অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ট্রাম্পের মুসলমান বিরোধী বক্তব্যে বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া


সিরওয়ান কাজ্জো, ওয়াশিংটন

যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৬ সালের প্রসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের প্রবেশ করতে না দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন তিনি নিজে ইসলামোফোবিক এবং তা ঘৃণা করেন।

এক মুসলমান দম্পতি কর্তৃক ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নার্ডিনোয় গত সপ্তাহের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ১৪ জন নিহত হবার পর; সাউথ ক্যারোলাইনায় এক সমাবেশে ডনাল্ড ট্রাম্প তার প্রস্তাবে, “যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের প্রবেশের ওপর সম্পূর্নভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের’ কথা বলেন।

মিশরের প্রখ্যাত ইসলামি আইন বিষয়ক প্রতিষ্ঠান দার আল-ইফতারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসলাম এবং মুসলমানদের প্রতি এ ধরণের শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব আমেরিকান সমাজে উত্তেজনা বৃদ্ধি করবে; যার মধ্যে প্রায় ৮০ লক্ষ শান্তিপূর্ন ও অনুগত মুসলমান রয়েছেন”।

আফগানিস্তানের সংসদ সদস্য কামাল নাসার অসলি, ভয়েস অব আমেরিকার আফগান সার্ভিসকে বলেন, “তিনি (ট্রাম্প) একজন অসুস্থ লোক”। তিনি আরো বলেন, “আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা এ ধরনের একটি লোককে ভোট দেবে না”।

পাকিস্তানের মুসলমান বুদ্ধিজীবিদের সংগঠণ উলেমা কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট তাহির আশরাফি বলেন ট্রাম্পের মন্তব্য শুধুমাত্র ঘৃণা ও সংঘাতকে উস্কে দেয়।

রয়টারের কাছে তিনি বলেন, “যদি কোনো মুসলমান নেতা বলেন মুসলমান ও খ্রীষ্টানদের মধ্যে যুদ্ধ চলছে; আমরা তার নিন্দা জানাই। আর একজন আমেরিকান যখন তেমন কোনো কথা বলেন আমরা কি তার নিন্দা জানাবো না?”

পাকিস্তানের সেনেটর, সাবেক মন্ত্রী আফতাব আহমাদ খান শেরপাও বলেন, আমেরিকানেরা ট্রাম্পের নেতৃত্ব মানবে না। উর্দু সার্ভিসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “সম্ভবত ক্ষীণ চিন্তা থেকে (ট্রাম্প) তিনি মনে করেন এ ধরণের বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রে তার পক্ষে সমর্থণ বাড়বে। কিন্তু তিনি ভুল ভেবেছেন; কারণ আমেরিকানরা ধর্মীয় সম্প্রীতির মধ্যে বসবাস করেন”।

পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দল মুসলিম লীগের সংসদ সদস্য তালাত চৌধুরী বললেন, ট্রাম্পের মন্তব্য বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করবে। ভয়েস অব আমেরিকাকে তিনি বলেন, “সারা পৃথিবীর মানুষ সেখানে (যুক্তরাষ্ট্রে) গিয়ে বসবাস করতে চায়, এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম কানুনের সঙ্গে নিজেদেরকে মানিয়ে নেয়। তাই আমি মনে করি (ট্রাম্প যা করেন) তা তাদের নিজেদেরই রাজনীতি ও ভাবমূর্তির বিরুদ্ধে যায়”।

বিশ্বের সর্বোচ্চ মুসলমান জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এক মুখপাত্র আরমানাথা নাসির অন্যান্য দেশের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা নিয়ে কথা বলতে চান না; তবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করেন।

রয়টারকে তিনি বললেন, “সন্ত্রাসবাদের কোনো ধর্ম, দেশ ও জাত নেই”। তবে ইন্দোনেশীয়ার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ট্রাম্পের বক্তব্যের সরাসরি সমালোচনা করেছে।

দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলমান সংগঠণ মুহাম্মাদিয়াহ’র প্রধান দিন সামসুদ্দিন বলেন ট্রাম্পের মন্তব্য ছিল কৌতুকের মতো, “এটা হাস্যকর যে এই আধুনিক বিশ্বায়নের যুগেও এমন একজন মানুষ আছেন যিনি যুক্তরাষ্ট্রে, কিছু মানুষ প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো সংকীর্ণ চিন্তা ভাবনা পোষণ করেন”।

বাংলাদেশের মানুষেরা শংকিত যে ট্রাম্পের মন্তব্য পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে ইসলামিক সম্পর্ক আরো জটিল হয়ে যায় কিনা। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী জনৈক মোহাম্মদ মুসা ভয়েস অব আমেরিকাকে জানান, “ট্রাম্পের মন্তব্যে আমরা শংকিত। আমরা উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত আমাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে নিয়ে”।

বাংলাদেশের খুলনা থেকে শাহাদাৎ হুসেন বলেন, “ট্রাম্পের বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের আদর্শ ও মূল্যবোধের সঙ্গে যায়না। এ ধরনের মন্তব্য আমাদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে”।

সৌদী আরব থেকে একজন টুইটারে জানান ট্রাম্পের এ ধরনের বক্তব্যের জবাবে বলতে চাই আমরাও এখানে এ্যারামকোসহ অন্যান্য তেল কোম্পানীতে কর্মরত আমেরিকানদেরকে চাকুরীচ্যুত করবো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সৌদী আরব থেকে অপর একজন টুইটারে লিখেছেন ট্রাম্প অচিরেই আমেরিকা থেকে সকল মুসলমানদেরকে বহিষ্কার করার ঘোষণা দেবেন।

বহুল প্রচারিত মিশরীয় সংবাদপত্র তাহরির নিউজের ফেসবুক পেইজে করা এক জরিপে প্রশ্ন রাখা হয়- ট্রাম্পের মুসলমান বিরোধী মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে তার জনপ্রিয়তায় এবং তার প্রেসিডেন্ট পদের জন্যে লড়াইয়ে প্রভাব ফেলবে কি না।

টুইটারে প্রখ্যাত মিশরীয় সেতার বাদক বাসেম ইউসেফ বলেন, “আমি জানতাম না যে ডনাল্ড ট্রাম্প এ্যাতো ভালো নাৎসীবাদী”।

XS
SM
MD
LG