অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অনুদান গ্রহণে সম্মতিপত্র দিতে আবারও সময় চেয়েছে বাংলাদেশ


দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি বাড়াতে ঢাকায় বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর যৌথ মহড়া চলাকালীন একজন আমেরিকান সৈনিক (ডানদিকে) এবং একজন বাংলাদেশী সৈন্য। (ফাইল ছবি) ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২।
দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি বাড়াতে ঢাকায় বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর যৌথ মহড়া চলাকালীন একজন আমেরিকান সৈনিক (ডানদিকে) এবং একজন বাংলাদেশী সৈন্য। (ফাইল ছবি) ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২।

সামরিক ও আইন প্রয়োগকারী বাহিনীগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান গ্রহণ করতে নতুন যে শর্ত দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে সম্মতিপত্র দিতে সময় নিচ্ছে বাংলাদেশ। এক দফা সময় বাড়ানোর পর আবার নতুন করে সময় চাওয়া হয়েছে। এবার নতুন কোনো তারিখ উল্লেখ করা হয়নি।নতুন শর্ত অনুযায়ী কোন কোন বাহিনীর উন্নয়নে কীভাবে অনুদানের অর্থ ব্যয় হবে-তা আগাম জানাতে হবে।

১লা ডিসেম্বর ঢাকায় পাঠানো চিঠিতে ১৫ই ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক জবাব বা ‘সম্মতিপত্র’ পাঠানোর সময় বেঁধে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।কিন্তু এই সময়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর মধ্যে আলোচনা শেষ করতে না পারায় ১৫ দিনের সময় বাড়ানোর অনুরোধ করে ঢাকা।যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই অনুরোধ আমলে নেয়া হয়েছিল।কিন্তু নির্ধারিত সময়েও এ বিষয়ে সম্মতিপত্র তৈরি না হওয়ায় আবারো সময় বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছে। ঢাকাস্থ আমেরিকান দূতাবাসে কূটনৈতিক পত্র পাঠিয়ে ওই সময় চাওয়া হয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলসূত্র নিশ্চিত করেছে।

প্রথম দফা সময় বাড়ানোর চিঠিতে নির্ধারিত তারিখ উল্লেখ করা হলেও এবার তা করা হয়নি।দ্রুততম সময়ের মধ্যেই ঢাকার ‘সম্মতিপত্র’ ওয়াশিংটন পাঠানো হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

উল্লেখ করা যায় যে, ১৯৬১ সালে প্রবর্তিত আমেরিককান লিহেই আইনে সম্প্রতি সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের কাছে লিহেই আইনের সংশোধনী পরবর্তী করণীয় নিয়ে নির্দেশনা পাঠিয়েছে।ওই আইনে নতুন সংযোজিত ধারায় বলা হয়েছে, কোনো দেশের নিরাপত্তা সংস্থা বা বাহিনী যদি নির্যাতন, আইনবহির্ভূত হত্যা, গুম ও ধর্ষণজনিত কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে ওই সংস্থাকে অনুদান দিতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। এক্ষেত্রে আমেরিকান নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে এমন কোনো সংস্থা বা বাহিনীও অনুদান পাবে না।এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান যেসব দেশ পেতে চায় তাদের বরাদ্দ কোন কোন বাহিনী পাবে এবং তা কীভাবে হচ্ছে তা আগেই জানাতে হবে।

অতীতে শর্তহীনভাবে বাংলাদেশকে সামরিক অনুদান দিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র।এ সংক্রান্ত কোনো চুক্তি বা কোনো শর্ত ছিল না। ওই অনুদান বিভিন্ন বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যয় হয়।

সম্প্রতি র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নবা র‍্যাবের বর্তমান ও সাবেক ৭ জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ঢালাও অনুদান গ্রহণের বিষয়টি কিছুটা জটিল হয়ে পড়েছে। এ কারণে ভেবে চিন্তে সম্মতিপত্র তৈরি করতে সময় লাগছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। যদিও ওই নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে নতুন আইনের কোনো যোগসূত্র নেই বলে মনে করছে ঢাকা।

গত ২৮শে ডিসেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষিত রেখেই সম্মতিপত্র পাঠানো হবে। ওই পত্রে বাংলাদেশের স্বার্থের বিষয়গুলো উল্লেখ থাকবে।যুক্তরাষ্ট্র প্রদেয় সামরিক অনুদান কোথায় ব্যবহার হবে সে বিষয়ে আমেরিকান আইনের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে সরকার সচেতন রয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, আমরা এ বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত। তাদের সব শর্তই মোটামুটিভাবে আমরা মানি।

বাংলাদেশ ২০১৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার অনুদান পেয়েছে। ওই সহায়তার উল্লেখযোগ্য অংশ বঙ্গোপসাগরের নিরাপত্তা বাড়াতে ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া ২০১৩ ও ২০১৫ সালে বাংলাদেশকে দুটি হ্যামিলটন কাটার নৌজাহাজ উপহার দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীকে সহায়তার জন্য ৫০টি মাল্টি রোল আর্মাড পার্সোন্যাল ক্যারিয়ারও দেয়া হয়েছে দেশটির তরফে। ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের জন্য প্রায় ৩৮০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে দেশটি। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ২০১২ সালে ১৮ কোটি ডলারের চারটি সি ১৩০ পরিবহন বিমান পেয়েছে বাংলাদেশ।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ১১০ কোটি টাকা মূল্যের ড্রোন দেয়ার অঙ্গীকার করেছে।

XS
SM
MD
LG