অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

২০১৮ নারীদের জয় জয়কার


Year of women
Year of women

নারীকণ্ঠ

২০১৮ সালকে নারীদের বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। বছরটি ছিল যেন নারীদের পক্ষে। চারিদিকে নারীদের জয় জয়কার। নারীরা যেকোনো বিষয়ে জোরাল পদক্ষেপ নিলে তা কার্যকর সম্ভব তারই যেন প্রতিফলন ঘটে ২০১৮ তে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে ২০১৮ সালে লক্ষ্য করা যায় নারী জয় জয়কার। ট্রাম্প প্রশাসনের নানা সমালোচিত নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে প্রথমবারের মতো অংশ নিতে দেখা যায় বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা নারীদের। ভয়েস অফ আমেরিকার জেসুসেহমেহ অনির প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আজকের নারীকণ্ঠ।

এই জানুয়ারীতে ক্যাপিটল হিলে দেখা যাবে অনেক নতুন মুখ যার অধিকাংশ নারী। ১২৬ জন নারী এবার শপথ নেবেন।

নারী ভোটারের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে নারীদের এই বিপুল জয়ের কারণ বলে ধরা হচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসন যখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের হাল ধরেছেন তখন থেকে নারীদের বিরুদ্ধে নানা আপত্তিকর মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। মন্তব্য করেছেন পূর্বের প্রশাসনের অনেক নীতি সম্পর্কে। যার দরুন পথে বিক্ষোভে নামতে বাধ্য হন হাজার হাজার মানুষ। মধ্য মেয়াদী নির্বাচনে পরিবর্তনের জোরাল দাবী জানান এই বিক্ষোভকারীরা।

UVA এর বিশেষজ্ঞ Guian Mckee স্কাইপে সাক্ষাৎকারে বলছিলেন…

২০১৭সালের জানুয়ারীতে নারীদের মার্চে দেখা গিয়েছিলো একই ধরনের বিক্ষোভ। নারীদের সম্পর্কে প্রেসিডেন্টের বিরুপ মন্তব্য জাগিয়ে তোলে নারী সমাজকে। ক্ষুব্ধ করে গোটা জাতিকে। এবং এটি ট্রাম্পের সভাবসুলভ আচরণ।

নারীদের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুপ মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ করেই যোগ হয় যৌন হয়রানির বিষয়টি। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার অনেক নারী তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলতে শুরু করেন মি টু আন্দোলনের মাধ্যমে। মি টু আন্দোলনের আগে কোনও নারী সাহস সঞ্চার করতে পারেননি, জোর গলায় বলতে পারেননি তাদের প্রতি অবিচারের কথা। তবে এই আন্দোলন অনেক বিখ্যাত পুরুষদের জীবনে নিয়ে আসে অশনি সংকেত। তাদের মধ্যে আছেন টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব বিল কসবি যাকে একসময় বলা হত যুক্তরাষ্ট্রের পিতা।

বহু বছর আগে এক নারীকে যৌন হয়রানি এবং মাদকের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে সেই পিতা এখন রয়েছেন জেলে। কসবির অভিযোগকারী লিলি বারনারদ বলেন...

যৌন হউরানি থেকে বেঁচে যাওয়া সেইসব নারীদের জন্য এ এক বিশাল বিজয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জিমন্যাস্টিকস দলের ডাক্তার লারি নাসার অলিম্পিক পদকপ্রাপ্ত সহ ১০০ এর বেশী কিশোরীকে যৌন নির্যাতন করার দায়ে অভিযুক্ত হন এবং দণ্ডিত হন।

অলিম্পিক স্বর্ণপদক বিজয়ী জর্ডান ওইয়বার বলেন...

আমি নিজে ভুক্তভোগী হলেও, এই কষ্ট নিয়ে এভাবে বেঁচে থাকতে চাইনা।

সুপ্রিম কোর্টের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মনোনীত প্রার্থী বিচারপতি ব্রেট ক্যাভেনও বাদ পড়েননি যৌন কেলেংকারির তালিকা থেকে।

ক্যাভেনওর অভিযোগকারী ক্রিস্টিন ব্লাসি বলেন...

আমার মনে হচ্ছিল তিনি আমাকে ধর্ষণ করতে যাচ্ছেন, আমি তখন চিৎকার করতে থাকি সাহায্যের জন্য।

তবে ব্রেট ক্যাভেনও অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন...

আমি এই ধরনের হয়রানি কখনও কাউকে করিনি। আমি এই ধরনের মানুষ নই।

ক্যাভেনওকে বিচারবিভাগের সরবচ্চ পদে দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ নারী অধিকারের আন্দোলনকে আরও জোরদার করে।

মি টু আন্দোলনের নেত্রী রেবেকা ত্রাইস্তার বলেন...

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বৈষম্য লক্ষ্য করা যায় আর এই কারণেই নারীরা বাধ্য হয়েছেন বাড়ী থেকে বেরিয়ে এসে রাজনীতিতে যোগ দিতে।

নারী জাগরণের প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য মেয়াদী নির্বাচনে। বিশেশজ্ঞদের মতে যা প্রথমবারের মতো দেখা যায়।

এমেরিকান ইউনিভার্সিটির মলি ও ররক বলেন...

ভোটাররা একটা সুযোগ পেয়েছেন তাদেরকে নির্বাচিত করতে যারা যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিনিধিত্ব করবে। আরও অনেক বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রার্থী ছিলেন ঐ নির্বাচনে।

ভোটাররা নির্বাচিত করেছেন সেইসব ভিন্ন নারীদের যাদের ওপর আস্থা জন্মেছে। প্রার্থী ছিলেন ফিলিস্তিনি আমেরিকান বংশদ্ভুত, ছিলেন সোমালিয়া বংশদ্ভুত আমেরিকান প্রার্থী। উভয় নারী কিন্তু কংগ্রেসে প্রথম মুসলিম নারী।

মলি বলেন...

ভোটাররা বিরক্ত, বীতশ্রদ্ধ, উত্ক্ত যেভাবে বছরের পর বছর ওয়াশিংটন পরিচালিত হয়ে আসছে। এবং একই ধরনের মানুষ একই ধ্যান ধারণা নিয়ে পরিচালনা করছেন।নারীরা বিপুল অঙ্কে, সংখ্যায় জয়লাভ করলেও ওয়াশিংটন কিন্তু এখনও পুরুষদের অধীনে। কংগ্রেসে নারীদের আসন এক চতুর্থাংশের কম। তবে জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ।

নির্বাচিত নারীরা, ভোটাররা, বিশেষজ্ঞরা, যারা পরিবর্তনে বিশ্বাস করেন, সবাই জানেন, বোঝেন...এই পথ সুদীর্ঘ, দুর্গম ও হতে পারে, তবে তাই বলে হাল ছেড়ে দেবেন না কেউই।লড়ে যাবেন অধিকারের লড়াই, পরিবর্তনের লড়াই।

ওদিকে বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৬৮ জন নারী প্রার্থী; এই সংখ্যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি হলেও আনুপাতিক হারে তা খুবই কম।

please wait
Embed

No media source currently available

0:00 0:08:08 0:00

XS
SM
MD
LG