শাগুফতা নাসরিন কুইন
আজ নারী কন্ঠে ওয়াশিংটন এলাকার অত্যন্ত সুপরিচিত একটি সমাজ সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান আশা ফর উইমেন এর কথা আপনাদের শোনাব।
আশা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৯ সালে। দক্ষিণ এশিয় বংশোদ্ভূত মহিলাদের প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনের লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ এশিয় নারী যারা বাড়িতে স্বামীর হাতে নির্যাতিত তাদের সমর্থন দেওয়া। বহু দক্ষিণ এশিয় নারী যারা ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক কারণে সাহায্য চাইতে ইতস্তত করেন বা সাহায্য চান না, আশার স্বেচ্ছোসেবীরা তাদেরই সাহায্য করেন। গত ৩০ বছরে আশা শত শত মহিলা ও শিশুকে সাহায্য করেছে যাতে তারা এগিয়ে যেতে পারে এবং নিরাপদ সুখী জীবন যাপন করতে পারে।
আশার প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন প্রিয়া কুলকার্নি। আশার লক্ষ্য এবং তারা কি অর্জন করতে চান সে সম্পর্কে প্রিয়া কুলকার্নি বলেন, “৩০ বছর আগে আশা ফর উইমেন প্রতিষ্ঠিত হয় ওয়াশিংটন ডিসি মেট্রোপলিটন এলাকায়। প্রধান লক্ষ্যই ছিল ওয়াশিংটন এলাকায় বসবাসরত দক্ষিণ এশিয় বংশোদ্ভূত মহিলাদের সাহায্য করা, যাতে তারা অনুভব করতে পারেন তাদের ক্ষমতা আছে এবং গৃহে নির্যাতিত হওয়া থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। আমাদের মিশন হচ্ছে নারীর ক্ষমাতায়ন করা যাতে তারা স্বনির্ভর হয় এবং নিপীড়ন মুক্ত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারেন। আমরা প্রধানত বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রী লঙ্কার মহিলাদের সাহায্য করে থাকি।”
আশা ফর উইমেন একটি মুনাফাবিহীন প্রতিষ্ঠান এবং তারা ডিস্ট্রিক্ট অফ কলাম্বিয়া, মেরিল্যান্ড, এবং ভার্জিনিয়ায় বসবাসরত দক্ষিণ এশিয় বংশোদ্ভূত মহিলা ও শিশুদের সাহায্য করে।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রী লঙ্কার থেকে আগত বিভিন্ন ধর্মের নারীও শিশুদের তারা সাহায্য করে।
দক্ষিণ এশিয়া থেকে আগত মহিলারা প্রধানত কী ধরনের সমস্যার সম্মুখিন হন? সেই প্রশ্নের জবাবে আশা ফর উইমেন এর প্রেসিডেন্ট প্রিয়া কুলকার্নি বলেন পারিবারিক সহিংসতাটাই প্রধান। তবে সে ক্ষেত্রে আনুষঙ্গিক অনেক কিছু মোকাবেলা করতে হয়।
প্রিয়া কুলকার্নি বলেন, “প্রধান সমস্যাগুলো হচ্ছে আইনগত ঝঞ্ঝাট। মহিলাদের বুঝতে হবে যে সাহায্যের মাধ্যমে তাদের বেরিয়ে আসার একটা পথ আছে। এক এক ক্লাইন্টের ভিন্ন ইস্যু -- ভিন্ন সমস্যা। যেমন একজনের হয়ত বিবাহবিচ্ছেদের প্রয়োজন। আরেকজনের দরকার স্থিতিশীলতা, আরেকজনের প্রয়োজন আবাস, বাড়ি ভাড়া, বাচ্চাদের জন্য ডে কেয়ারের ব্যবস্থা, কিংবা তার স্কুলে আবার ভর্তি হতে হবে, গাড়ি চালানো শিখতে হবে, তাদের হয়ত প্রয়োজন চাকরি পাওয়ার জন্য কিভাবে ইন্টারভিউ দিতে হয়, নতুন চাকরি দরকার, নতুন করে প্রশিক্ষণ নেওয়া – এ সবই নির্ভর করছে পরিস্থিতির উপর। মহিলারা সাধারণত এধরনের সমস্যারই সম্মুখিন হয়।
আশার স্বেচ্ছাসেবীরা কিভাবে মহিলাদের সাহায্য করেন সে সম্পর্কে প্রিয়া কুলকার্নি বলেন, “আমরা যখন আমাদের টোল ফ্রি নম্বরে একটা ফোন পাই, তখন ক্লাইন্ট সার্ভিসেস এর সমন্বয়কারী ক্লাইন্টের কাছ থেকে প্রায় ৩/৪ পাতার সব তথ্য সংগ্রহ করেন এবং তা সম্পূর্ণ হলে তিনি ক্লাইয়েন্টকে আশার একজন প্রশিক্ষণ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবীর সঙ্গে সংযোগ করিয়ে দেন। এবং সেই স্বেচ্ছাসেবী, ক্লাইয়েন্টের কী কী প্রয়োজন তা মূল্যায়ন করেন এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা পাওয়ার জন্য ক্লাইয়েন্টকে সাহায্য করেন।
আশা সম্প্রতি আরেকটি নতুন কার্যক্রম শুরু করেছে এবং সেটি হচ্ছে -- দক্ষিণ এশিয় বংশোদ্ভূত বর্ষিয়ান এবং তাদের যারা সেবা করছেন তাদের সাহায্য করার কার্যক্রম।
লাক্সমি আয়াপ্পা হচ্ছেন আশা ফর উইমেনের নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে বর্ষিয়ানদের জন্য অনেক ভাল ভাল কার্যক্রম আছে। কিন্তু অনেক সময় তা খুঁজে পাওয়া এবং সাহায্য নেওয়াটা কঠিন। সেখানেই আমরা সাহায্য করি। কী ধরনের সহায়তা পাওয়া যায় তা নির্ণয় করা এবং সামাজিক দিক থেকে গ্রহণযোগ্য তা বেছে নেওয়ায় আমরা সাহায্য করি।”
আশা ফর উইমেন তাদের ৩০ বছরপূর্তী উপলক্ষে, এ মাসের শেষে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
আসন্ন এই অনুষ্ঠান সম্পর্কে আশা ফর উইমেন এর নির্বাহী পরিচালক লাক্সমি আয়াপ্পা বললেন যে তারা একটা গেলা বা আনন্দ মুখর উৎসবের আয়োজন করেছেন।
লাক্সমি আয়াপ্পা বলেন, “আমরা একটি গেলার আয়োজন করেছি। এ বছর এর থিম হচ্ছে শিল্পকলা এবং শিল্পকলা কিভাবে নারীদের ক্ষমতায়নে সাহায্য করে। অনুষ্ঠানে শিল্পকলা সংশ্লিষ্ট সব কিছু থাকবে। মূল ভাষণ দেবেন একজন শিল্পী। স্থানীয় ও উঠতি অনেক শিল্পী আমাদের শিল্পকর্ম দান করেছে। আমরা আশা করছি কমিউনিটি সংশ্লিষ্ট হবে। সংশ্লিষ্ট হবে ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা যোগ দেবেন। এ ছাড়াও আমরা আমাদের এক ক্লাইয়েন্টের বিষয়ে একটা ছোট প্রামাণ্য চিত্র দেখাব এবং তাতে থাকবে আশার সাহায্যে তিনি কিভাবে কঠিন সময়টি কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন।”
গত ৩০ বছর ধরে আশা ফর উইমেন, দক্ষিণ এশিয় বংশোদ্ভূত মহিলাদের সাহায্য করে যাচ্ছে। শুধু ২০১৮ সালেই আশা তাদের টোল ফ্রি নম্বরে ৪০৫টি কল পেয়েছে। সে বছর তারা সক্রিয় ভাবে ৯০জন মহিলা ও ৯১জন শিশুকে সাহায্য করেছে।
স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে গঠিত এই সংগঠন তাদের কাজের জন্য স্বীকৃতিও পেয়েছে। Catalogue for Philanthropy প্রায় ২০০ সংগঠনের মধ্যে থেকে আশা ফর উইমেন কে “ one of the best small charities in the Washington DC region” বলে আখ্যায়িত করেছে।
আশা ফর উইমেনের অফুরন্ত সাফল্য কামনা করছি।