্য করতে পারি। কারণ আপনি পরিষ্কারভাবে জানেন না আসলে আপনি কি করছেন।

আমি ব্রিটিশ জনগণের কাছে একটি সম্পদ হতে চাই। তাদের কাছে হুমকি হতে চাই না। তার দাবি-তাকে প্ররোচিত করা হয়েছিল। নেয়া হয়েছিল তার দুর্বলতার সুযোগ। তবে এটা ঠিক, এই সিদ্ধান্ত নেয়াটা ছিল ভুল। শামীমা বলেন, সেখানে তিনি একজন স্ত্রী ও মা ছিলেন। বয়স কম ছিল। জানি, ব্রিটিশ জনগণ আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না। কারণ তারা আইসিসের আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। দুর্ভাগ্য হচ্ছে এখন আমি নিজেও আইসিসের আতঙ্কে আতঙ্কিত। আমি আগে জানতাম না মৃত্যুর অপর নাম আইসিস। অনেকে আইসিসের কারণে প্রিয়জনদের হারিয়েছেন। আমিও প্রিয়জন হারিয়েছি। তাই আমি নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার আর্জি জানাচ্ছি। উল্লেখ্য যে, ২০১৯ সনে শামীমার নাগরিকত্ব বাতিল করেছিলেন তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভেদ। বর্তমানে তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বলেছেন, আমি এটা মানবো না যে, শামীমা সিরিয়ায় শুধু মা আর স্ত্রীর ভূমিকায় ছিলেন। এটা আসলে মিথ্যাচার। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানতে পেরেছে, শামীমা সন্ত্রাসী গ্রুপের 'মোরালিটি পুলিশের' সদস্য ছিলেন। আত্মঘাতী বোমা নিয়ে ঘুরতেন। সঙ্গে থাকতো একটি কালাশনিকভ রাইফেল। শামীমা কি রাষ্ট্রহীন হয়েই থাকবেন? নাকি খুঁজে পাবেন ঠিকানা? এই প্রশ্নের জবাব এখনই দেয়া সম্ভব নয়।

XS
SM
MD
LG