অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহবান


জাতিসংঘ সাধারন পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যের অন্যতম প্রধান একটি বিষয় ছিলো রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের পথ নিয়ে
জাতিসংঘ সাধারন পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যের অন্যতম প্রধান একটি বিষয় ছিলো রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের পথ নিয়ে

জাতিসংঘ সাধারন পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যের অন্যতম প্রধান একটি বিষয় ছিলো রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের পথ নিয়ে। আলোচনায় বক্তারা এই সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহবান জানান।

করোনা মহামারীর মধ্যে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদরদপ্তরে শুরু হয়েছে জাতিসংঘ সাধারন পরিষদের ৭৫তম অধিবেশন। প্রথম দিনের অধিবেশনে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যের অন্যতম প্রধান একটি বিষয় ছিলো রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের পথ নিয়ে। আলোচনায় বক্তারা এই সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহবান জানান।

চতুর্থ বছরে রোহিঙ্গা সংকট: স্থায়ী সমাধানের পথের বাধাসমূহ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক বাংলাদেশ, সৌদী আরব, সিরিয়া ও কানাডা।

শুরুতে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। তিনি বলেন, “মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের সীমান্তের কাছে বিপুল সংখ্যক সৈন্য মোতায়েন করেছে। স্থানীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে যে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোকে লক্ষ্য করে আরেকটি অভিযান চলছে। এই সাম্প্রতিক খবর বাংলাদেশের জনগণকে আতঙ্ক এবং হতাশার মধ্যে রেখেছে। এই সব কিছুর মধ্যে সীমান্ত জুড়ে আরো বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা নতুন করে শুরু হয়েছে”।

তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা সংকট শুধু মানবাধিকার সংকট নয়, এটি একটি রাজনৈতিক সংকট। আর এর সমাধান হবে শুধুমাত্র রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফিরে যাবার মাধ্যমে”।

দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বরাত দিয়ে রাবাব ফাতিমা বলেন, “রোহিঙ্গা শরনার্থীদেরকে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে দ্বিপাক্ষিক প্রচেষ্টার পরও কোনো ফলাফল আসছে না। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে শক্তিশালি পদক্ষেপ আশা করি। অন্যথায়, এই সঙ্কট অনেক বড় এবং আরো গুরুতর একটি সংকটের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার একটি সত্যিকারের ঝুঁকি রেয়েছে”।

জাতিসংঘে সৌদী আরবের স্থায়ী প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল ওয়ালিমি বলেন, গাম্বিয়ার পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক আদালতে যে মামলা হয়েছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে, বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের আস্থা আছে এবং আশা করি সুবিচার আসবে। এটা মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।

“আমরা আশা করি যে মিয়ানমার সরকার এই ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করবে এবং রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ন এবং টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে”।

জাতিসংঘে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ফেরিদান হাদি সিনিরলিওগ্লুর বক্তব্য পড়ে শোনান তুরস্ক মিশনের উপ প্রধান মিস বিলকে কারবা। তিনি বলেন,

“মিয়ানমারের পরিস্থিতি বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক এবং মানবাধিকার সংকটের একটি, যেমনটা মহাসচিব বর্ণনা করেছেন। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে যখন কোভিড মহামারীর কারণে বিশ্ব এক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এতে শরণার্থী এবং আন্তর্জাতিকভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষদের দুর্বলতা আরো উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে”।

তিনি বলেন “বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে এই বেদনাদায়ক সংকটের মুখোমুখি হওয়া আমাদের ভাই বোনদের আমরা একা ছেড়ে যাবো না। বাংলাদেশ এবং অন্যান্যদের সাথে কাজ করার জন্য তুরস্কের প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তি করতে চাই। এই সংকটের একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজতে হবে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত যেমনটি উল্লেখ করেছেন- এটা শুধু মানবিক সংকট নয়, রাজনৈতিক সংকটও। আর সেভাবেই তার সমাধান হবে, আশা করছি”

জাতিসংঘে কানাডার স্থায়ি প্রতিনিধি বব রায়ে বলেন, সারা বিশ্বের বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মতো কানাডার রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সদস্যরাও এই সংকট নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই অধিবেশনে আসার আগেও বেশ কয়েকজনের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তাদেরকে তিনি বলেছেন,

“আমরা নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ অদিবেশনে সমাধানের পথ নিয়ে কথা বলবো। চেষ্টা করবো যাতে রোহিঙ্গাদের সফলভাবে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের পথ বেরিয়ে আসে যাতে, পূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার ও মর্যাদা সহ তারা ফেরত যেতে পারে”।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উইপস্খথাপন করেন মিয়ানমার বিষয়ক স্বাধীন তদন্ত সংস্থা এর প্রধান নিকোলাস কমজিয়ান। তিনি ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশ ও কানাডা, সৌদি আরব, তুরস্ক প্রজাতন্ত্র এবং যুক্তরাজ্যকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি তোলার জন্যে।

তিনি বলেন, সংকট নিরসনে আমরা অব্যহতভাবে কাজ করে চলেছি। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, “কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি যে আমাদের কাজ করা এবং তা দৃশ্যমান করার চেয়ে মানুষকে সচেতন করা দরকার যে আমরা সক্রিয়ভাবে সংকট সমাধানে দেন দরবার করে চলেছি। অন্যান্য বক্তা যেমনটি বললেন মিয়ানমারের অবস্থা এখনো ভালো নয়, জটিল। সেখানে প্রায়শই এখনো অসামরিক লোকজন মারা যাচ্ছেন। আমাদের সেসব বন্ধে আশু পদক্ষেপ নিতে হবে”।

আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন প্রধান ড. ওয়াকার উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের সব ধর্ম বর্ণের মানূষজন একসঙ্গে বাস করতে চায় আমাদের পুর্বপুরুষের মতো। মিয়ানমার সরকারকে তা করে দিতে হবে। দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদী সমাধান আসতে হবে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে। আমাদের এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর দমন নির্যাতন বন্ধ করে সহাবস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তা কি সম্ভভ? নিশ্চই সম্ভব। সবাইকে এক কন্ঠে সমস্বরে চাপ দিতে হবে মিয়ানমারের ওপর। আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও বিদেশে থাকা রোহিঙ্গাদেরকে সমন্বিতভাবে চাপ দিতে হবে মিয়ানমারের ওপর।


XS
SM
MD
LG