অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে নতুন এক ‘নৈতিক’ মন্ত্রণালয় স্থাপন করলো তালিবান  


আফগানিস্তানের কাবুলে এক ব্যক্তি বন্ধ হয়ে যাওয়া মহিলা বিষয়ক মন্ত্রকের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১।
আফগানিস্তানের কাবুলে এক ব্যক্তি বন্ধ হয়ে যাওয়া মহিলা বিষয়ক মন্ত্রকের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১।

আফগানিস্তানের নতুন তালিবান শাসকরা “ সদগুণ প্রচার ও অধর্ম প্রতিরোধ” শীর্ষক একটি মন্ত্রক গঠন করেছে। এই মন্ত্রক সেই ভবনটিতেই স্থাপন করা হয়েছে যেটি একসময়ে নারী মন্ত্রনালয় ছিল। সেখান থেকে শনিবার বিশ্বব্যাংকের কর্মিদের জোর করেই সরিয়ে দেওয়া হয়। এটি হচ্ছে উদ্বেগের সর্বসাম্প্রতিক চিহ্ন যে তালিবান রাজধানী কাবুল দখলের এক মাসের মধ্যেই নিজেদের সরকারকে পাকাপোক্ত করার এই সময়টাতে তারা নারী অধিকারের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করছে। ১৯৯০’এর দশকে তাদের প্রথম শাসন আমলে তারা মেয়ে ও নারীদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এবং জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে।

অন্য আরেকটি ঘটনায় শনিবার পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ জালালাবাদের রাজধানীতে তালিবানের গাড়ি লক্ষ্য করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয় যাতে তিনজন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন। এই বিস্ফোরণের দায় তাত্ক্ষণিক ভাবে কেউ স্বীকার করেনি কিন্তু ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিরা যাদের সদর দপ্তর ঐ এলাকাতেই , তারা তালিবানের শত্রু।

এ দিকে তালিবান দেশ শাসন করার চেষ্টা করতে গিয়ে বড় রকমের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এবং আই এস বিদ্রোহীদের তরফ থেকে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ তাদের সম্পদের উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করছে। কাবুলে মহিলা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের বাইরে একটি নতুন বিজ্ঞপ্তি টানানো ছিল যাতে ঘোষণা করা হয় এখন থেকে এটি “ সদগুণ প্রচার ও দিকদর্শন এবং অধর্ম প্রতিরোধ মন্ত্রনালয়”।

নারী বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের ভেতর থেকে পরিচালিত বিশ্ব ব্যাংকের ১০ কোটি ডলারের নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচির কর্মিদের শনিবার সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এ কথা জানিয়েছেন ঐ কর্মসূচির একজন সদস্যা শরীফ আখতার যাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

আফগান নারী বিষয়ক নেটওয়ার্কের প্রধান মাহবুবা সুরাজ বলেন তালিবান পরিচালিত সরকার নারী ও মেয়েদের উপর বিধিনিষেধ বিষয়ক আদেশ যে ভাবে একের পর এক জারি করে চলেছে তিনি তাতে হতবাক হয়েছেন।

এ দিকে শনিবার তলিবান পরিচালিত শিক্ষা মন্ত্রক ৭ থেকে ১২ ক্লাসের ছেলেদের এবং তাদের পুরুষ শিক্ষকদের স্কুলে যেতে বলেছে তবে ঐ ক্লাসে পড়ছে যে মেয়েরা তাদের স্কুলে ফিরে যাবার বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। ‘এর আগে উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক তালিবান মন্ত্রী বলেছিলেন মেয়েদেরও সমান শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হবে যদিও তাদেরকে ছেলেদের থেকে আলাদা রাখা হবে । সুরাজ বলেছেন , “ এটা সত্যি, … সত্যিই উদ্বেগের বিষয় । এ পর্যায়ে এসে কি মেয়েদের ভুলে যাওয়া হবে ? আমি জানি তারা ব্যাখ্যা প্রদানে বিশ্বাস করে না কিন্তু ব্যাখ্যা দেওয়াটা খুবই জরুরি”।

সুরাজ অনুমান করছেন যে ঠিক যখন তালিবান তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাইছে তখন এই পরস্পর বিরোধী বিবৃতি সম্ভবত তালিবানের ভেতরে বিভক্তিকেই তুলে ধরছে। তাদের মধ্যকার বাস্তববাদিরা কট্টরপন্থিদের কাছে হেরে যাচ্ছে , অন্তত এখনকার মতো।

তালিবান নেতৃত্বের বিবৃতিগুলি প্রায়শই এ কথাটাই তুলে ধরে যে তারা গোটা বিশ্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চায়, নারী ও মেয়েদের জন্য প্রকাশ্য স্থান খুলে দিতে চায় এবং আফগানিস্তানের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা করতে চায় । তবে বাস্তবে তারা তাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের যে সব আদেশ দিচ্ছে তা সম্পুর্ণ বিপরীত। বিশেষত নারীদের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হয়েছে।



XS
SM
MD
LG