অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

নারী কন্ঠ: মেগান মার্কেলের কথা এবং ভারতে মেয়েদের চাকরীর ক্ষেত্রে সমতা আনার প্রচেষ্টা প্রসঙ্গ


Britain Royal Engagement
Britain Royal Engagement

আজ নারী কন্ঠে, আমেরিকান অভিনেত্রী এবং মানবাধিকার কর্মী মেগান মার্কেল যিনি ইংল্যান্ডের প্রিন্স হ্যারি কে বিয়ে করতে যাচ্ছেন তাঁর কথা এবং ভারতে মেয়েদের চাকরীর ক্ষেত্রে সমতা আনার একটা প্রচেষ্টার কথা আপনাদের শোনাব।

please wait

No media source currently available

0:00 0:11:40 0:00

মেগান মারকেল এ সপ্তাহান্তে ইংল্যান্ডের প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন।১৯ মে সবার চোখ থাকবে সেই রাজকীয় বিয়ে টেলিভিশনের পর্দায় দেখার জন্য। VOA র সংবাদদাতা মারিয়ামা দিয়ালো মেগান মার্কেল সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানিয়েছেন।

Britain's Prince Harry and Meghan Markle attend a Service of Thanksgiving and Commemoration on ANZAC Day at Westminster Abbey in London, April 25, 2018.
Britain's Prince Harry and Meghan Markle attend a Service of Thanksgiving and Commemoration on ANZAC Day at Westminster Abbey in London, April 25, 2018.

মেগান মার্কলের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে এবং তিনি সেখানেই বড় হন। তিনি একজন অভিনেত্রী, মডেল এবং মানবাধিকার কর্মী। ছেলে বেলা থেকে যারা তাকে চেনেন তারা বলেন তিনি দৃঢ়, আত্মবিশ্বাসী।

এক বন্ধুর মাধ্যমে তাদের পরিচয় হয়। প্রথম সাখ্যাতের পর বেশ দ্রুত তাদের সম্পর্ক গভীর হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে তাদের প্রথম প্রকাশ্যে দেখা যায়-- তারা একে অপরের হাত ধরে হাটছেন। দু মাস পরেই তাদের মধ্যে বাগদান হয়।

লস অ্যাঞ্জেলেসে একটি ক্যাথলিক হাই স্কুল ইম্যাকুলেট হার্টেতিনি পড়াশুনা করেন। সেই স্কুলে তার এক শিক্ষয়িত্রী ক্রিস্টিন নুডসান, মার্কেল তার পেশায় যেভাবে অগ্রসর হয়েছেন তার উপর নজর রেখেছেন।

থিওলজি বিভাগের প্রধান ক্রিস্টিন নুডসান বললেন, “প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে মার্কেলের বাগদানের আগে, জাতিসংঘে তিনি যে ভাষণ দিয়েছেন আমি সেটা শিক্ষার্থীদের দেখাচ্ছিলাম। শুধু মাত্র সেই কারণে যে, এখান থেকে পাশ করে গেছে, আমাদের স্কুলের একটি ছাত্রী, তার পেশায় চমকার ভাবে অগ্রসর হয়েছে, সে খুবই সাফল্য অর্জন করেছে, কিন্তু তবুও তার মধ্যে সমাজের জন্য কিছু করার প্রয়োজনীয়তার বোধটা তার ছিল সব সময়।" তিনি বলেন মেগান মার্কেলের আত্মবিশ্বাসের কারণেই অন্যদের কাছ থেকে তাকে ভিন্ন মনে হয়েছে।

ক্রিস্টিন নুডসান বললেন, “কোন কিছুর ব্যাপারে অভিযোগ না করে মেগান বলতেন আমরা চিন্তা করি কী ভাবে তা পরিবর্তন করা যায়।"

মেগান মার্কেলের ওই সব বৈশিষ্টের জন্যই, ওই স্কুলের আরেকজন শিক্ষিকা মারিয়া পোলিয়া প্রিন্স হ্যারির কথা বললেন, "প্রথমেই আমি যে কথাটা ভেবেছি তা হচ্ছে প্রিন্স হ্যারি কি ভাগ্যবান। তিনি জানেনও না তিনি কত ভাগ্যবান।

মার্কেল, যিনি বেশ কয়েকটি টেলিভিশন শোতে অভিনয় করেছেন, তিনি প্রথম মঞ্চে আত্মপ্রকাশ করেছেন এই স্কুলেরই অডিটোরিয়ামে। সবাই তাকে মনে রাখেন এ ভাবে – যে মেয়েটি মঞ্চে উজ্জল হয়ে ছিল সে সব সময়ই অন্যকে সাহায্য করার জন্য সময় করে নিত।
মার্কেলের হাই স্কুলের শিক্ষয়ত্রী মারিয়া পোলিয়া, মার্কেল যে লাজুক ছিলেন তা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছেন। দরিদ্র পাড়ায় একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান -- সুপ কিচেনে স্বেচ্ছা সেবী হিসেবে কাজ করার জন্যমারিয়া পোলিয়া মেগেন মার্কেলকে উত্সাহ দিয়েছেন।
মারিয়া পোলিয়া বললেন,“গৃহহীনদের সঙ্গে মেগান যে ভাবে কাজ করেছে আমার কাছে তা স্মরনীয় হয়ে থাকবে। মেগান যে শুধু দরিদ্রদের খাবার পরিবেশন করতো তা নয়, ও তাদের কথা জানতে চাইত, তাদের নাম জানতো, তাদের কাহিনী জানতো।”

মেগান মার্কেল এক ছাত্রী থেকে টেলিভিশনের অভিনেত্রী হয়েছেন এবং হতে যাচ্ছেন প্রিন্সেস। তার এককালের স্কুল, IMMACULATE HEART, ১৯ মে তা উদযাপন করার পরিকল্পনা করেছে। আমেরিকার ক্যালিফর্নিয়া রাজ্যের সঙ্গে ব্রিটেনের সময়ের পার্থক্য ৯ ঘন্টার। সকলে অনুমান করছেন তা সত্বেও টেলিভিশনের পর্দায় রাজকীয় বিয়ে দেখার জন্য বিপুল সংখ্যক অতিথী সমবেত হবেন। তাদের মধ্যে থাকবেন মেগান মার্কেলের পুরাতন শিক্ষয়ত্রীরা, পুরনো ক্লাসমেটরা এবং তার অসংখ্য ফ্যান।

************************************************


ভারতে মেয়েদের চাকরীর ক্ষেত্রে সমতা আনার একটা প্রচেষ্টা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা সবে পাশ করে বেরোচ্ছেন তাদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা বিয়াল্লিশ শতাংশ, কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে পেশাজীবী হিসেবে যাদেরকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ করা হচ্ছে তাদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা মাত্র ২৪ শতাংশ। তাদের মধ্যে যারা সম্ভবত উর্ধতন ব্যবস্থাপনায় উত্তীর্ণ হতে পারবেন তাদের সংখ্যা হবে মাত্র ১৯ শতাংশ। আরেকটা উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে যে সংখ্যক মহিলা কর্মক্ষেত্র ত্যাগ করবেন তার হার পুরুষদের চাউতে বেশি। নতুন দিল্লী থেকে আমাদের সংবাদদাতা রিতুল জোশি জানিয়েছেন, পুরুষ প্রধান কর্মক্ষেত্রে কি ভাবে উন্নতি করা যায়, সে বিষয়ে বিশেষ ভাবে মেয়েদের জন্য নতুন দিল্লীতে একটি ব্যবস্থাপনার নতুন কোর্স চালু হয়েছে।

Indian women
Indian women

এই তরুনীরা শুধু ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষন নিচ্ছেন না। উর্ধতন পর্যায়ে ব্যবস্থাপক হতে হলে কিধরনের দক্ষতার প্রয়োজন তারা তাই শিখছেন। বর্তমানে উর্ধতন পর্যায়ে ব্যবস্থাপকদের মধ্যে পুরুষদের সংখ্যা অনেক অনেক বেশী।

নতুন দিল্লীর Vedica Scholars কার্যক্রম, মেয়েদের সেই প্রশিক্ষনই দিচ্ছে। ২০১৫ সালে এই কার্যক্রমটি চালু হয়। এর লক্ষ্য ছিল, মহিলা পেশাজীবীরা যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন এবং মহিলা পেশাজীবীদের যে সব প্রয়োজন রয়েছে তা মোকাবেলা করা।

VEDICA SCHOLARS PROGRAM FOR WOMEN এর প্রতিষ্ঠাতা ডিন, অনুরাধা দাস মাথুর বললেন, “নারীদের যে সব বৈশিষ্টকে সব সময়ই মনে করা হয় সেটা তাদের একটা শক্তি যেমন মানুষের প্রতি সহানুভূতি, লোকজনের সঙ্গে সহযোগিতা করা ---সেগুলোকে এখন সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আমাদের কার্যক্রমে বিভিন্ন মডিউল আছে যেগুলো মহিলাদের সাহায্য করবে নিজেদের শক্তি খুজে পেতে।.”

আহমেদাবাদে, INDIAN INSTITUTE OF MANAGEMENT এর পরিচালক এরল ডি সুজা বলেন, “দৈনন্দিন জীবনে মহিলাদের পুরুষদের সঙ্গে আলাপচারিতা হয়। তবে ক্লাসরুমে তারা সেটা থেকে বিচ্ছিন্ন। তাই তাদের ভাবতে হয় তাদের জীবনে এর কী অর্থ দাড়ায়। .”

১৮ মাসের এই কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা, মহিলাদের দৃষ্টিকোন থেকে ব্যবস্থাপনার মূল স্তম্ভগুলোর সঙ্গে পরিচিত হন। পাঠ্যক্রমের একটা বড় অংশ হচ্ছে কলা ও জেন্ডার স্টাডিস। লেখক ও VISTING FACULTY MEMBER উর্বসী বুটালিয়া বললেন,
“ এক নারী যখন কর্মক্ষেত্রে যোগ দেন তিনি তাঁর জীবনের সব অভিজ্ঞতা—তিনি কি কাজ করেছেন, তার জীবন যাত্রা , যে সহিংসতার তিনি সম্মুখীন হয়েছেন ইত্যাদি সবকিছুই তার সঙ্গে থেকে যায়। এই সব ইস্যুর যদি কোন সমাধান না হয় তাহলে তিনি যত ভালই উপার্জন করেন না কেন, কোন কিছুরই কোন অর্থ হয়না।.”

এক ছাত্রী সিমরানজিত কাউর বললেন, “আপনাকে এখানে সচেতন করে দেয় যে মহিলা হিসেবে আপনার পারিবারিক অভিজ্ঞতা কি ছিল। আপনি যখন কর্মক্ষেত্রে যাবেন তখন সেটা আপনার দায়িত্ব হয়ে দাড়ায় যে আপনি লোকজনকে বুঝিয়ে দেবেন আপনি কোন পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকেএসেছেন।”

আরেকজন ছাত্রী রোনিতা সাহাবললেন, “কলা বিভাগে পড়াশুনা করলে আপনার চিন্তা ধারার বিকাশ ঘটে। যা হয় তা হচ্ছে ব্যবসার দৃষ্টি কোন থেকে আপনি আর সমস্যাগুলো দেখেন না। সে কারণে আপনি কি ভাবে একটা সমস্যার সমাধান করবেন তা পাল্টে যায়।”

নিয়মিত internshipএর যে কার্যক্রম থাকে এখানে তারা অন্য ভাবে সেটা পরিচালনা করে। তাদের আছে“Shadow A CEO” কার্যক্রম। এর ফলে ছাত্রীরা এক মাসের জন্য এক মহিলা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান।যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগ এবং Fortune magazine যৌথ ভাবে একটি কার্যক্রম পরিচালনা করে -- Emerging Women Leader’s Program সেটি থেকেই তারা এই ধারণাটা নিয়েছে।

অনুরাধা দাস মাথুর বললেন, “আমি যখন এই কার্যক্রমে অংশ নেই, মহিলারা কি ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন, কোন জিনিষগুলো তাদের সাহায্য করবে, এবং কোন জিনিষগুলো আপনার জানা প্রয়োজন, সে সম্পর্কে আমার ধারণা পুরোপুরি পাল্টে যায়। ”
বিশ্ব ব্যাংকের একটি রিপোর্টে বলা হয়, নারী ব্যবসা উদ্যোক্তারা অন্য নারীদের জন্য আরও বেশি কাজের সুযোগ করে দেন। তাই এ ধরনের কোর্স বা কার্যক্রম, ভারতে আরও বেশি সংখ্যায় নারী ব্যবসা উদ্যোক্তা গড়ে তোলার জন্য একটা কার্যকর পদক্ষেপ।

XS
SM
MD
LG