অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে শহরের দরিদ্রদের অনেকে বঞ্চিত: বিশ্বব্যাংক 


বিশ্ব ব্যাংকের বার্ষিক বৈঠকের প্রস্তুতি। ফাইল ফটো- এএফপি
বিশ্ব ব্যাংকের বার্ষিক বৈঠকের প্রস্তুতি। ফাইল ফটো- এএফপি

বিশ্ব ব্যাংক বলেছে বাংলাদেশ সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে যে পরিমাণ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সে তুলনায় শহরাঞ্চলের দরিদ্রদের মধ্যে এর সুবিধা ভোগীদের সংখ্যা অনেকটাই কম।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় পরিচালিত 'বাংলাদেশ সোশ্যাল প্রোটেকশন পাবলিক এক্সপেনডিচার রিভিউ’ শীর্ষক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে বাংলাদেশের গ্রামীণ দারিদ্র্যের হার ২৬ শতাংশের কিছু ওপরে হলেও তাঁদের ৩৬ শতাংশের বেশি মানুষ সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আছেন। অন্যদিকে শহরাঞ্চলের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন বলে গবেষণায় উল্লেখ করে বলা হয়েছে শহরে দারিদ্রের হার প্রায় ১৯ শতাংশ কিন্তু তাঁদের মধ্যে সামাজিক সুরক্ষার সুবিধা পেয়ে থাকেন মাত্র ১১ শতাংশ মানুষ।

এতে বলা হয় শহর এলাকায় প্রতি ৫ জনে একজন দরিদ্র এবং শহরবাসীদের প্রায় অর্ধেক দরিদ্র হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ ও শহর এলাকার মধ্যে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ভারসাম্য রাখা প্রয়োজন বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে । এতে বলা হয় বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বেড়েছে যার ফলে দেশের ১০টি পরিবারের মধ্যে ৩ টি পরিবার এখন এই কর্মসূচির আওতায় আছে। কিন্তু এর কার্যকারিতা এখনো আশানুরূপ নয় বলে উল্লেখ করে বিশ্ব ব্যাংক বলেছে অন্তর্ভুক্তির সংখ্যা বাড়লেও দারিদ্র্যের হার আনুপাতিক হারে কমে নাই।

সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাংলাদেশের উন্নয়ন নীতির একটি বড় হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়ে থকে। এ প্রেক্ষাপটে বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণায় বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে এ সকল কর্মসূচি সঠিকভাবে কাজ করছে কি না, প্রকৃত মানুষের কাছে সুফল পৌঁছাচ্ছে কি না, কর্মসূচির বিন্যাস ও অর্থায়ন ঠিক আছে কি না এবং স্থানীয় পর্যায়ে এসব সুবিধা যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে কি না।

কর্মসূচির নানা প্রক্রিয়াগত জটিলতা দুর্বলতা ও দীর্ঘসূত্রিতার উল্লেখ করে গবেষণায় বলা হয় এর ফলে এর কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে যারা দরিদ্র নন তাঁদের অনেকে এই কর্মসূচির সুফল ভোগ করছেন যে কারণে অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত দরিদ্ররা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে বলা হয় দেশে ছোট বড় মিলিয়ে মোট ১৩০টি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। এই কর্মসূচির কর্মীদের দক্ষতার সমস্যা প্রকট বলে উল্লেখ করে বিশ্ব ব্যাংক বলেছে কয়েক ধাপ পেরিয়ে কর্মসূচির অর্থ ছাড় হয়ে তা মানুষের হাতে পৌঁছাতে অন্তত দুই মাস সময় চলে যায়। এছাড়া, যে সব মন্ত্রণালয় এ সকল কর্মসূচী পরিচালনা করেছে তাদেরকে এগুলোর ব্যবস্থাপনার ব্যয় বহনের জন্য খুবই কম বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকে।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের অপারেশনস ম্যানেজার দানদন চেন বলেন গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পরিধি অনেক বাড়িয়েছে। চলমান বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে আরও জোরালো কর্মসূচির প্রয়োজন দেখা দিয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি একটি সুসমন্বিত কর্মসূচির ওপর জোর দেন।

বাংলাদেশের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সম্পর্কে বিশ্ব ব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত গবেষণার বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডি'র সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে ভয়েস আমেরিকার এই প্রতিনিধি তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন গ্রামে কর্মসংস্থানের অভাবে গত কয়েক বছর যাবত গ্রামীণ দরিদ্রদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ কাজের সন্ধানে শহর ও উপ-শহরগুলোতে চলে আসছেন। তিনি বলেন এদের অনেকের শহরে কাজ করার দক্ষতা না থাকায় তাঁরা কর্মহীন অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

এ পর্যন্ত গ্রামকেই দেশের দারিদ্র্য প্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হত বলে উল্লেখ করে মোস্তাফিজুর রহমানের বলেন এখনকার পরিবর্তিত পরিস্থিতি শহরাঞ্চলের দরিদ্রদের দিকে নজর দিতে হবে এবং সে কারণে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পুনর্বিন্যাস করতে হবে। শহরাঞ্চলের দরিদ্রদের অন্তত সাময়িক ভাবে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন দেশ থেকে দারিদ্রকে বিদায় করতে হলে কর্মক্ষম মানুষের জন্য টেকসই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু মাত্র সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে দেশকে দারিদ্র মুক্তকরা সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করে সিপিডি'র এই অর্থনীতিবিদ বলেন এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সকলের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নাই।

XS
SM
MD
LG