সেলিম হোসেন
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অভিবাসন ও শ্রম বিষয়ে জাতিসংঘের এক নতুন রিপোর্টে বলা হয়েছে অভিবাসন থেকে অর্থনৈতিক অর্জন প্রায়শই গুরুত্বহীন থাকে এবং চরম অসমতা ও মানবাধিকার লংঘন বিষয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নীতিমা্লা করার আহবান জানিয়েছে। ব্যাংকক থেকে ভয়েস অব আমেরিকার সংবাদদাতা রন কোরবেনের রিপোর্ট থেকে শোনাচ্ছেন সেলিম হোসেন।
২০১৩ সালে সারা বিশ্বে ২১ কোটি ৩০ লক্ষ অভিবাসি হন যাদের ৫ কোটি ৯০ লক্ষের বাস এশিয়া প্রশান্ত মহাসারীয় অঞ্চলে। ১৯৯০ থেকে শুরু হয় এই ধারা।
চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘ প্রকাশিত রিপোর্ট বলা হয় সারা বিশ্বে ৯ কোটি ৫০ লক্ষ অভিবাসি এশিয়া প্রশান্তমহাসারীয় অঞ্চল থেকে আসা। গত দুই দশকে এই ধারা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। রিপোর্টে বলা হয় এই ধারা অব্যাহত রইবে।
জাতিসংঘের এশিয়া প্রশান্ত মহাসারগীয় অঞ্চলের জন্যে বিভাগ Economic and Social Commission for Asia and the Pacific (UNESCAP) এর উপ নির্বাহী সচিব Hongjoo Hahm বললেন:
“অর্থনৈতিক অর্জন হচ্ছে- কেনো অভিবাসিরা অভিবাসি হয় এবং আমরা দেখছি তারা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে যাচ্ছে। এশিয়ায় অন্যতম প্রধান একটি লক্ষন হচ্ছে অভিবাসন ঘটছে দক্ষিন থেকে দক্ষিনে; তবে যারা গাল্ফ বা উপসাগরীয় অঞ্চলে যাচ্ছেন সেগুলো ছাড়া”।
প্রতি বছর প্রায় ২০ লক্ষ ফিলিপিনো বিদেশে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ থেকে অভিবাসি হয়ে বিদেশে যাচ্ছেন বছরে ৫ লক্ষ্যেরও বেশী মানুষ। ভারত ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তান থেকেও বছরে সমপরিমান মানুষ বিদেশে পাড়ি জমান।
প্রধান গন্তব্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রুনাই দারুসসালাম, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, রাশিয়ান কনফেডারেশন, সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ড।
তবে কিছু গন্তব্য-দেশ কড়াকড়ি আরোপ করায় অভিবাসিদের অধিকার ও তাদের সামাজিক নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকে। জাতিসংঘ রিপোর্ট বলা হয় এ ধরনের কড়াকড়ি আরোপ বেশিরভাগ সময়ই অর্থনৈতিকভাবে অযৌক্তিক এবং তা মানবাধিকার ক্ষুন্ন করে।
UNESCAP’s Hongjoo বলেন এতে করে অভিবাসিদের স্থানীয় বেতনের এপর প্রভাব পড়ে, অসমতার বিষয়টি স্পষ্ট হয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে।
“অপরদিকে আমরা দেখি অভিবাসিদের বেতনের ওপর প্রভাব পড়া বা তাদরকে বৈষম্যের আওতায় ফেলাটা অভিবাসিদের চেয়ে প্রভাব পড়ে যে দেশে তারা থাকেন সেখানকার অর্থনীতির ওপরও। অভিবাসিদরকে যদি ভালো চাকরী দেয়া হয়, তাদেরকে যদি নিজেদের লোক মনে করা হয়, দেশের অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করে জাতীয় শ্রমের অওতায় আনা হয়, তাতে সেই দেশ উপকৃত হয়, জাতীয় অর্থনীতির উপকার হয়”।
তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উপ পরিচালক রবার্টসনের এর মতে আঞ্চলিক সরকারসমূহ, যেমন মালয়েশিয়ান সরকার, চান স্বল্প মেয়াদী অনিয়মিত অভিবাসি; সেখানে বহু অভিবাসিকে অনিয়মিত অথবা আন্ডারগ্রাউন্ডে রাখা হয় অত্যন্ত অনিরাপদ ভাবে”।
“দেশের জাতিয় নিরাপত্তার জন্যে ঝুকি মনে করে সবকিছুর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়না শরনার্থী এবং অভিবাসিদেরকে। এই অবস্থা দেখা যায় থাইল্যান্ডেও। সেখানে প্রায়শই অভিবাসি বা শরনার্থীদেরকে উচ্ছৃংখল জনতা বলা হয়। মালয়েশিয়াতে শরনার্থীদেরকে দেশের আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির আওতার বাইরে রাখভার প্রয়াস চলে আসছে। তাদেরকে কাজের অধিকার দেয়া হচ্ছে না”।
রবার্টসন বলেন, দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার সংগঠন ASEAN ব্যার্থ হয়েছে অভিবাসিদের কাজের জন্য আঞ্চলিক নীতিমালা তৈরীতে; যাতে তাদের অধিকার নিয়ে দেন দরবার করা সম্ভব হয়।
জাতিসংঘের অর্থনীতিবিদরা বলছেন ভবিষ্যতে অভিবাসনের ধারা প্রভাবিত হবে ভৌগলিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে; বিশেষ করে ওইসব অঞ্চলে যেখানে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এজন্যে মানবাধিকার রক্ষার প্রতি সম্মান প্রদর্শন নিশ্চিত করা, অভিবাসিদের জন্যে ভালো কাজের সুযোগ নিশ্চিত করা এবং দেশের নাগরিক ও অভিবাসিদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিধান রেখে সঠিক নীতিমালা প্রনয়নের আহবান জানান তারা।