মিয়ানমারে গত নির্বাচনের পর, মিয়ানমার বা বার্মায় সামরিক বাহিনী ও ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি দলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে, যে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন পার্টি বিপুলভাবে জয়যুক্ত হয়েছিল I সোমবার সকালে, সেই উত্তেজনার পরিসমাপ্তি টেনে, সামরিক বাহিনী পরিচালিত টিভিতে জানানো হয়, যে, নভেম্বরের নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির ব্যাপারে সেনাবাহিনীর দাবির যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেয়াতে, জরুরি আইনের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করছে I
মিয়ানমারের কার্যতঃ প্রধান, অং সান সু চি ও অন্যান্য নেতাদের আটক করার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এই ঘোষণা দেয়া হয়, যে ঘোষণায় জনগণের মাঝে সম্ভব্য সামরিক অভ্যুথানের আশংকা বাড়তে থাকে I
আজ, পহেলা ফেব্রূয়ারি, নুতন নির্বাচিত সংসদের প্রথম অধিবেশনে বসার কথা ছিল I নির্বাচন পরবর্তী উত্তেজনার মাঝে, গত সপ্তাহে সামরিক বাহিনী অস্বাভাবিক হারে রাজধানী, নেপিদ এবং অন্যান্য বড় বড় শহরে ট্যাংক ও সেনা মোতায়েন শুরু করে I বিবিসি সংবাদ মাধ্যম জানায়, ইয়াংগুন ও অন্যান্য শহরগুলিতে টেলিফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রয়েছে I
ক্ষমতাসীন পার্টির মুখপাত্র, ম্যুও ন্যুন্ট বলেন, " আমরা জনগণকে জানাতে চাই, তড়িৎ কোনো পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকুন এবং আইনমাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন I এতটুকু বলতে পারি, সামরিক বাহিনী আমাদের সকল গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেফতার করেছে,যাকে সামরিক অভ্যুথান বলা যায়" I
হোয়াইট হাউজ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র, বার্মার সামরিক বাহিনী দেশের গণতান্ত্রিক হস্তান্তরকে ধ্বংস করার যে প্রয়াস চালিয়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন I যুক্তরাষ্ট্র সেদেশের সামরিক ও অন্যান্য দলগুলিকে গণতান্ত্রিক ধারা ও আইনের শাসন মানতে ও আটককৃত সবাইকে মুক্তি দিতে অনুরোধ জানাচ্ছে I
১৯৪৮ সাল পর্যন্ত, বার্মা ছিল ব্রিটিশ শাসিত একটি কলোনী I তারপর ১৯৬২ থেকে ২০১০ সাল অব্দি দেশটি পরিচালনা করেছে সামরিক বাহিনীর সমর্থনপুষ্ট স্বৈরশাসকেরা I ১৯৯০ সালের নির্বাচনে 'ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি দল জয়লাভ করলে, স্বাধীনতার বীর যোদ্ধা, জেনারেল অন সান'র কন্যা, অন সান সু চি, বার্মার জনপ্রিয় নেত্রী হিসাবে আবির্ভুত হনI গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্য, ১৯৯১ সালে, গৃহবন্দী অবস্থায় তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয় I
তবে, দেশের মুসলমান সংখ্যালঘু রোহিঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের আচরণের কারণে এবং ২০১৭ সালের সামরিক হামলায়, প্রায় ৮ লক্ষ রোহিঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী, পার্শ্ববর্তী দেশ, বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন I বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধী আদালতে, বার্মার বিরুদ্ধে মানবতা লংঘনের তদন্ত শুরু হয়েছে I