অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

দুর্ঘটনাবশত ড্রোন হামলায় ওয়াইনস্টাইনের নিহত হওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেণ্ট ওবামাঃ ভয়েস অফ আমেরিকার বিশেষ প্রতিবেদন


আমেরিকার ত্রাণকর্মী ওয়ারেন ওয়াইনস্টাইন-কে ২০১১ সালের আল-কাইদা অপহরণ করে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাবশত যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ড্রোন হামলায় তিনি মারা গেছেন। এর আগে তিনি ওবামা প্রশাসনের কাছে তাঁর মুক্তি দাবী করেন।

অজ্ঞাত পরিচয় বন্দুকধারীরা ৭৩ বছরের ওয়ারেন ওয়াইনস্টাইনকে ২০১১ সালের ১৩ই অগাস্ট অপহরণ করে। ওয়ারেন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড রাজ্যের রকভিলে বাস করতেন। তিনি ইউ-এস-এ-আইডির হয়ে একজন ব্যবসা উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে পাকিস্তানে কাজ করছিলেন। তিনি ৭ বছর ধরে সেখানে কাজ করছিলেন, যখন একদিন একদল বন্দুকধারী তাঁর বাড়িতে ঢুকে তাঁকে ধরে নিয়ে যায়।

তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাঁকে যারা ধরে নিয়ে গেছে তাঁরা কাপুরুষ। শেষপর্যন্ত যেখানে এবং যখন তাঁকে মারা হলো, তা ইসলামের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এজন্যে তাদেরকে আল্লাহ’র কাছে জবাব দিতে হবে। তাঁর স্ত্রী বলেছেন, সারাজীবন ওয়ারেন পৃথিবীর মানুষের জন্যে কাজ করেছেন। তিনি কাজ ভালবাসতেন, মানুষের জীবনের মানোয়ন্নয়নের চেষ্টা করেছেন। তিনি পাকিস্তানের জনগণ এবং সংস্কৃতিকে ভালবাসতেন, শ্রদ্ধা করতেন। তিনি উর্দুও বলতে শিখেছিলেন।

২০১১ সালের মে মাসে আল-কাইদা একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে ওয়ারেনকে প্রেসিডেণ্ট বারাক ওবামাকে উদ্দেশ্য করে বলতে দেখা গেছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ঐ জঙ্গীদলের দাবী মেনে না নেয় তাহলে, তাঁকে মেরে ফেলা হবে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আল-কাইদার মিডিয়া শাখা প্রায় ৩ মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশ করে।

২০১৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ আবারও তিনি প্রেসিডেন্ট ওবামার কাছে মিনতি জানান। সেবার, সেই ১৩মিনিটের ভিডিওটি বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচার করা হয়। ঐ ভিডিওতে তাঁকে দেখে মনে হয়েছে তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়েছে এবং তিনি ক্লান্ত। তিনি বলেছেন, তাঁর স্বাস্থ্য ভাল যাচ্ছে না ও তাঁর মনে হচ্ছে তাঁকে সম্পূর্ণভাবেই পরিত্যাগ করা হয়েছে, সবাই তাঁর কথা ভুলে গেছে।

ওয়ারেন হার্টের সমস্যা ছিল এবং সেজন্যে বিশেষ ওষুধের প্রয়োজন। সেইসঙ্গে তিনি উচ্চরক্তচাপ এবং অ্যাজমার সমস্যায়ও ভুগছিলেন। তাঁর পরিবার আশংকায় ছিল, তিনি বুঝি আর বাঁচবেন না বা পাকিস্তানী বাহিনী তাঁকে ভুলে মেরে ফেলবে।

সেসময়টাতে আল-কাইদা বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্র যদি আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সোমালিয়া ও ইয়েমেনে বিমানহামলা বন্ধ করে তাহলে তারা ওয়ারেনকে ছেড়ে দেবে। তাদের আরেকটি দাবী ছিল পৃথিবীর নানা প্রান্তে আল-কাইদার যেসব সদস্যকে আটকে রাখা হয়েছে, তাদের যেন ছেড়ে দেয়া হয়।

হোয়াইট হাউস ওয়ারেনের মুক্তি দাবী করে...।অবশ্য সেইসঙ্গে তাঁর এও বলেছে, তাঁরা আল-কাইদার সঙ্গে কোন দরকষাকষিতে রাজী নয়।

ওয়ারেনের স্ত্রী এলেইন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তন তাঁর স্বামীর সাধ্যের মধ্যে ছিল না। যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের সরকার তাঁকে আশ্বস্ত করেছিল, তাঁর স্বামীর মুক্তির জন্যে তাঁরা যথাসাধ্য করছে।

২০১৪ সালের ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এলেইন বলেছেন, তাঁর নাতি-পুতি রয়েছে। তিনি জানেন পাকিস্তানীরা বড়দের সম্মান করে। তাঁর স্বামীকেও যাতে সম্মান করা হয় এবং পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তাঁর স্বামী যদি ঐ ভিডিওটি দেখেন তাহলে তাঁর মনে পড়বে, তাঁকে তাঁরা কতটা ভালবাসেন।

হাফিজ ইমরান নামের এক ব্যক্তিকে এই অপহরণের জন্যে দায়ী করা হয়। ২০১৫ সালের ৭ই জানুয়ারী পাকিস্তানের সন্ত্রাস-বিরোধী আদালত তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়।

পেশোয়ারের স্কুলে জঙ্গীহামলায় ১শ৫০জন মারা গেলে পাকিস্তান আবারও মৃতুদন্ড পুনর্বহাল করে। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল শিশু।

XS
SM
MD
LG