আজ নারীকণ্ঠে যে বিষয়ে কথা বলব তা নিয়ে বলতে অত্যন্ত কষ্ট হচ্ছে খারাপ লাগছে কিন্তু পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে গেছে যে আমি আপনি আমাদের সমাজ আমরা সবাই মিলে যদি এই বিষয়ে কথা না বলি, তাহলে এই ঘৃণ্য অপরাধগুলো হতেই থাকবে। অপরাধীরা পার পেতেই থাকবে। সুস্থ সুন্দর সমাজ গড়ার প্রত্যয় থেকে অনেক দূরে সরে যাবে মানুষ।
বলছি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণের যেই ঘটনাগুলো ঘটছে তার কথা। শুধু বাংলাদেশে এই ঘটনা ঘটছে তা নয়,পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও একই হারে ঘটছে এই শিশু ধর্ষণের ঘটনা। কেন ঘটছে, কোথায় আমরা পিছিয়ে পড়ছি, আমরা নিজেদের উন্নতির দিকে লক্ষ্য রাখতে যেয়ে সমাজের দিকে লক্ষ্য রাখতে ভুলে যাচ্ছি কি?
কথা বলেছি বাংলাদেশের ডিবিসি চ্যানেলের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ইশরাত জাহানের সঙ্গে। জানতে চেয়েছি তাঁর দৃষ্টিকোণ থেকে কেন এমন হচ্ছে
গতকাল গিয়েছিলাম একটি সেমিনারে যেখানে অতিথি বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জর্জটাউন ইন্সিটিউট ফর ওইয়মেন পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির নির্বাহী পরিচালক মেলেইন ভ্যারভিয়েরা।তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে নারী,শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। বলছিলেন খুব কাছে থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করেছেন। সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হবার পর তিনি বলেন এটিই খুবই মর্মান্তিক।
আমি অনেকবার বাংলাদেশে গিয়ে নিজে দেখেছি নারীরা পুরুষদের সঙ্গে টাল মিলিয়ে বিভিন্ন কাজে সাফল্য অর্জন করছে। বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি করেছে এবং নারীদের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কিন্তু যে দেশ নারীদের ক্ষমতায়নে বড় ভূমিকা পালন করেছে সে দেশে নারীদের ওপর বিশেষ করে শিশুদের ওপর এমন অত্যাচার একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। ধর্ষণের এই ঘটনার কথাগুলো শুনে আমি অত্যন্ত দুঃখিত। এই ধরনের জঘন্য কার্যকলাপে যারা লিপ্ত, তাদের সমাজে কোন জায়গা থাকতে পারেনা। তাদের অতি সত্তর আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এবং তা কার্যকর করা প্রয়োজন।
ছোট ছোট নিস্পাপ শিশু যারা জীবনকে বুঝতে শুরু করার আগেই কিছু বিকৃত মানুষের ছোবলের শিকার হচ্ছে। এই পৃথিবীর নিষ্ঠুরতা ঐ কচি শরীরগুলোকে ছিন্ন ভিন্ন করছে। মানবাধিকার আইনজীবী সালমা আলির কাছে জানতে চেয়েছি এই ধরনের জঘন্যতম কাজের জন্য কি ধরনের শাস্তি হওয়া উচিৎ।তিনি বলেন মৃত্যুদণ্ড একটিমাত্র শাস্তি যা প্রযোজ্য এমন বিকৃত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য।
গতকাল সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একজনের স্ট্যাটাস পড়ে আমি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। ঐ ব্যক্তি তার স্ট্যাটাসে কি লিখেছেন তা আপনারা আমাদের স্ক্রিনে দেখেতে পাচ্ছেন নিশ্চই। সালমা আলির কাছে জানতে চাইলাম কিভাবে এমন বিকৃত পরিস্থিতির উদ্ভব হল। কি করা প্রয়োজন। তিনি বলেন এমন অসুস্থ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রয়োজন পরিবার এবং সমাজের একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
এলসা মারি ডী সিল্ভা একজন ভারতীয় নারী। নিজের একটি অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতার পর তিনি ইন্টারনেটে একটি অ্যাপ তৈরি করেছেন যার মাধ্যমে নারীরা ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের এমন অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতার কথা অন্যান্যদের সঙ্গে শেয়ার করেন এবং তাদের সতর্ক করে দেন। দোষী ব্যক্তিদের আটক বা নির্দিষ্ট ঐ জায়গাতে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে এই অ্যাপ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সাহায্য করেছে। তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম আগে এই ধরনের ঘটনাগুলো তেমন শোনা যেতনা। কিন্তু ইদানীং নারীরা সাহস পাচ্ছেন, তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন। এলসা বলেন,
বিশ্বের এই প্রান্তের দেশগুলোতে নারীরা যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের কথা জানাতে চায়না।এর কারণ লজ্জা।একজন অবিবাহিত নারী কখনোই এ ধরনের অভিযোগ থানায় যেয়ে করবেন না কারণ তাতে তিনি নিজে এবং তাঁর পরিবার সমাজের কাছে ছোট হয়ে যাবে। তাঁর হয়তো ার কখনো বিয়ে হবেনা। তারা সামাজিক কলঙ্কের কথা চিন্তা করে নিজেকে একটি কক্ষে আবদ্ধ করে ফেলেন। এরপর শুরু হয় মানসিক পিড়া। তার ওপর নারীদের সব সময় ধারণা দেয়া হয়, দোষ তাঁর।
আসলেই কি শুধু নারীর দোষ? খোলামেলা কাপড় পরা বা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চলা ফেরা করলে নারীর দোষ? মনরোগ বিশেষজ্ঞ কলকাতার ডাঃ সুব্রত বিশ্বাসের কাছে জানতে চেয়েছি একজন ধর্ষক কেন বা কখন ধর্ষক হয়ে ওঠেন।
একজন গৃহিণী, একজন মায়ের কাছে জানতে চেয়েছি এমন পরিস্থিতিতে তিনি তাঁর সন্তানকে কিভাবে নিরাপত্তা দিচ্ছেন।
তাহানিয়া নাসরিন বলেন, আমাদের বড় করেছে আমাদের বাবা-মা তাই আমাদেরও উচিৎ নিজেদের সন্তানকে সময় দেয়া তাঁর দেখভাল করা।
পুরো বিশ্বজুড়ে নারীদের মর্যাদা বাড়ুক। নিরাপদে থাকুক আমাদের সন্তানেরা। শুভেচ্ছা সবাইকে।