গৃহযুদ্ধ এড়াতে দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সরানোর প্রয়োজন ছিল বলে দাবী করেছেন সুদানের সেনাপ্রধান জেনারেল আব্দেল-ফাত্তাহ বুরহান।
খারতুমে এক টেলিভাইসড সংবাদ সম্মেলনে জেনারেল বুরহান বলেন, “রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে গোটা দেশই অচল ছিল। গত দুই বছরের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে যে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে রাজনৈতিক মহলের অংশগ্রহণ ত্রুটিপূর্ণ এবং তা ঝগড়া বিবাদকে উস্কে দেয়”।
সোমবার গ্রেফতারকৃত প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লা হামদক ও তাঁর স্ত্রীকে মঙ্গলবার বাড়ী ফেরার অনুমতি দেয়া হলেও তাঁদেরকে কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
বুরহান স্বীকার করেছেন, “আমরা মন্ত্রী এবং রাজনীতিকদের গ্রেফতার করেছি, কিন্তু সবাইকে নয়”। তিনি বলেন কেউ কেউ দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহ সৃষ্টির অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হবে।
সুদানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একান্ত বৈঠক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, এস্তনিয়া,ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড এবং নরওয়ে এই বৈঠকের অনুরোধ করেছিল । সুদান থেকে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ভলকার পারথস সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে বর্ণনা করেন।
সেনা প্রধান বুরহান সোমবার জাতীয় জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন। পাশাপাশি তিনি জয়েন্ট সিভিলিয়ান-মিলিটারি সভরেন কাউন্সিল অর্থাৎ যৌথ অসামরিক-সামরিক স্বতন্ত্র পরিষদ বাতিল করেন। ঐ পরিষদ ২০১৯ সালে সুদানের দীর্ঘ সময়ের স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট ওমর-আল-বশির বহিষ্কৃত হবার পর থেকে গত দুই বছর সুদানের শাসনকাজ চালিয়ে এসেছে।
সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর সুদানের সাধারণ জনগণ রাজধানী খারতুমে রাজপথে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছেন। হামদক ও স্বতন্ত্র পরিষদের অন্যান্য কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানান তারা।
সুদানের ডক্টরস কমিটি জানায় বিক্ষভকারীদের ওপর নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে অন্তত চারজন নিহত ও ৮০ জন আহত হয়েছেন।
সুদানে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পক্ষ থেকে সে দেশে থাকা সকল অ্যামেরিকানকে নিরাপদ স্থানে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুটেরেজ, আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং আরব লীগ সোমবারের ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করে দেশটিকে অসামরিক শাসনের দিকে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
গুটেরেজ আশংকা প্রকাশ করেছে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অভ্যুত্থান বৃদ্ধির বিষয়েও। তিনি বলেন, “আমরা দেখছি অভ্যুত্থান বেড়েই চলেছে যা মূলত ঘটছে ভূ-রাজনৈতিক বিবাদ ও বিভক্তির কারণে”।
চলতি বছর অভ্যুত্থান ঘটেছে মিয়ানমার এবং আফ্রিকান দেশ নিজেয়ার, শ্যাড, মালি এবং গিনিতে।
হোয়াইট হাউস বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে সুদানকে দেয়া ৭০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা মূলতবি করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং নরওয়ে এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে তারা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানাচ্ছেন এবং অবৈধভাবে আটককৃত সকলকে মুক্তি দেয়ার জন্যে সুদানের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।
অর্থনীতিবিদ এবং কূটনীতিক হামদক জাতিসংঘে কাজ করেছেন। ২০১৯ সালে সুদানের পরিবর্তনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার জন্যে তাঁকে অনুরোধ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব এই পরিবর্তনকে শক্তভাবে সমর্থন করে যার ফলে সন্ত্রাসীর তালিকা থেকে সুদানের নাম বাদ দেয়া হয়।
তবে সুদানের সেনাবাহিনীর বড়ো একটি অংশ হামদকের বিরোধিতে করেন। সাবেক শাসক আল-বশিরের প্রতি অনুগত কিছু সেনা সদস্য ২১শে সেপ্টেম্বর প্রধান সেতুর দখল নিয়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে। সেই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয় এবং কয়েক ডজন সেনা সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
সেনা শাসনের প্রতিবাদে সুদানের রাজপথে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদে নেমেছেন। তারা স্লোগান দিচ্ছেন, “এই দেশ আমাদের,আমাদের সরকার অসামরিক সরকার”।
(প্রতিবেদনটির কিছু তথ্য ভিওএ ইংলিশ টু আফ্রিকাস সাউথ সুদান ইন ফোকাস রেডিও প্রোগ্রামের মাইকেল অ্যাটিট, ভয়েস অব আমেরিকার জাতিসংঘ সংবাদদাতা মারগারেট বশীর, এপি, রয়টার্স ও এএফপি থেকে নেয়া)।